অনলাইন ডেস্ক : জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৩৩০ আলোকবর্ষ দূরে একটি নক্ষত্র আকারের ধুলোর মেঘ শনাক্ত করেছেন। দুটি এক্সোপ্ল্যানেটের মধ্যে একটি প্রচণ্ড সংঘর্ষের জেরে এরকম মেঘমালা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কথিত ধূলিকণার মেঘের ইনফ্রারেড আভা বিশ্লেষণ করেছেন। যদিও হোস্ট নক্ষত্রের আলো পরিবর্তনের সাথে সাথে এই ধূলিকণার মেঘ আসতে আসতে ফিকে হতে শুরু করেছে। তবে এই তথ্যগুলির সাহায্যে, আমরা জানতে পারবো এক্সোপ্ল্যানেটের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ কি।

এটি আমাদের নিজস্ব সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান করতে পারে এবং KIC 8462852 বা Boyajian’s Star এর মতো নক্ষত্রের উপর আলোকপাত করতে পারে, যা নিয়ে খুব বেশি তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী এভারেট শ্লাউইন বলেছেন, “আমরা ধূলিকণার ইনফ্রারেড আভা এবং মেঘ যখন নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায় তখন ধূলিকণার যে অস্পষ্টতা দেখা যায় তা শনাক্ত করতে পেরেছি এই প্রথমবার।” যে হোস্ট তারকাটি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা সেটির বয়স ১০ মিলিয়ন বছর, নাম HD 166191। তবে তারকাটির গঠন প্রক্রিয়া এখনো চলছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

নক্ষত্রগুলি জমাটবাঁধা গ্যাসের মেঘ থেকে তৈরি হয়, এরপর ঘূর্ণায়মান নক্ষত্রটি আশেপাশের মেঘ থেকে আরও উপাদান সংগ্রহ করে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

একবার নক্ষত্রের গঠন শেষ হয়ে গেলে, যা অবশিষ্ট থাকে তা একটি গ্রহতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান গঠন করতে পারে। এই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে একটি তারকাকে প্রচুর সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এটা মনে করা হয় যে আমাদের চাঁদ যখন তৈরি হয়েছিল যখন সৌরজগতের অন্য গ্রহেরা পৃথিবীতে আঘাত করেছিল। স্টুয়ার্ড অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেট সু-এর নেতৃত্বে, গবেষকদের একটি দল HD 166191-এর ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণ করতে এখন স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন।

এই টেলিস্কোপ মারফত ধূলিকণার মেঘ ভেদ করে তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলি দেখতে পাওয়া যায়। দেখা যায় ধূলিকণা দ্বারা শোষিত এবং পুনরায় নির্গত তারার আলো কিভাবে ইনফ্রারেডে উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়। ২০১৫ থেকে ১৯ এর মধ্যে গবেষকরা নক্ষত্র থেকে ১২৬ টি ডেটাসেট সংগ্রহ করেছেন, বিশেষভাবে ধূলিকণার মেঘ গ্রহের সংঘর্ষের ফলাফল হতে পারে। মাল্টি-ওয়েভলেংথ ট্রানজিট ডেটা এটি নিশ্চিত করেছে: দুটি প্ল্যানেটসিমাল কিভাবে একে অপরকে আঘাত করে মহাকাশের সর্বত্র ধুলো ছড়িয়েছে।

বিজ্ঞানীদের দলটি গণনা করে দেখেছে যে সংঘর্ষটি মহাকাশে হয়েছে তার জন্য দায়ী ৪০০-৬০০ কিলোমিটারের ব্যসের মধ্যে অবস্থিত দুই বামন গ্রহ। প্রাথমিক সংঘর্ষে এত তাপ উৎপন্ন হয় যে কিছু উপাদান বাষ্প হয়ে যায়। অবশিষ্ট অংশগুলি টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যায় এবং ধূলিকণা তৈরী করে। তবে ধুলোর মেঘগুলি অদ্ভুতভাবে ম্লান হয়ে যাওয়া তারাগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে, তবে এটি আমাদের একটি সম্পূর্ণ গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়াগুলিকে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে। এগুলি আমাদের জানতে সাহায্য করে যে আমাদের সৌরজগৎ একদিন কিভাবে তৈরী হয়েছিল। অর্থাৎ একটি নক্ষত্রের পাশে কিভাবে জন্ম নিয়েছিল গ্রহগুলি। HD 166191 তে আরো কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় কিনা এখন সেদিকেই নজর রেখেছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: www.sciencealert.com