সোনা কান্তি বড়ুয়া : বৌদ্ধ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ইউরোপীয়ষন ও আমেরিকান স্ত্রী ও পুরুষ দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন! বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল) নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ২০২১ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন! ইতোপূর্বে নাস্তিক হিসেবে পরিচিত মার্ক জাকারবার্গ স¤প্রতি এক পোস্টে জানিয়েছেন, তার জীবনে ধর্মের প্রভাব পড়ছে, এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক পোস্ট। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী স¤প্রতি এক সংক্ষিপ্ত পোস্টে বলেন, “প্রিসিলা, ম্যাক্স আর আমার পক্ষ থেকে শুভ বড়দিন এবং শুভ হানুক্কাহ-র শুভেচ্ছা।” তার এক ভক্ত ওই পোস্টে তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্তব্য করেন, “আপনি কি একজন নাস্তিক নন?” নাস্তিকতা থেকে সরে বৌদ্ধ ধর্মের!

জাকারবার্গ এই মন্তব্যে সাড়া দিয়ে লেখেন, “না। আমি ইহুদি হিসেবে বেড়ে উঠেছিলাম আর তারপর আমি এমন কিছু সময় কাটিয়েছি, যেখানে অনেক কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” জাকারবার্গের স্ত্রী বৌদ্ধ ধর্মালম্বী আর জাকারবার্গও একই ধর্মের অনুসারী হতে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে চীন সফরে জাকারবার্গ দেশটির শিয়ানে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড গুজ প্যাগোডা-তে এক প্রার্থনাতেও অংশ নেন। “প্রিসিলা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এবং সে আমাকে তার সঙ্গে প্রার্থনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বৌদ্ধধর্ম একটি আশ্চর্যজনক ধর্ম আর দর্শন। সময়ের সঙ্গে আমি এই সম্পর্কে আরও জেনে চলেছি। আমি আশা করছি, এই ধর্মের মূল বিশ্বাস সম্পর্কে খুব দ্রুত আমি বুঝতে পারব”-প্যাগোডার সামনে হাঁটু গেড়ে বসা এক ছবি সংবলিত পোস্টে তিনি এই কথা লেখেন।”

অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মতে “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।” বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ (টাইম ম্যাগাজিন মতে) অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ( ১৮৭৯-১৯৫৫), “Science and Religion” ২২৫ নম্বর প্রবন্ধ (১৯৪১) নিউইয়র্কে বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম বিষয়ক সম্মেলনে উক্তি, “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।” SCIENCE without RELIGION is lame, Religion without Science is blind” সূত্র: আইনস্টাইনের কাল, প্রদীপ দেব, পোষ্ট ডক্টরেল, RMIT (Royal Melbourne Institute of Technology, Melbourne, Australia).!

চলমান আমেরিকান সমাজে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বৌদ্ধদর্শনের মূল্যায়ণ করেছেন “Among religions, only Buddhism emphasized the importance of the scientific outlook in dealing with problems and religion. In his ‘Out of my Later Years’ Albert Einstein explained, ‘The religion of the future will be a cosmic religion. It should transcend a personal God and avoid dogma and theology. Covering both the natural and the spiritual, it should be based on a religious sense arising from the experiences of all things, natural and spiritual, as a meaningful unity. Buddhism answers this description.( Out of my later years by Albert Eienstein).”

ব্রিটেনের ম্যাজিস্ট্রেট থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ (১৮৪৩-১৯২২) বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে ইংরেজি ভাষায় পালি বৌদ্ধ দর্শন চর্চা, অনুবাদ ও লন্ডনস্থ “পালি টেক্সট সোসাইটি” প্রতিষ্ঠার জন্য অতি বিখ্যাত হয়ে আছেন। পালি -ইংরেজী সাহিত্যে এক অনন্য অবদানকারী দিক্পাল থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ {Thomas William Rhys Davids}(১৮৪৩-১৯২২) তিনি ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এসেক্স কাউন্টির কোলচেস্টার- এ ১২ মে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন থমাস উইলিয়ম ডেভিডস্ ছিলেন একজন বিখ্যাত পাদ্রী ও মাতা ছিলেন সানডে স্কুলের শিক্ষিকা। মি. রিস্ ডেভিডস্ ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেবার লক্ষ্যে ব্রেসলউ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক এ.এফ. স্টেনল্জের অধীনে ‘সংস্কৃত’-এ পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি অধুনা শ্রীলঙ্কায় (তদানীন্তন ‘সিলোন’) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ ছিলেন পালি শাস্ত্রের মহাপন্ডিত এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত পালি টেক্সট সোসাইটির মাধ্যমে ত্রিপিটকের প্রায় সমগ্র পুস্তকাবলী অনূদিত হয়েছে (নিপুন বড়ুয়া)

