Home আইটি বিশ্ব গবেষণায় জানা গেল এআইয়ের ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কে যেভাবে প্রভাব ফেলে

গবেষণায় জানা গেল এআইয়ের ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কে যেভাবে প্রভাব ফেলে

অনলাইন ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর নতুন প্রযুক্তি নয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকে এটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে। তথ্য অনুসন্ধান, লেখালেখি, কাজের গতি বাড়ানো এবং সমস্যা সমাধানে অনেকেই এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। তবে এআই-এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে এখন গবেষকেরা নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও গভীর চিন্তাশক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে।

এমআইটির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি খসড়া গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যেখানে ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৫৪ জন মার্কিন নাগরিককে চারটি আলাদা প্রবন্ধ লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। যার একটিতে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করা হয়, আরেকটি দলকে কেবল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে, এবং তৃতীয় গ্রুপ সম্পূর্ণভাবে নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করে। প্রথম তিনটি প্রবন্ধে দেখা যায়, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাত্রা ছিল সবচেয়ে কম। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও সংযোগ কম ছিল, তবে তা চ্যাটজিপিটি গ্রুপের তুলনায় কিছুটা বেশি।

এই গবেষণার এক পর্যায়ে গ্রুপ বদলানো হলে দেখা যায় যারা আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন এবং হঠাৎ নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হলেন, তাদের মস্তিষ্কের সংযোগ আগের তুলনায় আরও কমে যায়। পাশাপাশি তারা লেখার মালিকানা কম অনুভব করেন এবং নিজেদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি বা তথ্য মনে রাখতে সমস্যা হয়। তবে গবেষণাটি ছোট পরিসরের, মাত্র ১৮ জন চতুর্থ কাজটি সম্পন্ন করেছেন এবং গবেষণাটি এখনো পিয়ার রিভিউ হয়নি ফলে ফলাফল এখনো নিশ্চিত নয়।

এমআইটির এই গবেষণার বাইরেও বিভিন্ন গবেষণায় একই রকম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে করা এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশেষ করে ১৭ থেকে ২৫ বছরের ব্যবহারকারীরা যারা অধিক এআই নির্ভর, তাদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বা ক্রিটিক্যাল থিংকিং কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষকেরা এটিকে বলছেন “কগনিটিভ অফলোডিং” অর্থাৎ বিশ্লেষণ বা সমস্যার সমাধান করার মতো মানসিক কাজ এআই-এর কাছে ছেড়ে দেয়া, যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

২০২৫ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, এআই ব্যবহার মানুষের সক্রিয় চিন্তার ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে তিনটি প্রধান কারণে তথ্য সংগ্রহের বদলে তথ্য যাচাইয়ে সীমাবদ্ধতা, সমস্যা সমাধানের বদলে এআইয়ের সমাধানে নির্ভরতা এবং নিজের বিশ্লেষণের বদলে এআই-এর বিচার বা ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করা। এসব পরিবর্তন ধীরে ধীরে মানুষের স্মৃতি, মনোযোগ, তথ্য প্রয়োগের ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ২০২৪ সালের একটি রিভিউতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত এআই ব্যবহারে মানসিক সম্পৃক্ততা কমে যাওয়া, মানবিক যোগাযোগের অভাব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তবে এআইকে পুরোপুরি বাদ দেয়া বাস্তবসম্মত নয়, কারণ বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর কর্মপরিবেশে এটি বহুক্ষেত্রে ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হয়ে উঠছে। তাই গবেষকেরা বলছেন, সমাধান হলো এআই কম ব্যবহার নয়, বরং সঠিকভাবে ব্যবহার শেখা। অনেক ক্ষেত্রে এআই সৃজনশীলতা বাড়াতে, নতুন ধারণা তৈরি করতে এবং শেখার গতি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ব্যবহারকারীকে সচেতন হতে হবে এআই কি শুধু তথ্য যাচাই করছে, নাকি সমস্ত চিন্তার দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে? সমস্যা সমাধানে এআই কি সহকারী হিসেবে কাজ করছে, নাকি মানুষের বদলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? এসব প্রশ্নের মাধ্যমে ব্যবহারকারী বুঝতে পারবেন তারা সক্রিয় চিন্তা করছেন, নাকি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন।

যদিও গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে এবং এআই ব্যবহারের সঙ্গে মস্তিষ্কের পরিবর্তনের সম্পর্ক এখনো সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়। তবে অতিরিক্ত এআই-নির্ভরতার কারণে গভীর চিন্তা, স্মৃতি এবং মনোযোগ কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে এমন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তাই কোনও কাজের গতি বাড়াতে এআইয়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করাই ভালো।

সূত্র: হেলথলাইন

Exit mobile version