চৈতন্য নাজমুল তাঁর পেননেম বা সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নাম।
জন্ম সত্তুরের দশকে বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির শহর খুলনায়।
বাবা বিভাগীয় জাজ কোর্টের সরকারি কৌসুলি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। নাজমুলের সরকারি জেলা স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষালাভ
এবং তাঁর সে শহরই জীবনের চেতনাগত মূল কাঠামোর ভিত্তিভ‚মি।
ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত ও সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক, পরবর্তীতে ঢাকাতে উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ হ’লে ভারতের বরদা
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চাঙ্গ সংগীতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ পাবার
দিকে টেনে নিয়ে যায় তাঁকে।
একটি মাত্র কবিতার বই ‘নন্দন অসার’ ইং ১৯১২ সালে
কোলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতে ‘চতুরংঙ্গ প্রকাশনা
সংস্থা’ থেকে বের হয়। তাঁর মাতুল বংশে স্বয়ং মা,
মেজ ভাই কবিতা লেখেন; খালাত ভাই, ‘যে তুমি হরণ
করো’, ‘পৃথক পালংক’ এর ক্ষণজন্মা
কবি আবুল হাসানের জন্ম।

‘প্রেমে অপ্রেমে স্মৃতিদের সাথে’

প্রেম, সরল মেঘের মত শান্ত এক ছায়া,
হয়ত সে এক মোহ-ব্যাধী, উন্মাদ সাধন,
নয়ত স্বপ্ন আশা পথের প্রহরী,
বেঁচে থাকার অনিবার্য এক সতেজ সুবাতাস।

হে দয়িতা, হৃদয় নন্দিনী, তুমি চ’লে গ্যাছো
আমাদের বৈরিতার নিরিবিলি সমঝোতায়;
এখন আমরা বেঁচে আছি নিবিড় একার নির্বাসনে;
অথচ আমার পাশেই আছ তুমি,
যেন এ সেদিনই চায়ের টেবিলে
গল্পের ফুলঝুরি মেলে ধ’রলে তুমি,
আর প্রণয় ক্ষরণে শয্যায় হুল্লোড় মাতামাতি, ভেজা জ্যোৎস্না
লেগে আছে দু’জনার আনত শরীরে…!

আমি ভালোবাসি এখনো তোমায়,
ভালোমন্দ, তোমার হেলার ছুরি,
তোমার সবটুকুন আমার গ্রহণ-সীমায় অটুট এখনো;
জানতো প্রেমের যোগাযোগে দূরত্ব
কেবলি হয় এক গাণিতিক শূণ্য মাত্র?

জগতের শুরু নেই, শেষ নেই জানি,
তোমার আমার আত্মার বন্ধন-সূত্র,
তার অস্তিত্বেরও শেষ নেই কোনও;
দেবলোক অমরার বাসিন্দা তাই
তুমি আমি
আর জগতের সকল প্রেমিক-যুগল!

তুমি আছ, পাশেই আছ আমার,
আছ স্মৃতির উষ্ণতায় আজও তেমনি, যেমনি ছিলে বরাবরের মত;
সব স্মৃতিই তো মেরু বাতাসের
শো শো মৃত্যুর গান নয়; যার ভেতরে
ঘুমিয়ে যায় পাহাড়ের মত স্বপ্নসাধ
আর ডুবে যায় প্রতাপান্বিত প্রেমও!

সময়ের বলিযজ্ঞে স্মৃতিরও বুঝি
কিছু দায় থাকে,
বর্তমানে নিয়ত উঁকি দিয়ে যায় তারা;
প্রায়শ:ই জানান দিয়ে বলে উঠে–
“আমরা তোমার সুন্দরতম মূহুর্তগুলির
অন্বিষ্ট আকর, মুক্তোমালার জ্বলজ্বলে
উত্তাপে এইতো তোমার দেখভালে আছি,
এইতো তোমারই পাশে, চেয়ে দেখ
হে নির্লিপ্ত চেতন-মগন জীবন যোদ্ধা,
তোমার নি:সীম একাকী নির্বাসনে
সহসা হঠাৎ কোনো দীর্ঘশ্বাসের সংকেতেই চলে আসি আমরা
উষ্ণতা দিতে তোমারই পাশে;
এগিয়ে যাও নিমোর্হ প্রেমে কেবলই,
মানবিক কিছু না পেলেও ক্ষতি নেই কিছু,
অথৈ জীবনস্রোতে শরীর-মন বর্ত্যে যায়ই
অস্তিত্বেতে ভালোবাসা একবারেই নি:শেষ হয় না ব’লে;
তাই বেঁচে উঠ, বেঁচে থাকো সুন্দরতম
স্মৃতিদের সাথে, প্রেম ছাড়া বলো বাঁচে কি কিছু?
বেঁচে থাকার মত অতুল বিস্ময়, সফল প্রাপ্তি, আর বলো আছে কি কিছু?”!