১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ Danish Scholar ফৌসবল সম্পাদিত জাতক প্রথম খন্ডের ইংরেজি অনুবাদ করেন “বুদ্ধিস্ট বার্থ স্টোরিজ” {Buddhist Birth Stories} নামে এবং পরবর্তীতে অধ্যাপক ম্যাক্স মূলার কৃত “সেক্রেড বুকস্ অব দ্য ইস্ট” {Sacred Books of the East}এর অন্তর্গত দ্বিতীয় ভাগ, যেটি বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক, সেটি হতে সূত্র পিটকের নির্বাচিত অংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৮৮১ সালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ হিলবার্ট লেকচারস্ দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন। তাঁর লেকচারের বিষয় ছিলো- “দ্য অরিজিন এন্ড গ্রোথ অব রিলিজয়ন এজ ইলাউসট্রাটেড বাই সাম পয়েন্টস্ ইন দ্য হিস্টোরি অব ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজম” {The origin and Growth of Religion as illustrated by some points in the History of Indian Buddhism}।

ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি এবং আমেরিকার প্রাচ্যবিদ্যায় আগ্রহী পন্ডিতদের সমন্বয়ে ও সহায়তায় ‘আদি ইংলিশ টেক্সট সোসাইটি’র {The Early English Text Society (EETS} আদলে ব্রিটেনের থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পালি টেক্সট সোসাইটি {Pali Text Society} এবং এটির উদ্দেশ্য হলো পালি পুস্তক সমূহের অনুবাদ, প্রচার ও প্রসার।

পালি টেক্সট সোসাইটি প্রতিষ্ঠা বিষয়ে তিনি বলেন- “আদি বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র বইগুলো আমাদের জন্য বিশ্বের ইতিহাসের একমাত্র ধর্মীয় আন্দোলনের ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণ করেছে যেগুলো খ্রিস্টধর্মের সাথে ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। ২০ ১২ সালে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী মহামান্য জর্জ অসবোর্ন রাজনীতির রাজসিংহাসন ত্যাগ করে বেীদ্ধ ভিক্ষু হয়েছেন এবং নেপালের গভীর জঙ্গলে ধ্যান প্রশিক্ষণ বৌদ্ধ মন্দিরে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ উক্ত সংবাদ পাঠে পুলকিত এবং আনন্দ বোধ করছেন যে, বাংলাদেশের পাহাড়পুরের মতো কানাডায় ১,৭০০ একরের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হচ্ছে অহিংসা পরম ধর্ম মানব সমাজে প্রচারের জন্যে।

ফ্রান্সে ফরাসী নাগরিক বেীদ্ধ ভিক্ষু হয়েছেন (উপসম্প্দা গ্রহণ)! বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ফরাসী নাগরিক ডেভিড জুলিয়ান গত ১৮ নভেম্বর (২০২১) রবিবার ফ্রান্সের সেইন্ট ডেনিসস্থ কুশলায়ন বুড্ডিষ্ট মেডিটেশন সেন্টারে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথমে প্রব্রজ্যা এবং পরে উপসম্প্দা গ্রহণ করেন (সংবাদ দাতা রাসেলবড়ুয়া)। তার নামকরন করা হয় মেত্তা জ্যোতিঃ ভিক্ষু। বিশেষ সুত্রে জানা যায় তার পরিবার ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী হয়ে ওঠেন। তার সর্বশেষ প্রতিফলন এ শুভ উপস¤প্রদা। এই পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে পন্ডিতপ্রবর ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, ভদন্ত জ্যোতিঃসার থের সহ প্রাজ্ঞ ভিক্ষু সংঘ, ডেভিড জুলিয়ানের মা-বাবা, বোন এবং এই মন্দিরের দায়ক-দায়িকারা উপস্থিত ছিলেন।

