শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : আমার এই পশ্চিম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন সফরের কোন কিছুই আমার মন মতো হলো না। গোটা ব্যাপারটাই ঘটছে হুয়াং ফু ফুরেনের ফরমানের উপর ভিত্তি করে। তাই কোন কিছুই পরিবর্তন করা বা বদলানো সম্ভব নয়।

আমার ক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের সম্রাট একটা সুযোগ পেয়েছেন বিস্তৃত প্রান্তর নিজের চোখে দেখার, পরিভ্রমণ করার। অজানা অস্পষ্টতায় পূর্ণ সেই জগতটা আমাকে যেন আকর্ষণ করতে চাইছে। আমার দেখতে ইচ্ছা করছে দু’হাজার লি বিস্তৃত অপরূপ পাহাড় আর নদীগুলো। আমার ইচ্ছা করছে জানতে, বিশাল সিয়ে রাজ প্রাসাদের বাইরের জগতটা দেখতে কেমন!

আমি খুব খুশী মনে মুচকি হেসে আমার মা, অর্থাৎ রাজ মাতা মং ফুরেন-কে সান্ত¡না দিলাম, আমি প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বললাম, “ঈশ্বরের ইচ্ছায় সম্রাট হবে আরও শক্তিধর এবং ঐশ্বর্যশালী। যদি কেউ দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন, তবে তার নাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এক প্রজন্ম থেকে শত প্রজন্মে!”

ধর্ম গ্রন্থের বাণী বুঝতে পারার মতো ক্ষমতা আমার মা মং ফুরেনের নেই। তাই আমার বলা উদ্ধৃতি তাঁর এক কর্ণ দিয়ে প্রবেশ করে অপর কান দিয়ে যেন খুব দ্রæত বেগেই বেরিয়ে গেলো! এরপর নিতান্তই রাস্তার ভবঘুরে মানুষের ব্যবহার করা অশ্লীল ভাষায় তিনি শুরু করলেন অভিসম্পাত, আমার দাদী অর্থাৎ তাঁর নিজ শ্বাশুড়ি হুয়াং ফু ফুরেনের উদ্দেশ্যে!
আসলে, আমার মা সব সময়ই পিছনে পিছনে অগোচরে আমার দাদীকে অভিশাপ দিতে পছন্দ করেন!

ঐ সময়টুকুতে আমার চিন্তা ভাবনাগুলো ছিলো বিক্ষিপ্ত, আমি ছিলাম উদ্বিগ্ন। কোন কারণ ছাড়াই আমি আমার সেবা প্রদানকারী প্রাসাদ ভৃত্যদের যখন-তখন বেত দিয়ে বাড়ি দিচ্ছিলাম! আমি খুশী না অখুশী, আমি নিজেই সেটা বুঝতে পারছিলাম না! আমি প্রকাশ করতে পারছিলাম না আমার মনের অভিব্যক্তি।
এক দিন আমি রাজ প্রাসাদের গণককে ডেকে পাঠালাম।
এ বারের সীমান্ত পরিদর্শনের সফর আমার জন্য শুভ না কি অশুভ, তা গণনা করার জন্য! আমি তাকে আমার ভাগ্য গণনা করতে বললাম।
তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কয়েকটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পূর্ণ রেখা আর ভগ্ন সরল রেখার বেশ কতগুলো অষ্টভুজের মতো ক্ষেত্র আঁকলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর লাল রঙের একটা কঞ্চি হাতে তুলে নিয়ে তিনি আমার উদ্দেশ্যে বললেন, “সিয়ে সম্রাটের এ বারের যাত্রা এবং সফর হবে নিরাপদ ও শঙ্কা মুক্ত!”
আমি তাঁর কথা শুনে তাঁকে প্রশ্ন করলাম, “কোন ছুটে আসা গুপ্ত তীর কি আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে?”

ভাগ্য গণক তাঁর সামনে রাখা অনেকগুলো বাঁশের কঞ্চির মধ্য থেকে যে কোন একটা উঠিয়ে নিতে বললেন আমাকে। আমি উঠিয়ে নিলাম, তারপর তাঁর হাতে ফিরিয়ে দিলাম।
কঞ্চিটার এক প্রান্ত তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলেন, তারপর মৃদু হেসে বললেন, “গুপ্ত তীর ছুটে আসবে, কিন্তু উত্তরের বাতাসের প্রবল ঝাপটা সেই তীরকে করবে লক্ষ্যচ্যুত!
জাঁহাপনা, আপনি সীমান্ত পরিদর্শনে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে!”

