যদি বল বাংলাদেশি

“হাই, হাও আর ইউ?
হয়ার আর ইউ ফ্রম?”
“এই এম ফ্রম বাংলাদেশ।”
“বাংলাদেশ? ওহ, ইজ ইট এ পার্ট অফ ইন্ডিয়া?”
“নো নো, ইট ইজ কমপ্লিটলি এ ফ্রীডম কাউন্ট্রি।”
“ওহ, ইয়া ইয়া, নাও রিমেম্বার, ইট ওয়াজ সেপারেটেড ফ্রম
পাকিস্তান ইন ১৯৭১।
বিফোর ইট ওয়াজ এ পার্ট অফ ইন্ডিয়া বাট সেপারেটেড উইৎ
পাকিস্তান ইন ১৯৪৭।”
“ইয়েস, ইউ আর রাইট।”

বিদেশে বসবাসকালীন সময় যদি আমি নিজেকে বাংলাদেশী বলি,
অর্থাৎ, আমার দেশ হয় বাংলাদেশ। মনে প্রাণে হই আমি বাংলাদেশী বাঙালি
তবে তো আমাকে জানতেই হবে বাংলাদেশের জন্ম কথা?
কে এ দেশের জন্মদাতা? জন্মের সন, তারিখ, ও সময়।

তবে আমি যদি নিজেকে বাংলাদেশী মনে না করি
শুধু মাত্র জন্ম সূত্রে আমি বাংলাদেশী হই এবং
অন্য কোনো দেশের মাটি আমাকে স্থান দিবে না বলে
আমি “বাংলাদেশী” হই।
তাহলে আমি কোন দেশি বলে নিজেকে পরিচয় দিতে মনে মনে
ভালোবাসি ভাই?
পাকিস্তানি? ভারতীয়? আফগানী? নেপালি? না ইরানি? নাকি
অন্য কোনো দেশি?
কোন দেশি? যে ভিন দেশি আমি হতে চাই অথচ দু’পা নিয়ে
দাঁড়াবার মতো এক ইঞ্চি
মাটি দেবে না আমায়?

অথবা হতে পারে আমি চাই এদেশকে অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভিন
কোনো দেশ হিসাবে ডাকতে।
আশা হয়তো তাই, পায়তারি চলছে তার, একদিন, একদিন
হবেই হবে বাংলাদেশের
নাম অন্য কোনো নামে-
“বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ নাম রাখার হবে পরিণাম
না হয় করবো তারে ভিন দেশের অঙ্গসংস্থান”।

এই সব স্বপ্ন নিয়ে আমি নিজেকে আপাততঃ বাংলাদেশী বলে যাই
বলি কথা বাংলা ভাষায় আর
পরাধীন স্বেচ্ছাচারীর শেকল খুলে ফেলে করি স্বাধীন দেশের
অবাধ জীবন ভোগ।
তবে মুখে বাধে বলতে বঙ্গবন্ধু শব্দ,
কে ই বা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাতা, কেন সে জাতির পিতা
জাতির পিতা মানে কি, কেন ইবা জয় বাংলা!

আমার পালিত বিড়ালটি আমারে বলে,
“তুমি সত্যের পূজারী হইও না, গায়ের জোরে বল-এই সব মিথ্যা!
কেননা মানুষ মাত্র প্রাকৃতিক সূত্রে সত্যের পূজারী
মানুষ তার মনের অজান্তে সত্যরে করে লয় স্বীকার করি।
তোমার পালিত বিড়াল, কুকুর বা যে কোনো পশু পাখিকে জেনে
নিও- দেখো কেমন তারা উপকারী ভক্ত, কেমন মালিক ও তার
ঘর চিনে লয় আর
কেমন তারা সত্যের পূজারী।”

তবে কি আমি তাদের চেয়েও অধম, অসভ্য?!

যা পারেনি একাত্তরে

কোনো এক দুঃসময়ে সভ্যতার এই চূড়ান্ত যুগ-জীবনেও
ঘরে ঘরে অসহমর্মিতা, বর্বরচিত স¤প্রীতিহীন-সা¤প্রদায়িক পীড়ন দূরীকরণে
আধ্যাত্মিক বিশ্বাস আদর্শে এক হয়ে- খেতে বসেছিলাম এক পাতে;
শাক্ষী- বিশ্বাবাসী আর বিধাতা অথচ
কে না জানে আমাদের দুর্ভাগ্য, দুঃশাসন-শোষণ, নিপীড়ন-ধর্ষণ লজ্জার কথা!

দীর্ঘ নয় মাস আত্মসত্তা আর প্রসব বেদনে জর্জরিত বিধ্বস্ত জটর
হতে জন্ম হল যে শিশুর
পিতা তার ক্ষত বিক্ষত নবজাতক শিশুটি প্রতিপালনে
কেমন পথহারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
অথচ দিয়েছিল কি এতটুকুও সময় বিশ্ববাজার মন্দাকালেও অকৃতজ্ঞ
সন্তানেরা পিতারে?
দেয়নি, এগিয়ে যায়নি সার্থোদ্বত জাতি পথ খুজিতে, করেনি
সন্ধান দুর্জ্ঞেয় সত্যেরে।
কিন্তু, নব মাতৃকার জনক মোদের- দুঃসময়ে পথ হারাননি
কৃষক-শ্রমিক প্রতিপালন ভয়ে।
জাননিত! অপশক্তি বীষ পোকারা ক্ষরে ক্ষরে খেতে
লেগেছিল তখন বাংলাদেশের ধানক্ষেত নির্ভয়ে।

আমি অবাক হয়নি, অবাক হওয়ার কিছু নেই এখানে!
অবাক হয়নি সেই গহন কালো রাইতের নিধন যজ্ঞ অবলোকনে-
যা পারেনি কাল শত্রæ একাত্তরে! সেরেছে তা পঁচাত্তরে!
পিতার উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত শত্রæ হাসে দেখে রক্ত ঝরে বত্রিশ নম্বারে!
বাংলার ইতিবৃত্তেও সে কথা লিখা রয়েছে- এদেশে যুগে
যুগে আসে ঝরাতে শত
সিরাজের প্রাণ শত্রুসন্যে
এখনও গোপ্তব্যে সুযোগ সন্ধানে পায়তারে মীরজাফর
রক্ত-বহ সন্তান অভয়ারণ্যে!

সেদিন বাংলার অরুণ-অর্যমা-সূর্য-সারথিরে অস্তনমিত করেছিল যারা-
পিতারে পথহারা করিতে গিয়ে হয়েছে তারা নিজেরাই পথহারা!!

ঘুমাও হে পিতা! ঘুমাও শান্তিতে গহন আঁধার গোর গহ্বরে!
তোমার অস্তোন্মুখ অস্থাভা পাঞ্জেরীর কিরণোচ্ছাস নির্দেশ
দিয়ে গেছে আমাদেরে;
“তোমরা পিতার মতো ভুল করে ক্ষম যদি কোনো শত্রুরে
আরো ভুল করে বুকে নিয়ে কৃতঘ্নরে
ঘুমিয়ে পড়ো না দাক্ষিণ্যে কৃপাসিন্ধু দৃষ্ট্যে গহন তিমিরে অচিরে!!”