টাইম ম্যাগাজিনে সর্ব প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল : “আমেরিকানদের সাথে বৌদ্ধধর্মের আন্তরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক” (আমেরিকানস ফ্যাসসিনেশান উইথ বুড্ডিজম) এবং মহামান্য দালাইলামর নিকট সশ্রদ্ধ চিত্তে আমেরিকান স্ত্রী ও পুরুষ দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল)। American সরকার ও জনতা নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধভিক্ষু দালাইলামাকে সশ্রদ্ধার সাথে আমেরি কান সরকারের দুর্লভ সুবর্ণ পুরস্কার প্রদান করেছেন।

“তিব্বতে সাত বছর” শীর্ষক সিনেমায় অভিনয় করেছেন হলিউডের বিখ্যাত নায়ক ব্রাড পিট। আন্তরীকভাবে হলিউডের বিভিন্ন কোম্পানি তিব্বত এবং বৌদ্ধসংস্কৃতিকে নিয়ে সিনেমার গল্প ও প্লট লেখা শুরু করেছেন। ১৯৮৭ সালে (১৯ থেকে ২৬ নভেম্বর) আমেরিকার লজ এ্যানজেলস মহা নগরীতে বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব সঙ্ঘের ষোড়শ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আমেরিকার বৌদ্ধ সংঘটনসমূহকে বৌদ্ধ শাসন হিতকর কর্মে উজ্জীবিত করেছে।
আমেরিকার মহামানবের সাগরতীরে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস! “আমেরিকান এরিজোনা গেজেট” শীর্ষক জনপ্রিয় পত্রিকার মতে, (April 5, 1909) পূজনীয় চীনা বৌদ্ধভিক্ষুসংঘ্ এরিজোনার আদিবাসী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যেই প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ গুহা ও বৌদ্ধমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাহা আজও বিরাজমান। ১৯০৯ সালে, April ৫ উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে এরিজোনার গেজেট পত্রিকায় “Before Colombus, Buddhist Monks discovered America” প্রকাশিত হবার পরও আমরা কেহ উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে মাথা ঘামাইনি? আজ কেন আবার ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আমাকে “সত্য মেব জয়তে” উপদেশ বাক্যটি নিয়ে (আমি) পাঠকদের দরবারে হাজির হয়েছি। বৌদ্ধভিক্ষুগণই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন! কলম্বাসের পূর্বে এরিজোনার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরে আমেরিকা আবিস্কারের অজানা ইতিহাস!

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানব সভ্যতায় বৌদ্ধধর্মের ধ্যান পদ্ধতির দুর্লভ অবদান নিয়ে টাইম ম্যাগাজিন চলমান আমেরিকান সমাজে বৌদ্ধদর্শনের মূল্যায়ণ করেছেন। প্রসঙ্গত: বাঙালি জাতির প্রথম গ্রন্থ চর্য়াপদের বিষয়বস্তু ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং বিশ্বমানবতাবাদী সর্বকালের বৌদ্ধ দর্শন। একুশে ভাষা আন্দোলনের আলোকে বাংলা ভাষা এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে “কত প্রাণ হল বলিদান / লেখা আছে অশ্রুজলে।” ঢাকার আমেরিকা দূতাবাস আমার লেখা ইংরেজি বই “সত্যের সন্ধানে (IN QUEST OF TRUTH) শীর্ষক বৌদ্ধ উপন্যাস পাঠে সন্তুষ্ঠ হয়ে বিগত ১২ মে ১৯৮৯ সালে (আমাকে) আমেরিকা ভ্রমনের সরকারি নিমন্ত্রন পত্র আমার ঠিকানায় প্রেরন করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী সমিতি আমার লেখা ইংরেজি বই ”আনবিক যুগে বৌদ্ধ চিন্তা ও ধ্যান প্রসঙ্গ (Buddhist thought & Meditation in the Nuclear AgeÓ) শীর্ষক বৌদ্ধ গ্রন্থের ত্রিশ হাজার কপি আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস সহ বিশ্বজুড়ে পরিবেশন করেছেন।

দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। পালি ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মূখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক একটি জাতির পরিচয় ও অস্তিত্বের অভিনব স্বাক্ষর। নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে সম্রাট অশোক ২৩০০ বছর পূর্বে ‘বৌদ্ধ ত্রিপিটক সহ সম্রাটের ভারতীয় বৌদ্ধ মিশন, সম্রাট অশোকের পুত্র বৌদ্ধভিক্ষু মহেন্দ্র (মহিন্দা) এবং কন্যা ভিক্ষুনী সংঘমিত্রা বঙ্গবীর বিজয় সিংহের সিংহল দ্বীপে (শ্রীলঙ্কা) প্রেরণ করলেন বৌদ্ধধর্ম ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মানসে।

ভূপালে সাঁচীর তোরনদ্বারের দক্ষিণ তোরণের পশ্চিমের স্তম্ভের মাঝের দুটো প্যানেলে সেই মহামতি সম্রাট অশোকের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় মহাবোধিবৃক্ষে বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম আজ ও অ¤øান হয়ে আছে। ইতিহাসের দোলাচলে অহিংসার বিশ্বমৈত্রীর সাধনায় আমেরিকাস ফ্যাসসিনেশান উইথ বুড্ডিজম এবং মহামান্য দালাইলামর নিকট আমেরিকান স্ত্রী ও পুরুষ দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল)। তিব্বত থেকে ১৯৫৬ সালে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধি মহামান্য দালায় লামা ভারতে এলেন। ১৯৮৯ সালে আমেরিকায় আমন্ত্রিত হয়ে এলেন এবং বৌদ্ধধর্ম, ধ্যান এবং অহিংসা পরম ধর্ম সম্বন্ধে বিবিধ ভাষন আমেরিকার সাধারন জনতা সহ হলিউডের নায়ক নায়িকাগণকে গভীরভাবে আকর্ষন করেছেন।

এই মর্মে উত্তর আমেরিকায় আমরা বাংলাদেশী বৌদ্ধদের কর্ত্তব্য কি? Bangladeshi Buddhists in North America. (১৭ জুলাই ২০১৫) আমেরিকার সাপ্তাহিক ঠিকানায় ”নিউইয়র্কে দুই দিন ব্যাপী বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সম্মেলন” শীর্ষক সংবাদ আমরা আনন্দিত হয়েছি। উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশী বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সন্মেলন! ২০ জুলাই ২০১৩ বোষ্টন ম্যাকলিন মিডল স্কুল হলে স্থানীয় প্রবাসী উত্তর আমেরিকা বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সন্মেলন ২০১৩ আমেরিকা! ২০১২ সালে ২৯ শে সেপ্টেম্বর ইসলামি জঙ্গীরা রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় বৌদ্ধ জনপদে আগুন দিয়ে তান্ডব দাহন করেছে।

২০১৩ সালে ৭ই জুলাই বুদ্ধ গয়ায় বোমা বিস্ফোরন হল (by Rohingya Terrorists) এবং বৌদ্ধ জগত বিস্ময়ে হতবাক! বুদ্ধ গয়ায় বোমা বিস্ফোরণের এক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকায় মানবতার জয়গানে বিগত ১৯ এবং ২০ জুলাই ২০১৩ বোষ্টন বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট এসোসিয়াশনের উদ্যোগে স্থানীয় সুমনোরম ম্যাকলিন মিডল স্কুল হলে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সহযোগীতায় উত্তর আমেরিকা বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সন্মেলন ২০১৩ মহাসমারোহে সমাপ্ত হয়েছে। বহু দূর প্রবাসে বৌদ্ধ সংস্কৃতির শিকড় ছুঁয়ে থাকার প্রয়াসে বৌদ্ধ জাতির এই মহান সন্মেলনে আমেরিকা এবং কানাডার বিভিন্ন শহর থেকে বিপুল বৌদ্ধ জনতার সমাগমে আকাশ বাতাসের কোলাহল বিদীর্ণ করে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি” ধ্বনিত হয়। উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশী বৌদ্ধ সম্মেলনদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন হল ২০১৫ সালের ৮ ও ৯ আগষ্ঠ। আমরা উক্ত দুই বৌদ্ধ সংঘটনদ্বয়কে অহিংসা ও মৈত্রীতে একতাবদ্ধ হয়ে নিউইয়র্কে বৌদ্ধ সম্মেলন পরিচালনার অনুরোধ করছি। পরিশেষে অচিরে এর একটা ঐক্য সাধনায় মৈত্রীপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে এ কামনা করছি। সুখী হও সুখী হও / এ মৈত্রী ভাবনা । / দিবা নিশি হিত সুখ করিনু প্রার্থনা।

