Home কানাডা খবর কানাডায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জের মুখে অভিবাসীরা

কানাডায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জের মুখে অভিবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক : কানাডার ফেডারেল বাজেট ২০২৫ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বাজেটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, ওয়ার্কার পারমিট, পার্মানেন্ট ও নতুন আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সামনের দিনগুলো দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে।

দেশটির ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক স্টাডি পারমিটের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৯ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ১,৫৫,০০০ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসন সংকট ও নাগরিক পরিষেবার ওপর চাপ কমাতেই সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপ।

ফলে কানাডার উচ্চশিক্ষা খাত, যা এতদিন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-র ওপর নির্ভর করত, সেখানে বড় ধরনের আর্থিক ধাক্কা লাগার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৪,৩৭,০০০ থেকে কমে ২০২৬ সালে ১,৫৫,০০০, ২০২৭ সালে ১,৫০,০০০ এবং ২০২৮ সালে ১,৫০,০০০ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে শিক্ষাখাতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতির ঝুঁকি রয়েছে।

কানাডার ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এ স্থায়ী অভিবাসনের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স – পিআর) লক্ষ্যমাত্রা স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, দেশের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের কৌশলগত পরিবর্তন এসেছে। সরকার এখন থেকে পরিমাণ নয়, দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে।

অন্যদিকে স্থায়ী অভিবাসী সংখ্যা স্থিতিশীল, কিন্তু নিম্নগামী। দেশটির সরকার ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৩,৯৫,০০০ থেকে কমিয়ে ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বছরে ৩,৮০,০০০ স্থায়ী অভিবাসী আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসংখ্যা ও আবাসন সংকটের ওপর চাপ কমাতে অভিবাসীর সংখ্যা স্থিতিশীল করে একটি সংযত হার বজায় রাখা হচ্ছে। মোট সংখ্যার মধ্যে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশটির শ্রমবাজারে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রযুক্তির মতো ঘাটতি থাকা খাতগুলোতে যাদের দক্ষতা আছে, তাদেরই এখন স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

কানাডার ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এর সবচেয়ে ইতিবাচক দিকগুলির মধ্যে একটি হলো, যেসব অস্থায়ী কর্মী বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন, তাদের জন্য স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স – পিআর) হওয়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার বিশেষ উদ্যোগ। ২০২৬ সালে প্রায় ৩৩,০০০ ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডারকে দ্রুত স্থায়ী বাসিন্দা স্ট্যাটাসে উন্নীত করার জন্য একটি ‘লক্ষ্যযুক্ত, এককালীন উদ্যোগ’ নেওয়া হয়েছে। এটি অভিবাসন লক্ষ্যমাত্রার নিয়মিত কোটার অতিরিক্ত। সরকার স্বীকার করছে যে অস্থায়ী কর্মীরা, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য শ্রম ঘাটতি থাকা খাতগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, তারা কানাডার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। আবাসন সংকটের কারণে যদিও নতুন অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা কমানো হচ্ছে, কিন্তু যারা ইতোমধ্যে কানাডায় আছেন এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের ধরে রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরিতে মাস্টার্সে অধ্যয়ন শেষ করে বর্তমানে চাকরিরত বাংলাদেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট নাঈম উল হাসান এ সম্পর্কে মিডিয়া’ কে বলেন, সম্প্রতি আবাসন সংকট ও জীবনযাত্রার মান ও টিউশন ফি বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে কানাডিয়ান সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে কানাডাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী নতুন শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে।

কানাডার রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন কিন্তু ভেঙে পড়েনি, সরকার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা বন্ধও করেনি কিন্তু তারা যেটি করেছে সেটি হচ্ছে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা কে বিগত দিনগুলোর চেয়ে আরো বেশি শক্ত ও মজবুত করেছে। যারা কানাডায় আসতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের তথ্য আগে সঠিকভাবে জেনে তারপর আপনার সিদ্ধান্ত বা যাত্রা শুরু করবেন। তাহলেই কেবল আশা করা যায় কানাডা অভিমুখী এই যাত্রায় আপনি সফল হতেও পারেন আর না হলেও অন্তত বিপদগ্রস্ত হবেন না।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, কানাডা এখন ‘গুণমানের দিকে ঝুঁকছে, ভিড় কমাচ্ছে’—শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটি আর আগের মতো সহজে সবার জন্য প্রবেশযোগ্য গন্তব্য থাকবে না, এখন শুধু প্রকৃত যোগ্যরাই কানাডা আসতে পারবে বলে মনে করেন তারা।

Exit mobile version