মুরশাদ সুবহানী : কবি বন্দে আলী মিয়া। আজীবন দরিদ্রতার সাথে লড়াই করেছেন। কিন্তু সাহিত্যপ্রেম ত্যাগ করেননি। নিরলসভাবে নিজের সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। ‘ময়নামতির চর’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হলে তিনি কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তাঁর অসাধারণ কাব্য প্রতিভা কাব্যপ্রেমীরা জানতে পারেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কবি বন্দে আলী মিয়ার জন্ম বাংলাদেশের ছোট জেলা শহর পাবনার রাধানগর (নারায়নপুর) মহল্লায় ১৯০৬ সালের ১৫ জানুয়ারি।

কবি বন্দে আলী মিয়া কবিতায় আকর্ষণীয় ছন্দে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন-আচরণ, গ্রামের দৃশ্যপট চিত্রিত করেছেন।

তিনি সহজ-সরল শব্দ চয়নে কবিতা নির্মাণ করে প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তাঁর ‘ময়নামতি’ চর এবং শিশুতোষ গ্রন্থ নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা আছে আমাদের এই লেখার মধ্যে। তার আগে বলে নিতে হয় যে, তিনি শুধু একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন চিত্রকর, ইসক্রিপ্ট লেখক। ১৯২৭ সালে কলকাতার আশুতোষ লাইব্রেরী থেকে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘চোর-জামাই’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩১ সালে কলকাতার ডিএম লাইব্রেরী থেকে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতির চর’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যের মাধমে তিনি তৎকালীন কবিদের মধ্যে নিজের স্থান করে নেন এবং কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। কবি বন্দে আলী মিয়ার কাব্য নিয়ে আলোচনা করার আগে আমরা তাঁর কর্মময় জীবন উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। অনেক কবি-সাহিত্যিক-লেখক, বুদ্ধি-বৃত্তির চর্চাকারী বিদগ্ধ জনেরা তাঁকে চিনতেন। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি।

কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনা শহরের মজুমদার একাডেমী (আর.এম একাডেমী) থেকে ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কলকাতা আর্ট একাডেমীতে ভর্তি হন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর কর্মময় জীবনের শুরু প্রথমে সাংবাদিকতা দিয়ে। তিনি ইসলাম দর্শন নামে পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতা কপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ‘বিকাশ’ ও ভোরের আলো পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

‘কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৩১-১৯৩২ শিক্ষাবর্ষে কলকাতা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ সালে উত্তীর্ণ বলে পাবিপ্রবি’র শিক্ষক, গবেষক, ড. আব্দুল আলীম উল্লেখ করেছেন।’
কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই তথ্য সূত্র ধরে বলা যায়, স্কুল শিক্ষকদের আরো প্রশিক্ষিত করতে চাকুরীকালে কবিকে টিচার্স ট্রেনিং-এ পাঠানো হয়।
কবি বন্দে আলী মিয়ার কাব্য প্রতিভা প্রস্ফুটিত হতে শুরু করে কিশোর বয়সেই। পাবনার মজুমদার একাডেমীতে তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্র সময়কাল থেকেই কাব্য চর্চা শুরু করেন। ‘ছিন্নপত্র’ নামে তাঁর প্রথম কবিতা নাটোরের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী গেজেটে ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। আগেই বলেছি কবি বন্দে আলী মিয়ার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতীর চর’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে।

এই কাব্যগ্রন্থ বিষয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত জানতে তাঁর প্রবল আগ্রহ হলো। তিনি স্মৃতি কথায় লিখেছেন “প্রায় মাস দেড়েক পরে সংবাদপত্র পাঠে জানতে পারা গেল, রবীন্দ্রনাথ পারস্য থেকে ফিরেছেন। আমার ‘ময়নামতীর চর’ নামক কবিতার বইখানি সেই সময়ে ছাপা হচ্ছিলো। বইটা সম্পর্কে একটা অভিমত কবির নিকট থেকে গ্রহণ করবার দুরাশা মনে ছিল। সুতরাং শ্রাবণের এক দ্বিপ্রহরে জনৈক শিল্পীবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বোলপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