বৌদ্ধ আদর্শে উজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়ায় মহামূল্যবান বৌদ্ধ জাদী বুদ্ধমুর্তি স্থাপন! বৌদ্ধ দর্শণের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের বেনডিগোতে মহামূল্যবান তথা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২ কোটি টাকার দামী জাদী (সবুজ রঙের) পাথরের বুদ্ধমুর্তি স্থাপন করা হয়েছে যা ৩ দিনের (১৮, ১৯ , ২০ মে ২০১৮) চলমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট ধনী ইয়ান গ্রিন এই বুদ্ধমুর্তি স্থাপনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখেছেন। ৭২ বছরের ধনী ইয়ান গ্রিন ৬০ এর দশকে যৌবনকাল কাটিয়েছিলেন নারী, মদ ও জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে। এরপর একদিন ভারত ভ্রমনে গিয়ে তিনি সম্পুর্ন পরিবর্তন হয়ে যান। সেখানে জীবনে ধর্ম ও আধ্যাত্বিক জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।

তিনি ভিক্টোরিয়ার স্যান্ডরাস্ট শহরে ৯০ হেক্টরের সম্পত্তিতে গড়ে তোলেন একটি বৌদ্ধ মহাকমপ্লেক্স। সেখানে সেখানে তিনি অতীশ সেন্টার ও তিব্বতী বৌদ্ধধর্মীয় ধ্যান কেন্দ্র স্থাপন করেন । বর্তমানে এখানে ৫০ ফুট বাই ৫০ ফুট একটি বৌদ্ধ স্তুপা নির্মানের কাজ চলছে ও বিশাল আকৃতির জাদী পাথরের বুদ্ধমুর্তি স্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে । এখন এখানে হাজার হাজার মানুষ আসছে যাদের ৬০% অবৌদ্ধ।

ব্রিটেনের থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ ১৮৯৪ সালে তিনি ক্যারোলিন অগাস্তা ফোলে Caroline Augusta Foley} (১৮৫৭-১৯৪২) নামীয় এক বিদূষী রমণীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসারে ভিভিয়ান ব্রায়ানহিল্ড ক্যারোলিন ফোলে রিস্ ডেভিডস্ {Vivien Brynhild Caroline Foley Rhys Davids} (১৮৯৫-১৯৭৮), আর্থার রিস্ ডেভিডস্ {Arthur Rhys Davids} (১৮৯৭-১৯১৭) এবং নেস্টা ইন্ড {Nesta Enid} (১৯০০-১৯৭৩) নামে তিনটি সন্তান ছিলো। উল্লেখ্য, মি. রিস্ ডেবিডস্ মহাশয়ের বিদূষী পতœী ক্যারোলিন অগাস্তা ফোলে মহাশয়া বিয়ের পরে মিসেস্ রিস্ ডেভিডস্ নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন এবং তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পালি হতে ইংরেজীতে গ্রন্থ অনুবাদ করেন ও বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন-ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

১৯৮৯ সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধভিক্ষু দালাইলামাকে সশ্রদ্ধার সাথে আমেরিকায় আমন্ত্রিত হয়ে এলেন এবং বৌদ্ধধর্ম, ধ্যান এবং অহিংসা পরম ধর্ম সম্বন্ধে বিবিধ ভাষন আমেরিকার সাধারন জনতাসহ হলিউডের নায়ক নায়িকাগণকে গভীরভাবে আকর্ষন করেছেন। বিশ্ব ইতিহাস বিজয়ী বাংলা ভাষার জনক এবং বিশ্বসভ্যতার সর্বপ্রথম পথ প্রদর্শক গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা এবং বুদ্ধপূজার মাধ্যমে ! বিগত ১৯ এবং ২০ জুলাই ২০১৩ বোষ্টন বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট এসোসিয়াশনের উদ্যোগে স্থানীয় সুমনোরম ম্যাকলিন মিডল স্কুল হলে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সহযোগীতায় উত্তর আমেরিকা বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সন্মেলন ২০১৩; মহাসমারোহের সফলতার সময় আমরা উক্ত শুভ সংবাদের জন্যে অপেক্ষা করেছিলাম।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!