‘মহাজাগতিক প্রেম’

আশাহত জীবনে বন্ধন শিথিল হ’লে সব,
হৃদাকাশে চেতনা ভাসে কেবলি শূণ্য ঠিকানাহীন,
প্রিয়কে তুমি ছুঁয়ো না আর, চেয়ো না ধ’রে রাখতে কেবলই
বুকের কাছাকাছি!

ফুল ঝরে যায় ফুলের গালিচায়, হাতের শৌখিন পালক উড়ে উড়ে
ফিরে এলে করতলে, জেনো সে তোমারই;
শূণ্যে শূণ্যে ভেসে স্ফূর্তির আমোদে যে ভালোবাসা প্রেম হ’ল,
সে অচিন প্রেম-পাখি
মুক্ত ক’রে দাও, যাক সে উড়ে অসীম অনন্তে,
পায় যদি খুঁজে কোনো প্রেমের দেবতারে।

‘তুমি চলে গেলে’
—মায়ের জন্য এলিজি (১)

“চ’লে গেছ তুমি
দূর আলোক ছায়ার পথে….
চাঁদ সূর্য আর পবিত্র নামের আলোক ধ্যানী
ঘুম-দেহ রেখে গেছ সমাধিতে ফুলের আলোক আশ্রয়ে।

এখন চাঁদ সূর্যের উঠা নামায় নির্লিপ্ত তুমি, মিনিট ঘন্টার হিসেব রহিত সময়হীন এক ইতিহাস,
আর কোনো হিসেব ক’ষবে না তুমি জানি এ
অনন্ত বিশ্রামে….!

পরম শান্তির এ ঘুমে কোনো কোলাহল,
আযান কিম্বা শঙ্খ ধ্বনি কোনো গতি, প্রণোদনা আর দেবে না তোমায়…
দিন রাতের সব হিসেব হারালো এ জন্মের শেষ ঋণ শোধে….
জীবনের পশরা সাজানো
কল্লোলিত সংসার, কোনো প্রিয়জন ডেকে ডেকে
আর পাবে না সাড়া তোমার; শুধু সাকার ঐ আশ্রয়-সমাধি, শূন্য হৃদয়ের প্রিয় ডাকে আঙ্গিনার ঐ কোণে ঠাঁই হ’য়ে থাক অনন্ত ফুলের সৌরভে..!

‘নির্ঘুম স্মৃতি প্রহরায়’
——মায়ের জন্য এলিজি (২)

মা, আমিতো বড় হ’য়েছি অনেক,
চার দশকের ভার এখন অস্থি মজ্জায়, সীমাহীন ভাবনাপুঞ্জ নিয়ে আজকাল
তাবৎ সত্তায় খুব ভার ভার লাগে;
তোমাকে কেবলি শিশুর মত খুঁজি চারপাশ আর মনের অলিগলিতে…!

বড় হওয়া কাকে বলে সবটা জানি না এখনো মা,
বড় হ’লে কেবলি পালটে যেতে হবে ঢালাই
করা জীবনের পথ বেয়ে, মনের সহজ ভাবনার খেয়ালে বেড়ী প’রিয়ে ইটপাথরময় নিত্য বেচাকেনার কোলাহল হাঁটে,
মানি না তা; শুধু সে-ই কি জীবনের মানে তবে, বলো মা….!
জীবনের মানে এই নয়তো যে, জন্মের ভোর হ’তে বেড়ে উঠবার মুখর আয়োজনে কেবলি গলা টিপে টিপে মেরে ফেলা বর্ষাস্নাত কদমের কোমল ঘ্রাণের মত জীবন্ত আবেগ আর অনুভ‚তিরাশি?

কোমল পাঁপড়ির মত যে শিশু, অন্তরে আছে মৃদু দেব-ঘুমে সদা, তার পবিত্রতা মুছে ফেলা যেন এ জীবনযজ্ঞে নিয়ত এক কীর্তিময় সফল কর্ম, জীবনের মতিহার;
মানি না ওসব আমি, অন্যদের অধিকারে থেকে যাক সেসব যথাতথা…!

