শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : তিনি আবার বললেন, “আগের সম্রাটের জীবদ্দশায় আমি কখনওই তাঁর বদন মন্ডল তীব্র দুঃখে ভারাক্রান্ত দেখি নাই, আরও দেখি নাই তাঁকে এক ফোঁটাও চোখের পানি বিসর্জন দিতে!”

“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, আমার ব্যক্তিত্ব একটা দেশের সম্রাট হওয়ার উপযুক্ত নয়?”, আমি ভয়ঙ্কর রকম উত্তেজিত হয়ে উঠলাম! এক লাথিতে উড়িয়ে দিলাম প্রাসাদ দাসীর হাতে থাকা কাঁসার দর্পনটা! আমি বললাম, “আমাকে কাঁদতে দিবেন না? তার মানে আমাকে সব সময় হাসতে হবে? ঠিক আছে, আমার যেহেতু কান্না বারণ, তাই আমি সব সময় অবিরাম হাসবো, আপনারা তখন কেউই বিরক্ত হতে পারবেন না!”
“না, হাসতেও পারবে না তুমি! পরিবারের পূর্ব পুরুষ হুয়াং ফু ফুরেন মারা গেছেন, এখনও তিন সপ্তাহ পার হয়নি! পূর্ব পুরুষের মৃত্যু শোককে পরওয়া না করে, একটা দেশের সম্রাট কিভাবে হাসে?”
“আমাকে কাঁদতেও দিবেন না, হাসতেও দিবেন না, তা’হলে আমি করবোটা কি? আমি কতো মানুষ মেরেছি, এটা তো আপনারা পরওয়া করেননি! শুধু খেয়াল আছে হাসি আর কান্নার দিকে, আমাকে কাঁদতেও দিবেন না, হাসতেও দিবেন না!
কুকুরের পাদ-এর মতো তুচ্ছ, আমি নাকি সিয়ে দেশের রাজা?”, এ কথাগুলো বলে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরলাম! আমি আমার কালো চিতার অবয়ব খোচিত রাজ মুকুটটা হাতে নিয়ে মঙ ফুরেনের কোল বরাবর ছুড়ে ফেলে দিলাম। “এই অপদার্থ সিয়ে সম্রাটের দায়িত্বে আমি থাকতে চাই না। আপনি চাইলে আপনার কাছে বুঝিয়ে দিতে পারি এই মুকুট! যে চায়, সে ই নিয়ে যাক না!”

মঙ ফুরেন-এর অবস্থা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেলো, যেটার জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। সবশেষে তিনি বাক্য হারা হয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি দেখলাম ঐ কালো চিতার অবয়ব খোচিত মুকুটাকে তিনি জড়িয়ে ধরে আছেন, তাঁর সারা দেহ থর থর করে কাঁপছে! চোখ থেকে নির্গত অশ্রæ জলের তোড়ে মুখে মাখা প্রসাধনীর অর্ধেক ধুয়ে চলে গিয়ে চেহারাটা হয়ে গেছে অর্ধেক লাল আর অর্ধেক সাদা! রানীরা ইয়েন লাঙ-এর ইশারা বুঝতে পেরে পিছনে সরে গিয়ে আমার কক্ষের বাইরে চলে গেলো। আমি শুনতে পেলাম ফং বড় রানী পরিহাসের সুরে লান ছোট রানী-কে উদ্দেশ্য করে বলছে, “জাঁহাপনার তো ইদানীং ভীমরতি ধরেছে বলে মনে হচ্ছে, কি রাগ ওনার!”

কতো বছর পরে সেই এক ঝাঁক সাদা রঙের ছোট ভূত সশরীরে এসে হাজির হলো আমার স্বপ্নে! ওরা বাতাসকে অনুসরণ করে বাতাসে গা ভাসিয়ে দক্ষিণের জানালাটা দিয়ে টেনে এনেছে একটা অস্পষ্ট রহস্যময় আলোর ফিতা! তারা এসে লুকিয়েছে আমার বালিশ-লেপের দু’পাশে এবং আমার জামা-কাপড়ের মধ্যে! স্থির হয়ে থাকছে, লাফ দিচ্ছে অথবা নাচানাচি করছে! ওদের কান্নার সাথে পিছনের প্রাসাদের সঙ্গী হারা মেয়েদের দুঃখ-বিলাপের মিল আছে! ওদের তীব্র ক্রোধ যুদ্ধ ক্ষেত্রের যুদ্ধেরত যোদ্ধাদের রণহুংকারের মতোই! এই ভয়াবহতার সাথে আমার নৈকট্য সেই শিশুকাল থেকেই, আমি বাধ্য হয়েছি ওদের কাছাকাছি থাকতে!

