Home জাতীয় বড় বিপদে লাখো প্রবাসী

বড় বিপদে লাখো প্রবাসী

অনলাইন ডেস্ক : চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি চার মাসের ছুটিতে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন চাঁদপুরের কচুয়ার আবুল কালাম। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ১১ মের টিকিট ছিল তার। করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় যেতে পারেননি।

এরই মধ্যে আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর আবুল কালামের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে। তাই বিমানের টিকিটের জন্য তিন দিন ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি টিকিট পাননি। কবে পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই।

আবুল কালামের মতো হাজারো প্রবাসী টিকিটের জন্য ঘুরছেন। ফিরতি টিকিট কাটা থাকলেও তা রি-ইস্যু হচ্ছে না। এরই মধ্যে আবার সুযোগ নিচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তারা চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি করছে ওয়ানওয়ে টিকিট। অন্যান্য দেশ থেকে ফেরা কর্মীরাও আছেন একই বিপদে। সব মিলিয়ে লাখখানেক কর্মীর জীবিকা পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে।
কর্মীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে ফিরতে না পারলে চাকরি হারাতে হবে। নতুন করে ভিসা ও আকামা করতে হবে। তাতে লাখের বেশি টাকা লাগবে। তারপরও সবাই ভিসা পাবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই।

উড়োজাহাজের টিকিট পেতে রাজধানীর সড়কে বিক্ষোভ করেন কর্মীরা। কিন্তু দুই দেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো জবাব পাননি কর্মীরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই সংকটপূর্ণ। আমাদের কাছে কোনো উত্তর নেই।’

করোনার কারণে ১ মার্চ বন্ধ হওয়া বিমান চলাচল এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। সৌদি এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট চলছে। স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতায় ছয় শতাধিক আসনের এসব ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ২৬০ জন যাত্রী পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। সৌদি এয়ারলাইন্সের চলমান দুটি ফ্লাইটে প্রতিদিন ৫২০ জন যাত্রী সৌদি আরব ফিরলেও ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আটকেপড়াদের ৫ শতাংশও ফিরতে পারবেন না। আটকেপড়া কর্মীদের ভাষ্য, সৌদি সরকার ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে তাদের হয়তো আর কখনও কর্মস্থলে ফেরা হবে না।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক বলেছেন, ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সৌদি এয়ারলাইন্স আবেদন করলে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে। তারা এখনও আবেদনই করেনি। বিমান আটটি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে বিমানকে সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনও অবতরণের অনুমতি দেয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়াতে এরই মধ্যে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশটির কাছ থেকে আশ্বাস বা সদুত্তর পাওয়া যায়নি। উল্টো সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে থাকা অবৈধ কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে বলছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অনুরোধ জানানো ছাড়া আর কিছু করার নেই। সৌদি আরব অনুরোধ না রাখলে কী করার আছে?’

অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এ পথেই যেতে হবে, যেন নিয়োগকারী দেশগুলো ভিসার মেয়াদ বাড়ায়।

আটকেপড়া কর্মীরা বিমানের ফ্লাইটে ফিরে যাবেন, সে সুযোগও নেই। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, ১ অক্টোবর থেকে ঢাকা-জেদ্দা রুটে সপ্তাহে আটটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে সৌদি বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্লট বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনও অবতরণের অনুমতি পাওয়া যায়নি। এর আগে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে আটকেপড়া কর্মীদের ফেরাতে চার্টার ফ্লাইট চালাতে অনুমতি চেয়েছে বিমান। তার অনুমতিও এখনও দেয়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ। চার্টার ফ্লাইটে সৌদি থেকে আটকেপড়া যাত্রী আনা হচ্ছে। কিন্তু সৌদিতে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি নেই।

এ বিষয়ে জানতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের বুকিং কার্যালয়ে গেলেও কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। প্রধান টিকিট কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সৌদি এয়ারলাইন্স কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ফিরতি টিকিট আছে এমন ৩৫ হাজার জন অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কীভাবে ফেরানো যায়, তার পথ খুঁজতে জেদ্দার সদর কার্যালয়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অলি মিয়া দু’দিন ধরে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে পথে বসে আছেন। তিনি জানান, রোববার তিনি ফিরতি টিকিট রি-ইস্যুর জন্য আসেন। তখন জানানো হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০০টি করে দেড় হাজার টিকিট দেওয়া হবে। অলির টোকেন নম্বর ৮৮। সোমবার তাকে টিকিট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার তাকে জানানো হয়- টিকিট নেই।

সোমবার রাত বুকিং কার্যালয়ের সামনের করিডোরে কাটান অলিসহ কয়েকশ’ কর্মী। যারা টোকেন পেয়েছিলেন, তারাই প্রবেশ করতে পেরেছিলেন সোনারগাঁও হোটেল চত্বরে। হোটেলের বাইরের সড়কে রাত কাটান হাজারো কর্মী। তারা বলছেন, ভিসার মেয়াদ এক মিনিট পেরিয়ে গেলে তারা আর বিদেশে ফিরতে পারবেন না। দেশেও চাকরি-বাকরি নেই। সঞ্চয় যা ছিল, গত সাত মাসে ভেঙে খেয়েছেন। বিদেশ যেতে না পারলে পথে বসতে হবে।
সৌদি আরব থেকে দেশে এসে করোনায় কত কর্মী আটকা পড়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রাক্কলন অনুযায়ী, প্রায় আড়াই লাখ কর্মী আটকা পড়েছেন। যাদের ছোট একটি অংশ চার্টার্ড বিমানে ফিরে গেছেন। বাকিরা এখনও আটকে আছেন।

জনশক্তি খাত-সংশ্নিষ্টদের ধারণা, সৌদি থেকে ফেরা ৮০ হাজার কর্মী আটকা পড়েছেন। তাদের সবার ফিরতি টিকিট কাটা ছিল।

সৌদি থেকে এক হাজার ২০০ রিয়ালে ফিরতি টিকিটসহ গত ৪ মার্চ দেশে ফিরেছিলেন মো. আওলাদ। ৩০ এপ্রিল তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। প্রতি যাত্রায় তার টিকিটের দাম পড়ে ২১ হাজার টাকা। গতকাল বনানীর এক ট্রাভেল এজেন্সি তার কাছে ঢাকা-জেদ্দার ওয়ানওয়ে টিকিটের জন্য এক লাখ ১৭ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি বলেন, সাত মাস ধরে বেকার থেকে এখন তার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।

Exit mobile version