অপরাহ্ণ সাড়ে পাঁচটার দিকে সুধাকান্ত বাবু খবর পাঠালেন-আমাদের আগমন সংবাদ শুনে কবি আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।…. কবির বাসগৃহ উত্তরায়ণে এসে হাজির হলাম। কবি ইজিচেয়ারে শুয়ে কি একখানা বই পড়ছিলেন। আমরা যেতেই উঠে বসলেন। আমরা অভিবাদন জানিয়ে সম্মুখে বসলাম। কাগজের মোড়ক খুলে ‘ময়নামতীর চরে’র ছাপানো ফর্মাগুলি তাঁর হাতে দিলাম।
কবিতাগুলো রবীন্দ্রনাথ একরে পর একটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন।
ময়নামতীর চর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের অভিমত সেদিন দুপুরে আহারাদির পরেই পাওয়া গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

‘তোমার ‘ময়নামতির চর’ কাব্যখানিতে পদ্মা চরের দৃশ্য এবং তার জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ ছবি দেখা গেল। তোমার রচনা সহজ এবং স্পষ্ট, কোথাও ফাঁকি নেই। সমস্ত মনের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস ভঙ্গিতে লিখেছ। তোমার সুপরিচিত প্রাদেশিক শব্দগুলি যথাস্থানে ব্যবহার করতে তুমি কুন্ঠিত হওনি তাতে করে কবিতাগুলি আরো সরস হয়ে উঠেছে। পদ্মাতীরের পাড়াগাঁয়ের এমন নিকট স্পর্শ বাংলাভাষায় আর কোন কবিতায় পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। বাংলা সাহিত্যে তুমি আপন বিশেষ স্থানটি অধিকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি। ২৬ জুলাই ১৯৩২।”

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি কাউকে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেন তাহলে আর কারো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কবি বন্দে আলী মিয়ার ‘ময়নামতি চর’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পড়ে কবি গুরু যে মন্তব্য করেছেন, তা একটি বিশেষ দিক নির্দেশ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘তোমার রচনা সহজ এবং স্পষ্ট, কোথাও ফাঁকি নেই।’ আসলেও এটি যথার্থ মূল্যায়ন। ‘ময়নামতীর চর’ কাব্যগ্রন্থ’র কয়েকটি কবিতা নিয়ে আলোকপাত করার সময় এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কবি বন্দে আলী মিয়া কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বেতারে এবং পরে রাজাশাহী বেতারে যোগদান করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন : কবি বন্দে আলী মিয়ার পিতা মুন্সী উমেদ আলী পাবনা জজকোর্টে চাকুরী করতেন। তাঁর মাতা নেকজান নেসা। পিতা মাতার ইচ্ছা অনুসারে তিনি পাবনা শহরের জিলাপাড়া মহল্লার ফজলার রহমানের কন্যা রাবেয়া খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯২৬ সালে। কবির প্রথম স্ত্রীর অনেক সন্তান আঁতুর ঘরেই মারা যায়। প্রথমা স্ত্রীর এক কন্যা জীবিত। কবি পরে আরো তিনবার পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। রাবেয়া খাতুনের পরের সহধর্মিণীরা ছিলেন, হেনা, শামসুন্নাহার এবং পরীবানু। প্রথম স্ত্রী এক কন্যা সন্তানের বিয়ে হয় পাবনা শহরের সাব্বির আহমেদ’র সাথে। তিনি শিক্ষা সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কবির দ্বিতীয় স্ত্রী এক কন্যা সন্তানের জননী। তৃতীয় স্ত্রী ছয় পুত্র, দুই কন্যার এবং চতুর্থ স্ত্রী দুই পুত্রের জননী। কবির এক নাতী ‘কথিত’ বন্দুক যুদ্ধে পাবনায় নিহত হন। তাকে পাবনার সবাই নাতী বাবু বলে ডাকতেন।

কবি বন্দে আলী মিয়ার পুত্ররা হলেন, রকিবুল ইসলাম টুটু (মরহুম), শহীদুল ইসলাম ছুটু (মরহুম), সিরাজুল ইসলাম বুলু, মহিদুল ইসলাম মজনু (মরহুম), ফরিদুল ইসলাম ফরাদ, রমিজুল ইসলাম রঞ্জু, জাহিদুল ইসলাম চাঁদ এবং ওমর ফারুক তারা। কন্যারা হলেন, রোকেয়া বেগম, আফরোজা বেগম মিনতি, দিলরুবা বেগম সুমতি এবং জান্নাতুল ফেরদৌস মিলু।
কবি বন্দে আলী মিয়ার পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে কেউ সাহিত্য জগতে এসেছেন বলে আমার জানা নেই।