এই ছোট ছোট সাদা ভূতের দলকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য কেউই এগিয়ে আসছে না! সন্ন্যাসী চুয়ে খোং আছেন বহু দূরে তিক্ত বাঁশ মন্দির-এ, তিনি হয়তো এখন স্বপ্নহীন গভীর নিদ্রায় মগ্ন আছেন! আমি যখন বেশ কষ্ট করে দুঃস্বপ্নের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি, তখন জেগে ওঠার সাথে সাথেই দেখতে পেলাম চিন ছোট রানী-কে, যে কিনা ছিলো অস্থির আতঙ্কিত! চিন ছোট রানী একটা রেশমী চাদর দিয়ে দেহের নীচের অংশের গুপ্তাঙ্গ ঢেকে রেখে ছিলো। সে ছিলো খালি পায়ে। দাঁড়িয়ে ছিলো রাজকীয় বিছানার পাশে। ওর চোখের দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ ছিলো দ্বিধাদ্ব›দ্ব আর ভয়। আমি জানি দুঃস্বপ্নের ঘোরে থাকার সময় আমি উচ্চ স্বরে চিৎকার করে উঠেছি, যা কিনা ওকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে!
“জাঁহাপনার বুঝি শরীর খারাপ লাগছে? আমি তো আরেকটু হলেই রাজ বৈদ্যকে আসার জন্য খবর পাঠাতাম!”, চিন ছোট রানী ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বললো।

“দরকার নেই রাজ বৈদ্যকে! ডেকে নিয়ে আসো একজনকে যে ভূত আটক করতে পারে। আমি জেগে ওঠার পরও দেখতে পাচ্ছিলাম ঐ সাদা রঙের ছোট ভূতগুলো, ওরা মোমবাতির আলোতে রূপ বদল করে আরেকটু ছোট আর চিকন হয়ে গেছে! হয়ে গেছে আরও অস্পষ্ট, এখন ওরা দাঁড়িয়ে আছে গোলকাকার বোতলটার উপর। ফুলের নকশা কাটা কাঠের বারকোশটার উপর এবং জানালার নকশার খাঁজের ভিতরে! ওরা তো চেঁচিয়ে হট্টগোল করছে! তুমি কি ওদের দেখতে পাচ্ছো?”, আমি কাঠের নকশা কাটা বড় থালাটার উপরে সাদা ছায়ার দিকে আঙ্গুল তুলে চিন ছোট রানী-কে বললাম, “ঐ তো! ঐ ছোট সাদা রঙের ভূতের ঝাঁকটা। ওরা আবার এসেছে! ঘনিয়ে আসছে সিয়ে দেশের বিপর্যয় কাল!”
“জাঁহাপনা, আপনি অস্পষ্ট দেখছেন! ভুল দেখছেন! ওখানে তো আছে সারা বছর ফল দেয়, এমন একটা চেরী আপেল ফল গাছ!”
“তুমি আবার ভালো করে তাকিয়ে দেখো। ঐ সাদা ছোট ভূতটা লুকিয়েছে চেরী আপেল পাতার নীচে। তুমি দেখো, মুখটা ঘুরিয়ে দেখো! সে পরিহাসের হাসি হাসছে তোমাদের মতো মূর্খ মেয়ে মানুষদের কাজ কারবার দেখে!”
“জাঁহাপনা, সত্যিই কিছু নাই! জাঁহাপনা যা দেখছেন সেটা হচ্ছে চাঁদের আলো!”
ভয় পেয়ে চিন ছোট রানী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে সে বাইরে থাকা নৈশ প্রহরারত খোজা দাসের নাম ধরে ডাকলো! সাথে সাথেই কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা রক্ষীরা তাড়াহুড়া করে দৌড়ে আসলো। আমি শুনতে পেলাম আড়াল মনোহর প্রাসাদ-এর বাতাসে যেন বিস্ফোরিত হলো উচ্চ স্বরের সিঙ্গা ধ্বনি! ঐ সাদা ছোট ভূতের দল সৈন্যদের তলোয়ারের নীচ দিয়ে পানির উপরে থাকা বুদবুদের মতোই মিলিয়ে গেলো!

