Home কানাডা খবর মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের খরচ মেটাতে অসমর্থ বহু পরিবার

মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের খরচ মেটাতে অসমর্থ বহু পরিবার

অনলাইন ডেস্ক : গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের মরশুম শুরু হয়েছে। তবে কয়েক দশকের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির রেকর্ড বৃদ্ধিতে যেসব পরিবার জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে ইতিমধ্যেই হাপিয়ে উঠেছেন তাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন শিশু তত্বাবধায়ক প্রোগ্রাম একটি অস্বাভাবিক ব্যয় হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।

বার্লিংটন, ওন্টের তিন সন্তানের মা অ্যানেলিজ লটন বলেন, তার সন্তানরা সাধারণত যে জিমন্যাস্টিকস গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে যোগ দেয় তা এই বছর অর্থনৈতিক কারণে আর সম্ভব হবে না। কারণ মুদ্রাস্ফীতির জন্য তাদের ব্যয় এমনিতেই বেড়ে গেছে। যে ক্যাম্পে তিনি তার দুই ছেলেকে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাতে প্রতিটি ক্যাম্পারের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩০০ ডলার খরচ হয়। এই খরচ বহনের সামর্থ্য তার নেই। এর পরিবর্তে লটনের চার ও পাঁচ বছর বয়সী দুই ছেলে শহরের একটি ট্রামপোলিন এবং টম্বলিং ক্যাম্পে যোগদান করবে।
লটন বলেন, এখন কস্টকোতে (সুপার মার্কেট) যাওয়া বন্ধকী অর্থ প্রদানের মতো। সুতরাং, নিত্যপণ্য ও গ্যাসের বর্ধিত ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি এই ক্যাম্পগুলোর খরচ বহন করা মূলত অসম্ভব।

মূল্যস্ফীতি, অপারেটিং খরচ ও ড্রাইভ ফি বৃদ্ধি :
মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে প্রকট আকার ধারণ করায় গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ইতিমধ্যেই অনেক পরিবারের জন্য একটি বিলাসিতা এবং এটি ক্রমেই তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কারণ পরিবারগুলোকে দুরূহ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হচ্ছে?

কানাডার মুদ্রাস্ফীতির হার গত মাসে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় ভোক্তারা গ্যাসের জন্য ৪৮ শতাংশ বেশি অর্থ প্রদান করেছিলেন, যেখানে খাবারের দাম গত বছরে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
অভিভাবকদের যেমন উচ্চ খরচের জন্য বাজেট করতে হয়েছে, তেমনি সারা দেশে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, এর অর্থ হলো পরিবারগুলোকে নিবন্ধনের জন্য বেশি চার্জ করা।

কানাডা জুড়ে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের প্রশাসকরা সিবিসি নিউজকে বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি তাদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে বাধ্য করেছে, যার ফলে কিছু পরিবারের জন্য তাদের প্রোগ্রামগুলো ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্যাম্পগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন – নৌকার জন্য গ্যাস, বারবিকিউ এর জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ক্যাম্পারদের খাবার সরবরাহের উপর নির্ভর করে। মূল্যস্ফীতি এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ক্যাম্প অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্টিফেন জ্যাকসন বলেছেন, গ্রীষ্মকালীন শিবিরগুলো সাধারণত তাদের ফি যথাযথভাবে নির্ধারণ করে এবং মুদ্রাস্ফীতির জন্য অ্যাকাউন্টে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন ঘটছে।