জঠরে ঘুরেছি নাভি-রজ্জুর জন্মধামে,
আর এখন কি তবে এই দৃশ্যমান জগতের মায়াজালে ঘুরছি কেবলি বন্দী এক চেতনলোকে?
জানি না এর কি মানে, কি অর্থ এ জীবনের, শেষমেষ কি পায় মানুষ
সকল আয়োজন শেষ হ’লে, জানি না সবটা তার এখনো আমি…!

তুমি আছ, তুমি নেই, কতকাল দেখি না তোমায়, বসে বসে তসবিহ হাতে ছড়িয়েছ আলোক-আশীর্বাদ তোমার
প্রিয় বংশধর আর প্রিয়জনে…
আমার চেতনা তোমার আশ্রয়ে সর্বদা
জেগে আছে তোমারি স্মৃতি প্রহরায় জান তো?
আর দিবানিশি অন্তরের শিশুকে ক’রে যাচ্ছে পুষ্টিদান, অপার স্নেহ-আদরে স্মৃতির উৎসবে;
তোমার উপস্থিতির উষ্ণতায় কোন এক নিরাপদবোধ জাগে;
তুমি নেই, তবু তুমি আছ যেন আমার সবটা চেতনা জুড়ে;
তাই তো, বসে বসে চেয়ে আছি তোমার প্রহরাময় স্মৃতিদের পানে…!

‘এক নৈতিক ব্যাধি আছে’

জন্মের নিয়তি নিয়ে কাকডাকা ভোর
পেরিয়ে ধীরে ধীরে বকুল কুড়ানো শেখা;
আত্মহারা আনন্দ উচ্ছ¡ল কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে কোকিলের মোহগান মধুফুলের গন্ধে জীবন কেবলই জাদুকাঠির মিহি আলোককণার এক
ঝর্নাধারা, এক মোহময় উৎসব যেন;
মৌলিক চাহিদার খোরাক যথাবিহিত মিটে গেলেই
স্ফূর্তির মেলা যেন জীবনের অর্থবহতায় নূতন স্বাগত এক মাত্রা ঢালে;
প্রতিটি জীবনকোণে এক প্রতুল আনন্দধারায় অর্থবহতা ফিরে পায় সবকিছু;

তবু সবকিছু স’রে যায় একে একে, নেমে যায় ভাটির স্বভাবে, সৃষ্টির ফুল ফুটে, বেদনায় ফল রেখে ঝরে যায় ফুল।
পাল্টে যাবার নিয়মের কাছে পরাজয় মেনে সবই বদলে যায় একদিন,
জন্ম-ক্ষণের কান্না-ধ্বনি বারেবারে প্রতিধ্বনির মত ‘নিয়তি’র জানান দিয়ে যায়, অন্তর কাঁদে অস্থির অচিন বিচলতায়…!

জীবন চার দশকের ভারে নূতন দৃষ্টি পেলে
চেয়ে দেখি, অনেক প্রাপ্তির ঢেউ কাণায় কাণায় পূর্ণতা নিয়ে এসেছে, তবু কখনোই শতভাগ আনন্দে সুখী হওয়ার নিরেট কোনো কারণ থাকে না
জগত দু:খময় ব’লে,
চেতনায় অশ্রæময় ঝড় গতি পায় কেবলি জীবনের বাঁকে বাঁকে;
কোথাও কেমন যেন এ সত্তার গহীনে সতত নিদ্রাহীন বিবেক জেগে
থাকে বেদনায় ভার হ’য়ে!
শুধুই একান্ত অনেক না পাওয়া কিম্বা অ-সুখীতাই এর কারণ হয়ত নয়,
কেউ কেউ জেগে থাকে, জেগে আছে শর্তহীন মায়ের স্নেহে তাদেরই
জন্যে, শোষিত খাদ্যহীন ঘুমহীন যারা রুগ্নতায় জীবন যুদ্ধে হ’য়ে
আছে দিশেহারা….!