কেউ আমার কথা বিশ্বাস করছে না যে, আমি পরিষ্কার ঠান্ডা মাথায় স্বাভাবিক অবস্থাতেই ভূত দেখতে পাই! ওরা সবাই বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক সমস্ত অপ্রাসঙ্গিক ভূতের কিচ্ছা কাহিনীগুলো! কিন্তু ওরা বিশ্বাস করতে চায় না আমার দেয়া সু² খুটিনাটিসহ বিস্তৃত বিবরণ! যা কিনা ওদের ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসা চেহারার দিকে তাকালেই খানিকটা আন্দাজ করা যাচ্ছে! ওরা একটা অপ্রত্যাশিত সন্দেহ ভরা দৃষ্টি নিয়ে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে! একজন মানুষ, যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার দাবীদার দেশের সম্রাট! যার কথায় মুক্তা ঝরে, যার কথাই হচ্ছে আইন!
ওরা কি জানে না, আমি হচ্ছি ফরমান জারী করার ক্ষমতা ধারী, সিয়ে দেশের সম্রাট?
আমার জন্য রাত এবং দিন একই রকম। আমি অশান্তিতে আছি। পাগল সুন সিন-এর আওড়ানো মন্ত্রটা সত্যি সত্যিই তো আমার কানের কাছে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে!
তুমি তো দেখতে পাচ্ছো, নিরানব্বইটা ভূতের আত্মা! ধেয়ে আসছে সিয়ে দেশের বিপর্যয়!

তুয়ান ওয়েন-কে গুপ্তহত্যা করার পরিকল্পনাটা শুরু হয়েছিলো, কোন একবার আয়োজন করা মদ্য পানের আসর থেকে! মদের আসরের এই ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিউ মিন, ছয় মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় বিভাগের সহ-সভাপতি ও ধর্মীয় আচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী লিয়াং ওয়েন মো, প্রাসাদের বাইরের অংশের প্রধান নজরদার চি চাং এবং খোজা দাসদের দলপতি ইয়েন লাঙ! তিন দফায় মদ্য পান করার পর আমি খানিকটা মাতাল হয়ে পরেছিলাম, মনের উদ্বেগ পুরোপুরি কাটিয়ে মনে যা আসে তা-ই বললে শুরু করেছিলাম, বিশেষত মনে জমে থাকা দুঃখের কথাগুলো, এমন সব লোকের কাছে যাদের আছে গন্ডারের শিং-এর মতো তীক্ষ্ণ অনুভূতি, যাদের চেহারায় ফুটে আছে বিশ্বস্ততার জটিল অভিব্যক্তি আর পারস্পরিক বোঝাপড়া অনুভবের সম্পর্ক! এরা তুয়ান ওয়েন-এর নাম এবং তার বিষয়ের নানা ধরনের তথ্য, গুজব আর শোনা কথা খুব সতর্কতার সাথে উত্থাপন করছিলো। আমার মনে আছে, আমি নিজে হঠাৎ করেই সাদা রঙের জেড পাথরের তৈরী মদের ভান্ডটা ছিউ মিন-এর পায়ের কাছে আছাড় দিয়ে চূর্মাড় করে ফেলেছিলাম!

“খুন!”, আর এভাবেই আমি সংক্ষিপ্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ করেছিলাম, শুধু একটা শব্দের হুঙ্কার দিয়ে! ছিউ মিন ভয়ে লাফিয়ে উঠেছিলো।
“খুন!”, সে আমার ফরমান পুনঃব্যক্ত করলো। এরপর আলোচনার বিষয়ে আসলো একটা তীক্ষ্ণ ধারালো পরিবর্তন! এই গোপন হত্যা পরিকল্পনা, আলোচনার সারাংশকে স্পর্শ করলো। ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় অংশগ্রহণকারী কোন একজনের অভিমত, যা কিনা সে না থেমে একটানা ব্যক্ত করেছিলো, সেটা ছিলো এমন : কাজটা বেশ সহজ! তবে একটাই দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এই ব্যাপারটা ভূতপূর্ব প্রয়াত সম্রাটদের অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের ক্রুদ্ধ আর উত্তেজিত করে তুলতে পারে? সিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন রাজ পরিবারের নানা সদস্য আর বংশধরগণ, সামন্ত রাজাবৃন্দ যারা তাদের নিজ এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। এদের সাথে সিয়ে রাজ প্রাসাদের দ্বন্দের তীক্ষ্ণতা হুয়াং ফু ফুরেন-এর মহাপ্রয়াণের সাথে সাথেই বাড়তে শুরু করেছে। আর বিশেষত পশ্চিম সুবাদার চাও ইয়াং এবং তুয়ান ওয়েন-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়!
“খুন!”, ষড়যন্ত্র পরিকল্পনাকারীর অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে আরেকবার চিন্তা করার পরামর্শমূলক বক্তব্য-কে আমি ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম।
খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠলাম আমি!