৩.
বারো তম চন্দ্র মাসের তিন তারিখ ভোর বেলা, আমার সাথে পশ্চিম সীমান্তে যাওয়ার সৈন্য দল সততা প্রভা তোরণ অতিক্রম করলো। প্রাসাদের লোক জন উঁচু উঁচু তীর নিক্ষেপ মিনারে উঠে মাথার পাগড়ীর কাপড় হাতে নিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে নেড়ে আমাদের বিদায় জানালো। আর রাজধানীর ভেতর সাধারণ মানুষের মধ্যে যারাই শুনলো এই খবর, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই রাজ প্রাসাদের মূল ফটকের সামনে, রাজকীয় শকট চলাচলের পথের দু’পাশে ভীড় করলো। রাস্তার দু’পাশে যেন তৈরী হলো সারিবদ্ধ মানুষের দু’টি দেয়াল! তারা খুব আশা করে এসেছে, যদি সিয়ে দেশের সম্রাটকে এক নজর দেখা পায়! কিন্তু আমাকে বহনকারী রাজকীয় শকটের উপরের অংশ, লাল পাড়ের শাড়ির মতো উজ্জ্বল হলুদ রেশম কাপড় দিয়ে খুব শক্ত করে ঘিরে রাখা আছে, যেটা ভেদ করে সাধারণ মানুষের পক্ষে কোন ভাবেই আমার অবয়ব দৃষ্টি গোচর হওয়া সম্ভব নয়!

আমি শুনতে পেলাম কেউ কেউ উচ্চ কন্ঠে বলছে, “জাঁহাপনা দীর্ঘজীবী হোন, সিয়ে সম্রাট দীর্ঘজীবী হোন!”

আমি গাড়ির উপরের ছাউনির আলো ঢুকবার ছোট জানালার উপরের কাপড় সরিয়ে বাইরের জনতার দিকে তাকালাম। রাজ শকটকে অনুসরণকারী অস্ত্রধারী জমকালো পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা প্রহরী খানিকটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমাকে বাইরে তাকাতে বারণ করলো। সে বললো, “জাঁহাপনা, খুব হুঁশিয়ার থাকুন। মানুষের ভীড়ে আততায়ী লুকিয়ে থাকতে পারে!”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কখন আমি জানালা খুলতে পারবো।
একটু ভেবে সে বললো, “খানিক ক্ষণ পরে, শহরের বাইরে যাওয়ার পর। তবে নিরাপত্তা কথা বিবেচনা করে বলছি, সবচেয়ে ভালো হয় জাঁহাপনা যদি জানালা একে বারেই না খুলেন।”

আমি সাথে সাথে নিরাপত্তা প্রহরীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললাম, “তোমরা কি এক ঘেয়েমী আর বিষন্নতার দীর্ঘশ্বাসে জড়িয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চাও?”
‘যদি একে বারেই জানালা খোলা না যায়, তবে আমি পশ্চিম সীমান্ত পরিদর্শনে যাবো না।
যদি আমার খুশী মতো বাইরের জগতের মানুষ আর দৃশ্যাবলী না দেখতে পারি, তবে পুরো যাত্রা পথের ভ্রমণটাই হয়ে যাবে অর্থহীন, তাই নয় কি?’
পরের কথাগুলো অবশ্য আমার মনের ভাবনার কথা।
আমার চিন্তা করা এই কথাগুলো তো আমি, কেতাদুরস্ত ঐ নিরাপত্তা রক্ষীকে বলতে পারি না।
সেটা তো শোভনীয় নয় একে বারেই!

রাজ প্রাসাদ থেকে আসা শকট বহর, রাজধানীর নগর প্রকারের প্রধান তোরণের বাইরে যাওয়ার পর চলার গতি বাড়ালো। রাজপথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভীড় ক্রমশ কমে যেতে লাগলো। খোলা প্রান্তর আর ফসলের মাঠ থেকে আসা বাতাস বইছিল শোঁ শোঁ শব্দ করে। গাড়ির উপরে থাকা ধ্বজা আর নিশানগুলো পত পত করে উড়ছিল। বাতাসে এক ধরনের আঁশটে গন্ধ পাচ্ছিলাম। কোত্থেকে আসছে এই গন্ধ, আমি নিরাপত্তা প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলাম। সে আমাকে বললো, মূল শহরের বাইরে শহরের উপকন্ঠে অনেক মানুষ চামড়া আর পশুর পশম প্রক্রিয়াজাত করার পেশায় নিয়োজিত। যখনই শীতকাল আসে তখনই ওরা রক্তমাখা ভেড়ার চামড়া, গরুর চামড়া সংগ্রহ করে নিয়ে আসে বিভিন্ন এলাকা থেকে, রৌদ্রে শুকাতে দেয়। এখানকার রাজ পথের দু’পাশ পরিপূর্ণ হয়ে আছে বিভিন্ন গৃহ পালিত আর বন্য পশুর রোদে শুকাতে দেয়া চামড়া আর পশমে!