এ এক সহজ সাবলীল নিত্য ঘটে যাওয়া অন্ত:সলিলা নদীর মত প্রবহমান বেদনা-স্রোত, এ হৃদয়কে সর্বদাই ক’রে রেখেছে ভারাক্রান্ত!
এ কোনো সর্বগ্রাহ্য আধুনিক বৈদ্যে নির্নীত ‘অবসাদ রোগ’ নয় হয়ত,
এ এক ব্যাধি আছে তাবৎ সৃষ্টিক‚লের নৈতিক শরীরে,
আমি কেন দেখে যাই তা শুধু, আর আহত এ হৃদয় ভেঙে ভেঙে
কেবলই এঁকে যায় কবিতার ছবি?….

কবিতা আমার প্রথম প্রেমের ভালোলাগা, দয়িতার প্রেমসিক্ত অধরার সে কাঁপন, ক্লান্ত দুপুরে দীঘির জলে অনাবিল ডুব সাঁতার,
কবিতা আমার কালবোশেখী ঝড়, ওলোট পালোট দুর্নিবার শক্তি ঘূর্ণিঝড়ের, কবিতা আমার সত্তার বেদীমূলে সর্বজনগ্রাহ্য এক অতুল প্রসাদ, ফুলের বাগানে নৃত্যরত পরীদের গান,
কবিতা কেবলি পুড়িয়ে যাওয়া দ্রোহের এক আগুন, চেতনালোকে
সর্বময় পোড়ানো
এক অনির্বাণ শিখা।

‘তোমার দিকে হেঁটে যাচ্ছি কেবলই’

“আলো আছে ব’লে ছায়ারাও আছে,
আছে তারা নিরিবিলি;
যে মানুষ, যে বৃক্ষরাজি জীবকুল
অস্তিত্বমান দিনমনির বরে,
ছায়ার সাথে নিত্য থাকা তাদেরও আলোকের পরিমল স্নান শেষে।

সহজ মানুষের অন্তরেও আলো
ছায়ার খেলা,
সেখানেও সঙ্গী আসে ঊষার প্রথম কিরণের মত;
খুলে দিলে অন্তর দ্বার তুমি, ঠাঁই দিলে সাথীরে বুকের গহনে,
ভালমন্দে তাই বিচারজ্ঞানহীন চিত্ত, সঙ্গীর উষ্ণ ছোঁয়ায় চৈত্রের
অস্থির দাবদাহে প্রশান্ত তৃপ্তিতে ধীরমগ্ন।
তবু কোনো এক অজানা ‘কারণ’
নিরিবিলি থেকে যায় অন্তরের ভাঁজে
অপেক্ষার প্রহরে অভীষ্ট লক্ষ্যে
হেনে দেবার আঁধারিত ইচ্ছের সুখে!

যখন তুমি হারালে কোন এক উৎসব রাতে,
এই অমারাত্রির শাপে তোমারই স্মৃতিরা আলো ছায়ার ছন্দে খেলে
সত্তার এই নিবিড়ে;
যে ভ‚-তট অমানিশা বেদনায় ভ’রে থাকে পূর্ণিমা প্রার্থনায়,
আমিও জেগে আছি অনন্ত প্রহর সেভাবেই,
সূর্যের প্রথম কিরণের মত এসে ছুঁয়ে দেবে আমায় তুমি, আমূল শাপমুক্ত হব আমি আর পবিত্র হয়ে উঠব আবারও আমি; আর তুমি সৃষ্টির আদি পাপমুক্তির গৌরব হবে।

সূর্যের অনিবার্য আলোক উৎসবে
ছায়ারা পারে না টিকে থাকতে জানতো;
তেমনি আমার চেতনা ছায়ারাও তোমার আবির্ভাব আলোকে স্বভাব ফিরে পাবে; সত্তার নিবিড়ে পরিমল আনন্দ আলোকে আমি তুমুল ভেসে যাবো স্নাত হব তুমি এলেই…!

ছায়ারা বুঝি অমরার ধন, জগতের বর সবখানেই আলোকের পাশাপাশি আছে, আর আমি যেন শারীরিয় অর্ধাংগীর খোঁজে অবিরাম পরিত্রাণের এক মায়ালোকবাসী,
জীবনে আনন্দের খোঁজে নিরত তোমার দিকে যেন কেবলই হেঁটে যাচ্ছি…।

‘তারকায় অন্তমিল’

তোমার অধীর অপেক্ষায় এ সত্ত¡া
সৃষ্টির জ্যোৎস্নায় বসে গাইছে একাকী,
সহসা তুমি এলে হে কালোত্তীর্ণ মহিমা,
দাঁড়ালে এসে বুকের ক‚ল ঘেষে
যেন নান্দনিক জন্মান্তরে এক ইচ্ছে পূরণ!