“আমার আকাক্সক্ষা, তোমারা ওকে হত্যা করবে!”, আমি সামনে থাকা জল চৌকিতে সজোরে বাড়ি দিয়ে উঠলাম! এক এক করে চার জনেরই কান ধরে টান দিলাম, আমার মুখ ওদের কানের কাছে নিয়ে পাগলের মতো হুঙ্কার দিয়ে বললাম, “তোমারা কি শুনতে পাচ্ছো? আমি হচ্ছি সিয়ে দেশের সম্রাট। আমি চাচ্ছি তোমারা ওকে খুন করে ফেলো!”
“ঠিক আছে জাঁহাপনা! আপনি যেহেতু ওকে হত্যা করতে চাচ্ছেন, তা হলে ওকে মরতেই হবে!”, চি চাং মাটিতে হাঁটু গেড়ে মাথা নীচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, সে বললো, “জাঁহাপনা, আপনি আগামীকাল তুয়ান ওয়েন-কে প্রাসাদের ভিতরে আসতে বলেন। আমি জাঁহাপনার পক্ষ থেকে ওকে অপসারণ করবো, জাঁহানপানার ইচ্ছাটি বাস্তবায়নের জন্য!”
পরের দিন ইয়েন লাঙ হুকুম পেলো রাজকীয় ফরমান সাথে নিয়ে শান্ত রাজ কুমার পদবী ধারী তুয়ান উ-এর সরকারি বাসভবনে যাওয়ার। ইয়েন লাঙ ওর সাদা ঘোড়াটা শান্ত রাজ কুমারের সরকারি বাসভবনের আঙ্গিনায় ঘোড়া বাঁধার পাথরের থামে বেঁধে রাখলো। রাস্তা দিয়ে চলা পথিক আর ছোট ছোট দোকানের দোকানদাররা এসে ভীড় করছে। সামনের রাজ পথটা পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে মানুষে! ওরা সবাই এসেছে, এ কালের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন খোজা দাস ইয়েন লাঙ-কে একনজর দেখার জন্য! ওদের আরও বেশি আকাঙ্ক্ষা এ কালের কিংবদন্তির নায়ক তুয়ান ওয়েন-এর সম্ভ্রান্ত অবয়বখানি নিজ চোখে এক নজর দেখতে পাওয়া! শোনা যায় তুয়ান ওয়েন নাকি খানিকটা অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করে, মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে রাজকীয় ফরমানটি গ্রহণ করে। তিন ধাপে সে হাতে হাত বাড়ি দিয়ে তালি বাজায়! বাক্য হারা ইয়েন লাঙ হাতে তালি দেয়ার শব্দ শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো! সে ঐ সময় তুয়ান ওয়েন-এর মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ওর মনোবল পরিমাপ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো! এই সময় তুয়ান ওয়েনের সহোদর ভ্রাতা তুয়ান উ রাস্তার খুব কাছাকাছি গিয়ে রাস্তায় ভীড় জমানো থমকে দাঁড়ানো পথিক দর্শকদের উচ্চ স্বরে তীব্র রূঢ় ভাষায় গালিগালাজ করছিলো!

তুয়ান ওয়েন-এর ঘোড়াটাকে টেনে শান্ত রাজ কুমার-এর সরকারি বাসভবনের লাল রঙের প্রধান ফটকের দোরগোড়া অতিক্রম করে বাইরে নিয়ে আসা হলো। তারপর এক টুকরো কালো কাপড় দিয়ে ওর পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে দেয়া হলো। শুধু অনাবৃত রাখা হলো ওর শীতল আবেগ হীন দু’টো চোখ-কে! তুয়ান ওয়েন মুখ ঢাকা অবস্থায় ঘোড়ায় চড়ে অতিক্রম করছিলো রাজপথের মানুষের ভীড়! সে শুধু তাকাতে পারছিলো সামনের দিকে, আশেপাশে নয়! চারিদিকের উৎসুক জনতার মন্তব্য এবং চিৎকারের মধ্যেও সে ছিলো উদাসীন নির্বিকার! জনতা জানে না, একজন গুরুত্বপূর্ণ সম্ভ্রান্ত মানুষ, দেশের জন্য যার আছে বিশাল অবদান, এই মহান বীরকে কেনো মুখ ঢেকে শহরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!

পরবর্তীকালে ইয়েন লাঙ-এর বক্তব্য থেকে বিস্তারিত জানতে পেরেছি আমি। শহরের সব্জীর বাজারের কাছাকাছি এলাকার রাস্তায় যে ঘটনাটা ঘটে তা যেন ছিলো যে কোন মানুষেরই প্রত্যাশার অনেক বাইরে! ময়লা মলিন ছেঁড়া পোশাক পরিহিত, রাজধানীর রাস্তায় ভিক্ষা করার জন্য পথ চলা, এমন একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক হঠাৎ করেই ভীড়ের মধ্য থেকে এসে তুয়ান ওয়েনের ঘোড়ার সামনে এসে দাঁড়ালো! (চলবে)