রাজকীয় শকটের গতি রুদ্ধ হলো, কারণ হঠাৎ করেই ঘোড়া আর গাড়িগুলোর ভীড়ের মাঝে আবির্ভাব হলো এক বৃদ্ধা মহিলার! সম্মুখ ভাগের অশ্বারোহী দল ও রাজকীয় শকটের দু’পাশের প্রহরীরা শুরুতে এই বৃদ্ধাকে দেখতে পায়নি। এই বৃদ্ধা একটা পশুর চামড়া দিয়ে শরীর আবৃত করে রাস্তার বাম পাশে অভিবাদনের ভঙ্গিতে মাথা নীচু করে অনেক ক্ষণ যাবত বসেছিলেন। তিনি চামড়ার খোলসটা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সোজা আমার রাজকীয় শকটের সামনে এসে লুটিয়ে পরলেন।

নিরাপত্তা রক্ষীদের সবার চেহারাই ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। গাড়ির বাইরে একটা বিশৃঙ্খল গোলযোগের শব্দ আমি শুনতে পেলাম। আমি জানালা খুলে দেখি ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা রক্ষীরা ঐ সাদা চুলের বৃদ্ধাকে জোড় করে সরিয়ে নিয়ে গেছে। আমি শুনতে পেলাম ঐ বৃদ্ধার গগন বিদরী কান্নার শব্দ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার ওয়জু নামের ছোট্ট মেয়েটা! তোমরা আমার ওয়জুকে ফিরিয়ে দাও। জাঁহাপনা, আপনি দয়া করেন। আমার মেয়েকে প্রাসাদ থেকে মুক্তি দেন!”

“ঐ বুড়ো মানুষটা চিৎকার করে করে কাঁদছে কেনো?
কে সেই ওয়জু? ঐ নামের মেয়েটি কে?”, আমি নিরাপত্তা রক্ষীকে প্রশ্ন করলাম।
“কোন দাসী হবে হয়তো!
মনে হয় সাধারণ পরিবার থেকে বেছে কোন একটা প্রাসাদ দাসী হচ্ছে ঐ নামের মেয়েটা।”
“কে সেই ছোট মেয়ে ওয়জু? তুমি কি ওয়জুকে চেনো?”, ঘোড়ার গাড়ির পিছনের পর্দা ঘেরা প্রকষ্ঠে বসে থাকা এক প্রাসাদ দাসীকে পর্দা উঠিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, বৃদ্ধা মহিলার কান্না শুনে আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
“ওয়জু নামের অল্প বয়সী মেয়েটি ছিলো প্রয়াত সম্রাটের সার্বক্ষণিক সেবিকা। সম্রাটের মৃত্যুর পর, সম্রাটের শবাধারের সাথে ঐ মেয়েটিকেও সম্রাটের সমাধীতে সমাহিত করা হয়েছে।” গাড়ির পিছনের প্রকষ্ঠে বসা দাসীটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো এ কথাগুলো বলতে বলতে!

সে চোখ মুছতে মুছতে আরেকটা কথা বললো, “মা-মেয়ে, ওরা দু’জনেই দুর্ভাগা। মরণের পর হলুদ ঝর্ণার পথে ওদের দেখা হবে আবার!”
একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা ওয়জু নামের অল্প বয়সী প্রাসাদ দাসীটির চেহারাটা স্মরণ করার খুব চেষ্টা করলাম। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। সর্বোপরি আট’শ জন প্রাসাদ দাসীর সবারই চেহারা ছিলো মোহনীয়, বেশ সুন্দর, তারা দেখতেও ছিলো একজন আরেক জনের মতোই!

একটা সময় গেছে, রাজকীয় হেরেমের মধ্যে তারা ছিলো যেন নীরবে দুলতে থাকা বাছাই করা প্রষ্ফুটিত হওয়ার মতো পুষ্প মঞ্জরী, এরপর তারা প্রষ্ফুটিত হয়েছে পূর্ণ মাত্রায় অথবা শুকিয়ে গেছে, ঝরে পরেছে। কারোরই আর কোন চিহ্ন অবশিষ্ট থাকে নাই!
আমি স্মরণ করতে পারছি না, ওয়জু নামের অল্প বয়সী মেয়েটার মুখ অবয়ব, কিন্তু স্মরণ করতে পারছি তাম্র কাঠি পাহাড়ের ঢালের নীচের সমাধি ক্ষেত্রটার ছবি। স্মরণ করে পারছি মাটির নীচে গভীর গর্তে প্রথিত অনেকগুলো শবাধার ও মৃত দেহের কথা। আমার ভাবনার সাথে মিল রেখেই যেন গাঢ় ঠান্ডা বাতাসের একটা ঝাপটা আমার নাসা রন্ধ্রের ভিতরে প্রবেশ করলো, আমি একটা হাঁচি দিলাম। হঠাৎ করেই গাড়ির মধ্যে আমার খুব শীত লাগতে শুরু করেছে!