ক্যাম্প ববে এবারের বছরটি ভিন্ন ছিল। জ্যাকসন এখানকার নির্বাহী পরিচালক। যদিও ক্যাম্পের ফি সাধারণত প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ ডলার বৃদ্ধি পায়, সেখানে ক্যাম্প বব এই বছর সপ্তাহে ৩৫ ডলার ফি বাড়িয়েছে। জ্যাকসন বলেন, এই বছরের বৃদ্ধি এত তাত্পর্যপূর্ণ ছিল কারণ ২০২১ ও ২০২২ সালে কোনও বর্ধিত মূল্য সংযোজন করা হয়নি। ক্যাম্পটি কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ ছিল। যখন মুদ্রাস্ফীতির খরচ এবং প্রতি বছর স্বাভাবিক দাম যা বৃদ্ধি পায় তা যোগ করা হয়, তখন ফি বাড়ানো ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকে না।
খাদ্য, গ্যাস এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই একমাত্র বিষয় নয়। পরিসংখ্যান কানাডার মতে, মে ২০২২ এ বিনোদনমূলক সুবিধা এবং পরিষেবাগুলোর ব্যবহারের জন্য মূল্য; যার মধ্যে এজেন্সির ভোক্তা মূল্য সূচকে গ্রীষ্মকালীন শিবির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

মন্ট্রিলের ‘ক্যাম্প ইকোলার্ট’, যারা ব্যানফ, হুইসলার এবং সান দিয়েগোতে ছোট আউটডোর অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পও চালায়- তারা ফি ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে? এর মালিক মারিয়ানো লিউ বলেন, আমরা অনেক রেজিস্ট্রেশন হারিয়েছি কারণ অনেক বাবা-মা’র সামর্থ্য নেই।

আর্থিক সহায়তার জন্য বড় ডোনেশন :
যদিও বেসরকারী শিবিরগুলোকে নিবন্ধন ফি বাড়াতে বাধ্য করা হয়েছে, সেখানে সাস্কের ক্রিস্টোফার লেকের ক্যাম্প কাদেশের মতো অলাভজনক সংস্থাগুলোকে ভর্তুকির জন্য দাতাদের কাছে রেকর্ড পরিমান ডোনেশন চাইতে হয়েছে। ক্যাম্প কাদেশের নির্বাহী পরিচালক টিম গুড বলেন, ক্যাম্পটি দাতব্য অনুদানের উপর নির্ভর করে এবং এ বছর এখানে দাম বাড়াতে হয়নি। তিনি জানান, আর্থিক সহায়তার বিশাল চাহিদার কারণে তাকে দাতাদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ চাইতে হয়েছে। অনেক বেশি পরিবার ভর্তুকির জন্য আবেদন করেছে বলে জানান গুড।

টিম গুড আরো জানান, সাধারণত বছরে ভর্তুকির জন্য আমরা ১০ হাজার ডলারের বাজেট করে থাকি। তবে এ বছর আর্থিক সহায়তার চাহিদা ২০ হাজার ডলারেরও বেশি। তিনি বলেন, একটি সাধারণ বছরে ক্যাম্পের বার্ষিক খাদ্য বাজেট ১০০,০০০ ডলারের বেশি। তিনি উদ্বিগ্ন যে যদি খাদ্য খরচ ১০ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তার জন্য বাজেট পরিচালনা করা কঠিন হবে।

অসরপর ক্যাম্পিং চ্যারিটি নামক সংস্থা অন্টারিও জুড়ে ৪৭টি গ্রীষ্মকালীন শিবিরের সাথে অংশীদার হয়ে কাজ করছে। তারা নিম্ন আয়ের যেসব পরিবারে সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু রয়েছে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে? এ বছর সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বড় অনুদান চেয়েছে। দাতব্য সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জুডি ম্যাকগোয়ান একটি ইমেলে সিবিসি নিউজকে জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় ক্যাম্পার আবেদনে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখতে পেয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, একটি গ্রীষ্মকালীন শিবির বা স্লিপওয়ে ক্যাম্প হল কিছু দেশে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে পরিচালিত শিশুদের জন্য একটি তত্ত¡াবধায়ক প্রোগ্রাম। গ্রীষ্মকালীন শিবিরে অংশগ্রহণকারী শিশু এবং কিশোররা ক্যাম্পার হিসাবে পরিচিত। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version