তোমার বাহুডোরে প্রাণ প্লাবনে শিহরণ খেলে,
আলিঙ্গন তোমাকে ছোঁয় অতুল বিস্ময়ে;
ইন্দ্রিয়ঘন অনুভবে তোমার সংযত ইচ্ছের গতি যেন রঙ পাল্টায়
প্রণয় ক্ষরণে কেবলি..!

দু’যুগ পরের সব দুরাশা মেঘের রূপোলী আশার কিনার ঘেষে যেন নেমে এলে হে
হৃদয় নন্দিনী, সৌন্দর্যের অমরাবতী,
মধ্য বয়েসের কাছাকাছি আর্তিময় আঁখিপাতের এই মায়াবী স্নিগ্ধ সন্ধ্যায়
তুমি এলে জীবন নাটকের হে দয়িতা!

এতকাল কল্পনার তপোবনে আমরা
ছিলেম বেঁচে, দূরত্ব রেখার দু’প্রান্তে,
দেহের জীর্ণতা উত্তীর্ণে ছিলেম বেঁচে
নিরিবিলি, হয়ত দেখা হবে কোন এক আঁধারিত দহনে, সেই ছিল আরাদ্ধ আশা দু’জনার।

আমাদের এই আত্মমগ্নতা যেন জীবনের হাঁটে ঋণশোধ আর বেচাকেনার পালা শেষে এক আরাদ্ধ ক্লান্তিমুক্তি সহস্র ক্রোশের।
তুমি আমি দু’জনে খাঁ খাঁ বিরান জেগে থাকা চর যদিও এখন,
করুণ এক অগতি রিক্তপ্রায় ফসলহীন
নিভৃত কোণ, তবু উন্মীলিত দৃষ্টি চেতনার দীপ জ্বেলে কেবলি সারাটা আকাশের মত
জেগে থাকে আলো আঁধারের কুহকে …!

দূর নক্ষত্রের দল আলোককণার
মিতালী গ’ড়ে চলে অনিমেষ, তারই নিচে
জীবনের আলো, জ্বালানীর মতো জ্বলে যায়, জ্বলে যাক
তবে অন্তিম মুহুর্ত অবধি,
তারপরে দু’জনা জোনাকির জন্ম পাবো,
নয়ত আকাশে খুঁজে পাব অন্তিম ঠাঁই
মহাজাগতিক কানাকানিতে তারকার অন্তমিলে..!

‘অনন্ত আকাশের দিকে’

ঘর হ’তে ঘরে গেছি দিনান্তের গভীর হতে
রাতের নিরাল অবধি,
মন থেকে স’রে স’রে সহসা দিগন্তেরও ওপার অবধি,
তবু কখনো এই এক আকাশের নিচে
মানুষের ভীড়ে স্বস্তির শ্বাস
নিতে পারিনি কখনও; সময়ের প্রহারে
কেবলই শ্বাসরোধ হ’য়ে এসেছে শুধু!

ফুলের সুবাস আর জোনাক উৎসবে
যেন আড়মোড়া ভাঙে আধা চাঁদ,
হৃদ শুভেতে প্রেমসিক্ত ইচ্ছেরা থাকে নিরিবিলি তাদের তামস আমেজে,
জীবন যেন ছোপছোপ এক জলছবি;
এমত সান্তনাবোধেও অপূর্ণা জানি
নিখিলের অখিল সুখদ হাসি
সাধ আর সাধ্যের আধেক ব্যবধানে।

আপন অভয় দর্পনে মানুষ বন্দী ব’লে চেতনদন্ডে পারদের অস্থির
স্বভাব থাকে অটুট; আত্মপ্রসাদ আস্ফালনে কেবলি চারিদিক
হ’য়ে আছে শোরগোলে চক্রবন্দী।
প্রতাপান্বিত ইচ্ছের মুকুরে বীক্ষণ পীড়ন, তৃষ্ণা ও প্রাপ্তির প্রসাদ
দ্ব›েদ্ব ক্ষ’য়ে যায় স্বভাব নিয়ত তাই;
মেলেনা মুক্তি, মেলেনা নিশ্চিন্ত ঠাঁই কোথাও;
কেবলই শ্বাসরোধ হ’য়ে আসে, আর তাই
অনন্ত আকাশের দিকে মেলে ধ’রেছি মন, অসীমে ছিঁড়ে
ফুঁড়ে যাই যদি হারাতে….!