আতোয়ার রহমান

মনে কি পড়ে তোমাদের যোদ্ধা বাঙালির গল্প?
হে তরুণ, তোমরা কি জানো যোদ্ধা বাঙালির গল্প?
যারা ডাক্তারির কেরিয়ার ছেড়ে বন্দুক হাতে
দৌড়ায় শত্রæ সেনাকে মারবে বলে।
বুক পেতে দেয় অস্ত্রের উল্লাসের সামনে হাসিমুখে।

উত্তরসুরীর কপাল থেকে লজ্জা আর দাসত্বের
ছাপ মুছে ফেলতে যে ছাত্ররা ভর্তির কাগজ
ছুঁড়ে ফেলে হাতে নেয় বন্দুক,
চোখে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো আক্রোশ নিয়ে!
রক্তের ভেতরে ক্ষোভের ঘূর্ণিস্রোত টগবগ করে।
অস্ত্র কাঁধে চলে যায় গহীন জঙ্গলে, নীল আকাশের তলে
হৃদয়ের পরতে দেশের মানচিত্র আঁকবে বলে।
তোমাদের কি তাঁদের কথা মনে পড়ে?

ক্ষেত থেকে সদ্য তোলা শস্য ফেলে রেখে
যে কৃষক গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে রাইফেল হাতে
জয় বাংলা বলে ছুটে চলে ঘাসের উপর
ভোরের মুক্তোদানার মতো শিশির মাড়িয়ে
মুক্তির বীজ বুনবে বলে, বিজয়ের ফুল ফোটাবে বলে।

স্বাধীনতার শ্যামা পাখির ঘর ছাড়ার ডাকে
যে শ্রমিক গায়ে মাখা কারখানার কালি মুছে
শিরদাঁড়া সোজা রেখে হেঁটে চলে
শিশির আর জ্যোৎস্না গায়ে মেখে
এক মোহলাগা জলরেখা ধরে গৌরবের স্বচ্ছন্দ গাম্ভীর্যে।

নববধুর গায়ের গন্ধ ঘ্রাণের মাঠ ঘাট জুড়ে,
তবু সদ্য বিবাহিত তরুণ বাসর শয্যা থেকে
নীরবে উঠে পড়ে মরণের ভোর ভোর আলোয়
শকুন হত্যা করবে বলে।
শীর্ণ, কঙ্কালসার মা আজও
চোখের সাগরজলে অপেক্ষা করে,
বাড়ির উঠোনে বসে থালা সাজিয়ে ভাত বেড়ে,
ইতিহাসের সন্ততিরা আসবে ফিরে
বিয়ের আংটি কুয়োয় ফেলে দিয়ে
চোখের লোনাজলে তরুণী বধু অপেক্ষা করে
বকুল ফুলের মালা সাজিয়ে,
যদি সেই নিঃসঙ্গ পাখিরা নীড়ে আসে ফিরে
অভিসারের জলে শরীর ভিজিয়ে।
এই অবক্ষয়ের সময়ে ‘আত্মবিস্মৃত’ বাঙালির
একবার যেন মনে পড়ে যোদ্ধা বাঙালির গল্প।