“জাঁহাপনা, আপনার শীত লাগছে বুঝি!”, নিরাপত্তা রক্ষী বললো, “ঐ বৃদ্ধা মহিলার শিরচ্ছেদ করা দরকার।”
“না না, আমার তো শীত লাগছে না। আমার বরং মৃত মানুষের কথা মনে হচ্ছে।” ময়ূরের পালকের তৈরী একটা জামা শরীরের উপরের অংশে পরে নিলাম, জামাটা বেশ বড়, কোমরের কাছে চামড়ার তৈরী কোমর বন্ধ শক্ত করে বেঁধে নিলাম। আমি বললাম, “গ্রাম এলাকা প্রাসাদের ভেতরের চেয়ে অনেক বেশি ঠান্ডা। তোমরা কি আমার জন্য একটা ছোট মাটির চুলার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, আমি গাড়ির ভিতরে থেকেই একটু আগুন পোহাতে চাচ্ছি।”

সিয়ে দেশের গ্রামাঞ্চল আমি এই প্রথম বারের মতো নিজের চোখে দেখলাম। গ্রামগুলোর চার পাশ ঘিরে আছে নদী, পাহাড়! বনের পাশে পুকুরের ধারে গোলাকার ছনের তৈরী ঘরগুলো দেখতে যেন দাবার গুটির মতো লাগছে। শীতের শুরু এখন, ফসলের মাঠগুলো পরিত্যক্ত, চাষাবাদ হচ্ছে না। তুত গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা আর পাতা শুকিয়ে শীর্ণ আর বাঁকা হয়ে আছে। দূরে পাহাড়ের ঢালে কাঠুরিয়ারা জ্বালানীর জন্য কাঠ কাটছে। কাঠ কাটার শব্দ শূন্য উপত্যকায় সৃষ্টি করছে প্রতিধ্বনি! লবণ এবং অন্যান্য দ্রব্য নিয়ে ফেরিওয়ালারা বড় রাস্তার পাশের ছোট ছোট গলিগুলোতে পণ্য সামগ্রি বিক্রি করছে। ওরা ওদের এক চাকার গাড়িগুলো ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গাড়ির বহর প্রতিটা গ্রাম অতিক্রম করার সময় আকৃষ্ট করছে মানুষের ভীড়, শোনা যাচ্ছে কুকুরের ডাক। ভীড় করা মানুষের সবারই পোশাক পরিচ্ছদ আর পায়ের পাদুকা পুরনো আর মলিন। গলির মুখগুলোতে ভীড় করা কৃষকদের প্রায় সবারই মুখমণ্ডল শুষ্ক, দেহগুলো শীর্ণকায়। তারা আমাকে এক নজর দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হচ্ছিলো। এক জন বয়স্ক মানুষের নেতৃত্বে ওরা তিন বার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণতি ভঙ্গিতে আমাকে অভিবাদন জানাচ্ছিল। রাজকীয় শকট বহর গ্রাম এলাকা ছেড়ে তুত গাছের বন অতিক্রম করার সময় আমি ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি তখনও গ্রামের অনেক মানুষ সম্রাটের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশের শিষ্ঠাচার প্রদর্শনরত অবস্থায় আছে, অনেকগুলো কালো চুল ভরা মাথা হলুদ ধূলার পথের উপর বার বার মাথা ঠুকে জানাচ্ছে সম্রাটকে শ্রদ্ধা ও সম্মান। মুখে ওরা গাইছে সম্রাটের স্তুতি, সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মাটিতে প্রণতি ভঙ্গিতে মাথা ঠুকবার শব্দ, যেন বসন্তের উজ্জ্বল দিনে অপ্রত্যাশিত বজ্রধ্বনির আওয়াজের মতোই মনে হচ্ছে আমার কাছে।
গ্রাম অঞ্চল হচ্ছে দরিদ্র এলাকা? অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর আবর্জনায় ভরা। প্রায়ই ঘটে ফসল হানি, তাই গ্রামের সাধারণ কৃষকরা বড়ই দুর্ভাগা। আর এমনটাই ছিল সিয়ে দেশের পল্লী এলাকা সম্পর্কে আমার প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি। আমি গ্রাম সম্পর্কে যে দৃশ্য মনে মনে কল্পনা করতাম, সেই কল্পনার চিত্রের সাথে বাস্তবের গ্রামাঞ্চলের কোন মিল পাই নাই!

একটা ঘটনা আমি ভুলতে পারি না, একটা বালক গাছে উঠেছিল বেয়ে বেয়ে। ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে ঐ ছেলেটার পরনে ছিল একটা মাত্র ছেঁড়া জামা। (চলবে)