কবি বন্দে আলী মিয়ার কোন কিছু দেখার যে গভীর দৃষ্টি ছিল তা অনস্বীকার্য। তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিড় দৃষ্টি মেলে এবং কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই মন্তব্য ‘সমস্ত মনের অনুরাগ দিয়ে তুমি দেখেছ এবং কলমের অনায়াস ভঙ্গিতে লিখেছ।

গ্রামীণজীবন, মানুষের সুখ-দু:খ-বেদনা এক অসাধারণ কাব্য লেখার কৌশলে তুলে এনেছেন। অনবদ্য কৌশল কাঠামো তাঁকে কবি হিসেবে সবার মাঝে স্থান করে দিয়েছে। তারপর কবিগুরু মন্তব্য সেই আসনকে আরো পাকাপোক্ত করে দিয়েছে। রবীন্দ্র বিদ্বেষীরা এগুলো ভালো চোখে দেখেনি এ কথা বলা
যায়। আসলে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিরা কোন কিছুই পজেটিভভাবে নেন না। এর কারণ বোধ করি তারা নিজেরাই অগ্রগণ্য বলে মনে করেন আর কাউকে নয় অথবা নিজেরা সেটি করতে পারেন না ।ঈর্ষান্বিত, নিন্দুকরা সেটা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন বটে তবে একজন উদার মনের মানুষ হতে পারেন না।
কবি বন্দে আলী মিয়া যে সময়ের কবি সেকালে তিনি বিশ্বময় নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। কিন্তু একালে পারছেন।

তাঁর ‘ময়নামতীর চর’ কাব্যগ্রন্থ প্রথম কবিতার নামকরণেই করেছেন।
‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় মোট পাঁচটি কবিতা আছে। যাকে এক কথায় কবিতাগুচ্ছ বলা যায়।
‘ময়নামতির চর’

(ক)
বরষার জল সরিয়া গিয়াছে জাগিয়া উঠেছে চর
গাঙ-শালিকেরা গত খুড়িয়া বাঁধিতেছে সবে ঘর।
গহিন নদীর দুই পাড় দিয়া আঁখি যায় যত দূরে
আকাশের মেঘ অতিথি যেন গো তাহার আঙিনা জুড়ে!
মাছরাঙা পাখী একমনে চেয়ে কঞ্চিতে আছে বসি
ঝাড়িতেছে ডানা বন্য হংস-পালক যেতেছে খসি,
তট হতে দূরে হাঁটু জলে নামি এক পায়ে করি ভর
মৎস্যের ধ্যানে বক দু’টি চারি সাজিয়াছে ঋষিবর।
…………………………………………………..।’
কবি বন্দে আলী মিয়া এই কবিতায় বরষার জল সরে গিয়ে জেগে উঠা চরের চারদিকের দৃশ্য কবিতায় তুলে এনেছেন। যা সহজ-সরল এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ ।তবে কবিতার রূপায়নে কবি মনের গভীর অনুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়।
কচুরীপানার ফুল
বেগুনী রঙের কচুরী পানার ফুল-
পানিতে ভাসিয়া চলে হেথা হোথা হয় নাকো দিক ভুল,
সুরসুর করি বায়ু চুপিসারে কয় কথা কানে কানে
শিহরায় তার বোঁটা আর পাতা শিহরায় অভিমানে;
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ..
কচুরী পানার ফুল
কাজল বরণ লিকলিকে দেহ পিঠভরা এলোচুল।
মেঘের মতন মুখ দেখে তার পানির আয়না দিয়া
সবুজ বরণ শাড়ীখানি তার রহে তনু জড়াইয়া।
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ..।’
(ময়নামতীর চর, বন্দে আলী মিয়া)
কচুরীপানা আর এর ফুল দেখেননি এ রকম মানুষ খুব কমই আছেন। দেশের নদী-জলাশয়ে কচুরীপানার বাস।
কচুরীপানা কবিতার বিষয় হতে পারে ! এই ভাবনা আমরা কয়জন ভেবেছি। কবি বন্দে আলী মিয়া কচুরীপানা নিয়ে সুন্দর অনবদ্য এক কবিতা লিখেছেন।নিপুন নির্মাণ কৌশলে কচুরীপানার ফুলকে কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
কবি বলছেন, ‘ বেগুনী রঙের কচুরীপানার ফুল-
পানিতে ভাসিয়া চলে হেথা হোথা হয় নাকো দিক ভুল।’
কুচরীপানার ফুলের সাথে বাতাস কথা বলে কানে কানে।
কবি বন্দে আলী মিয়া কচুরীপানার সবুজ রঙের পাতাকে সবুজ বরণ শাড়ীর সাথে তুলনা করেছেন। এখানেই কবি বন্দে আলী মিয়ার দেখার এবং ছান্দিক কবিতা লেখার এক যাদুকরি দিক।

