অনলাইন ডেস্ক : রুশ সাবমেরিনের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে উত্তর আটলান্টিকে যৌথ নৌবহর গঠনে একজোট হয়েছে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে। রাশিয়ার সবমেরিন শিকার করার পাশাপাশি সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষায় একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উভয় দেশ। এই চুক্তিকে দুই দেশই তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বড় মাইলফলক হিসেবে দেখছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে রুশ সাবমেরিন ধরতে যৌথ নৌবহর গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে নতুন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। এই জোটের মূল লক্ষ্য সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ–কেবল রক্ষা করা। কারণ এই কেবল ক্রমবর্ধমানভাবে রাশিয়ার হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে যুক্তরাজ্যের পানিসীমায় রুশ জাহাজের উপস্থিতি ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ন্যাটোর দুই সদস্যদেশের নৌবাহিনী ব্রিটিশ নির্মিত টাইপ–২৬ ফ্রিগেটের একটি যৌথ বহর পরিচালনা করবে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে।
বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে আরএএফ লসি-মাউথ ঘাঁটিতে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস স্টোরকে স্বাগত জানানোর সময় এ ঘোষণা দেন স্টারমার। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যকে ‘রাশিয়ার স্থায়ী হুমকির বিষয়ে সতর্ক’ থাকতে হবে। তিনি ডন স্টারগেসের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিন সন্তানের জননী এই নারী ২০১৮ সালে রুশ ডাবল–এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত একই নার্ভ এজেন্ট নভিচকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তদন্তে বলা হয়েছে, তার মৃত্যুর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘নৈতিকভাবে দায়ী’।
এদিকে দুই প্রধানমন্ত্রী নৌ–পাহারার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে রুশ জাহাজ পর্যবেক্ষণের তথ্যও নেবেন। এর মধ্যে গোয়েন্দা জাহাজ ইয়ানতারও রয়েছে। সম্প্রতি আরএএফের পাইলটদের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে লেজার ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে এই জাহাজটি। তবে রাশিয়া ইয়ানতারকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ‘সমুদ্রগবেষণা জাহাজ’ বলে দাবি করে থাকে। অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, ইউরোপীয় পানিসীমায় ঘোরাঘুরির আড়ালে এ জাহাজের মূল লক্ষ্য আসলে সমুদ্রতলের কেবল নেটওয়ার্কের মানচিত্র তৈরি করা।
বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের তথ্য ও যোগাযোগব্যবস্থা সমুদ্রতলের কেবল নেটওয়ার্কের ওপরই নির্ভরশীল। পাশাপাশি উত্তর সাগরের তলদেশ দিয়ে নরওয়েসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তেল–গ্যাস পাইপলাইন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নরওয়ের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নাম অনুসারে চুক্তিটির নাম রাখা হয়েছে ‘লুনা হাউস অ্যাগ্রিমেন্ট’। চুক্তি সইয়ের সময় নরওয়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোরে ও স্যান্ডভিক বলেন, দুই দেশ ‘এখন থেকে একসঙ্গেই নিজেদের রক্ষা করবে’। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলির সঙ্গেই তিনি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, এ অঞ্চলে দুই দেশের অন্তত ১৩টি সাবমেরিন–বিধ্বংসী জাহাজ যৌথভাবে পরিচালিত হবে।
গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মাঝের সমুদ্রপথে রুশ নৌচলাচল নজরে রাখাই হবে এ বহরের কাজ। পাশাপাশি এসব জাহাজ ব্রিটেনের যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতলের কেবল ও পাইপলাইনেও নিরাপত্তা দেবে।
