অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমানকে হেনস্তা করলেন হাই কমিশনের সাবেক কর্মচারি ইউসুফ হারুন। জাফর আহমেদের ইমেইল থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো সংবাদে তিনি লিখেছেন, ‘গত ১৭ই জুলাই রবিবার কানাডার অটোয়ার একটি লাক ফিলিপ পার্কে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব অটোয়া ভ্যালী (বাকাওভ) ১৭ই জুলাই এক পিকনিকের আয়োজন করে। ওই পিকনিকে অতিথি হয়ে যান কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার খলিলুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি র্যাফেল ড্রর পুরষ্কারসহ নানা আয়োজনে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক বাহাউদ্দীন শিশিরের আমন্ত্রণে তিনি ওই অনুষ্ঠানে যান। অনুষ্ঠান শুরুর এক ঘন্টা পর বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক কর্মচারি ইউসুফ হারুন চেচিয়ে উঠে বলেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। আমার অধিকার পাসপোর্ট দিচ্ছেন না হাইকমিশনার খলিল। এ সময় বাকাওভ এর কর্মকর্তারা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কোন বাধা না মেনেই হাইকমিশনারের ওপর আক্রমনের চেষ্টা করেন। পরে বাক্ওাভ এর কর্মকর্তারা পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অটোয়ার পুলিশ জানায়, একটি নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। (তথ্য সূত্র: সিবিএনএ ২৪ ডটকম)
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব অটোয়া ভ্যালী (বাকাওভ)এর সভাপতির সাথে যোগাযোগ হলে শাহ বাহাউদ্দীন শিশির সিবিএনএ২৪ডটকমকে বলেন, ঘটনাটি ছিলো অপ্রত্যাশিত।
সারাদিনব্যাপী বনভোজনটি ছিলো আনন্দময়। মান্যবর হাইকমিশনার সাহেব আমাদের অনুরোধে প্রধান অতিথি হয়ে পিকনিকে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং পুরস্কার বিতরণের পর পরই একজন অতর্কিত এসে মান্যবর হাই কমিশনার সাহেবকে ধাক্কা দিয়ে বলে ‘তুই আমার পাসপোর্ট আটকিয়ে রাখছিস ক্যান?’ কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই এমন ঘটনা উপস্থিত সবাইকে বিচলিত করে তুলে। বাকাওভ সভাপতি শাহ বাহাউদ্দীন শিশির বলেন এরপূর্বে এই লোককে কখনও দেখিনি, পরে জানতে পারি তিনি নাকি একসময় বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করতেন। তিনি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই জঘন্য কাজটি করেছেন। সভ্য দেশে থেকে জনসম্মুখে এমন কর্মকান্ড কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কর্মকান্ড শুধু নিন্দনীয়ই নয় একটি অপরাধযোগ্য।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিলো কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমানের কাছে। রাস্ট্রদূত ড. খলিলুর রহমান এবং সদ্য নিযুক্ত উপ রাস্ট্রদূত হারুন আল রশীদ বলেন দাপ্তরিক তথ্য অনুয়ায়ী জেনেছেন ইউসুফ হারুন নামের ব্যক্তি ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দূতাবাসে কাজ করতেন এবং বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় অটোয়া থেকে ঢাকায় বদলি করে দেওয়া হয় এবং দূতাবাস থেকে তার চাকুরির মেয়াদকালীন বিভিন্ন ভাতা, এয়ার টিকেটসহ ৩২ হাজার চারশত দশ ডলার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের নিয়মানুসারে ইউসূফ হারুন বাংলাদেশে গিয়ে রিপোর্ট করার কথা থাকলেও তিনি দেশে ফিরে যাননি। ২০১৯ এ তৎকালীন হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের আমলে পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য আবেদন করলে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুসারে দূতাবাস থেকে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চাওয়া হয়। (যেহেতু তিনি বাংলাদেশ সরকারের কুটনৈতিক বিধি ভেঙ্গে দেশে গিয়ে রিপোর্ট না করে কানাডায় থেকে গেছেন ফলে তাকে সরকারী চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়)। দূতাবাস থেকে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লেখা হলেও সেখান থেকে কোনও অনুমতি না পাওয়াতে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এব্যাপারে দূতবাসের কোনকিছু করার নেই। ইতোপূর্বে পাসপোর্টের ব্যাপার নিয়ে তিনি দূতাবাসে অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন এমনকি প্রকাশ্য রাস্তায়ও আক্রমন করার চেষ্টা করেছেন। সভ্যদেশে এমন আচরণ কখনই গ্রহণযোগ নয়। হাই কমিশনরের ওপর আক্রমনের চেষ্টায় মামলা করা হয়েছে বলে উপ রাস্ট্রদূত জানিয়েছেন।
কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাস্ট্রদূতের ওপর প্রকাশ্যে এমন আক্রমন কিংবা হেনস্তা করা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসীরা ভালো চোখে দেখছেন না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।