স্মৃতি কথায় পাওয়া যায়, কবি বন্দে আলী মিয়া ‘ময়নামতির চর’ কাব্যগ্রন্থ বিষয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিমত সংগ্রহ করে বিদায় নেবার আগে বলেছিলেন,তাঁর কলমিলতা বইটা প্রেসে আছে এবং সেখানা তিনি কবিকে উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কলমিলতা বইটি পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন জাগে সেটি কী প্রকাশিত হয়নি। নাকি প্রেস ছাপা লিপি কোনোভাবে হারিয়ে গেছে।
বন্দে আলী মিয়া জানতে পারেননি।তবে আশার কথা কলমিলতা কবিতাটি ‘ময়নামতীর চর’ কাব্যগ্রন্থে আছে।
জানা যায়, ‘ময়নামতীর চর’র প্রথম সংষ্করণে মোট বিশটি কবিতা ছিল।পরবর্তীতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত এই কাব্যগ্রন্থে আরো বিশটি কবিতা সন্নিবেশিত করে মোট চল্লিশটি কবিতা নিয়ে ‘ময়নামতীর চর’ বইটির সপ্তম সংষ্করণ বের হয় ১৯৬৩ সালে।
কবি বন্দে আলী মিয়া কলমিলতা বইটি কবি গুরুকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন, সেই গ্রন্থের কলমিলতা কবিতাটিতে কি আছে সেটা আলোচনার দাবি রাখে।
‘ময়নামতীর চর’ কাব্যগ্রন্থে পাওয়া ‘কলমিলতা’ কবিতাটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করা হয়েছে তাও দেখা যায় না। এর কারণ অজানা।
‘বাতাস লাগিয়া দোলে নিরবধি কলমিলতা
পাতায় তাহার মাটির মনের গোপন কথা-
বিহানের রোদে টলমল করে বিলের পানি
বুকে ভাসে তার রূপে ডগমগ কলমিরাণী।
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ..
কলমির ফুল-কুমারীরা যেন খুশীতে ভরা
চোখে তার সোনালী স্বপন রূপ-পশরা;
বেগুনী রঙের কুচকুচে মুখে দু’খানি ঠোঁট
সব মধু যেন ওই ঠাঁয়ে আসি হয়েছে জোট।
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ..
পাতায় ফুলেতে গলাগলি করে কলমিলতা
ইলশেগুঁড়িতে বুকে জাগে তার চঞ্চলতা।’
(কলমিলতা কবি বন্দে আলী মিয়া)

কলমিলতা আসলে শাক-সবজী। শাক-সবজী নিয়ে কবিতা হতে পারে কবি বন্দে আলী মিয়া তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবং কবি মনের গভীরতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।প্রাণের সাথে বোধের সংযোগ স্থাপন করে তিনি কবিতা রচনা করেছেন। এই কারণেই তিনি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য হয়ে তাঁর কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন।
কবি বন্দে আলী মিয়ার কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ মিলিয়ে ২০০শত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।এ ব্যতিরকেও বেতারে তাঁর অসংখ্য কথিকা প্রচারিত হয়। তাঁর অপ্রকাশিত অনেক লেখা আছে বলে জানা যায়।
কবি বন্দে আলী মিয়ার ১১৫ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি#
লেখক ( সাহিত্যের সেবক, অ্যাডভোকেট,জজকোর্ট,পাবনা ফ্লোরিডা, ইউএস প্রবাসী)