হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।

সংবাদপত্র কিংবা বস্তুনিষ্ঠ, মননশীল সাংবাদিকতার পথিকৃত ও পূর্বসূরীরা একে একে সবাই বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। এখন সাংবাদিকতার রূপ বদল হয়েছে হস্তান্তরিত হয়েছে কর্পোরেট জগতে। যেসব ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র এখনও রয়ে গেছে, সেসব চলছে ধুঁকে ধুঁকে। সেই সওগাত-সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন থেকে আমার আব্বা সাংবাদিক-সাহিত্যিক (মরহুম আবদুল হাই) এবং আরও সব বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা আজ আর নেই। উপমহাদেশের সাংবাদিকতার সূতিকাগার ছিলো কলকাতা। মওলানা আকরাম খাঁ প্রতিষ্ঠিত আজাদ পত্রিকা বা মোহাম্মদী তখন চলতো বাঘা বাঘা সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও কবিদের হাত ধরে। অন্যদিকে মুসলিম সাংবাদিকতার বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো কংগ্রেস-এর মুখপত্র ‘শনিবারের চিঠি।’

কল্লোল পত্রিকা ঘিরে রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে সৃষ্টি হয়েছিল কল্লোল যুগ, যেখানে সম্পৃক্ত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯২৩ সালে প্রবর্তিত কল্লোল পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন দীনেশরঞ্জন দাশ ও গোকুলচন্দ্র নাগ। কল্লোল পত্রিকার আবহে দ্রুত অনুপ্রাণিত হয় প্রগতি, উত্তরা, কালিকলম, পূর্বাশা ইত্যাদি পত্রপত্রিকা। অন্যদিকে আধুনিকতার নামে যথেচ্ছাচারিতা ও অশ্লীলতার প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে এই রকম অভিযোগ এনে শনিবারের চিঠি পত্রিকাটির ভিন্ন বলয় গড়ে ওঠে মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ সি. চৌধুরী প্রমুখের সক্রিয় ভূমিকায়।

কবিতার ক্ষেত্রে যাদের নাম কল্লোল যুগের শ্রেষ্ঠ নায়ক বিবেচনায় প্রচারিত তারা হলেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে। এই পাঁচজন বিশিষ্ট কবিকে একসাথে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাÐব। এ পঞ্চপাÐবই ছিলেন মূলত কল্লোল যুগের কাÐারি। তবে কাজী নজরুল ইসলাম, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, সঞ্জয় ভট্টাচর্য, অবনীনাথ রায় প্রমুখ অনেকেরই ভূমিকা কোনো অংশে খাটো করে দেখবার অবকাশ নেই।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সৃষ্টি হয় দি পাকিস্তান অবজারভার। যেখানে শুরুতেই আমার পিতা সহকারি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ঘটনাক্রমে পাকিস্তান অবজারভার ভাষা আন্দোলনের পক্ষে আবস্থান নিয়েছিলো। আমার পিতা কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে মোহাম্মদ মোদাব্বের সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক মিল্লাতের দায়িত্ব নেন সম্পাদক হিসেবে। মিল্লাত একসময় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেলে আব্বা যোগ দেন অবজারভারে। পরবর্তীতে তিনি সংবাদ পত্রিকাসহ নানা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।

দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি ১৯৭২ সালে পুনরায় বাংলাদেশ অবজারভারে যোগ দেন। কলকাতায় আজাদ পত্রিকায় আমার পিতাসহ অনেকেই নিয়মিত লিখতেন ও চাকরি করতেন। তাদের মধ্যে রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদ অন্যতম ছিলেন। সংবাদে শহীদুল্লাহ্ কায়সার, মাফরুহা চৌধুরী, লায়লা সামাদ ও আমার পিতা একই কক্ষে বসে সাংাদিকতা করতেন।
আমার আব্বা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে যারা জানতেন তারা ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী, আবদুল গণি হাাজারী, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আবু জাফর শামসুদ্দীন, ওবায়েদ-উল হক প্রমুখ।

আমার পিতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন যিনি, তিনি অবজারভারে আব্বার সহকর্মী বরেণ্য সাংবাদিক আবদুর রহিম। ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ তিনিও চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। অবসান হলো একটি সোনালি অধ্যায়ের। তিনি আমার পিতাকে শ্রদ্ধা করতেন মনের গভীর থেকে। অবজারভারের প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক চৌধুরীর সাথে আমার পিতার মনোমালিন্য হয়। আব্বা অবজারভার ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই পদমর্যাদার একটা ঘাটতি থেকে গিয়েছিলো। আবার অধীনস্থরা আব্বাকে পীরের মতো শ্রদ্ধা করতেন। সেসব অন্য ইতিহাস। আমার আজকের লেখা সাংাদিক আবদুর রহিম সাহেবকে ঘিরে, যিনি আমাকে নিজ সন্তানের মতোই ¯েœহ করতেন। আজ তার সম্পর্কেই লিখবো।

সাংবাদিক আবদুর রহিম ২৭ জানুয়ারি সকালে রাজধানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি তিন ছেলে, অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য, সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অবজারভারের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন রহিম সাহেব। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৫ জুলাই নোয়াখালী জেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক মিল্লাত, দি এনভয়, অবজারভারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮০ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৫ সালের ১৫ জানুয়ারি আমার পিতা প্রয়াত হন। অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের মধ্যে রহিম সাহেবও কয়েকবার আসেন আমাদের বিত্রমপুর হাউসের বাসায়। শুধু তাই নয়; তিনি নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিতেন। তিনিই আমাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সহকারি প্রযোজক গিসেবে খণ্ডকালিন চাকরির সুযোগ করে দেন। আর নিয়মিত খোঁজ নিতেন সিনিয়র সাংবাদিত মো. মাহফুজুর রহমান ও আশরাফ আলী। তারা দুজনেই প্রয়াত হয়েছেন। সেইসময়, মানে আমাদের দুর্দিনে আব্বার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের সিনিয়র অনেক সাংবাদিক এগিয়ে আসেননি। বরং আমার পিতার চিরশত্রু হামিদুল হক চৌধুরী আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। আমি জানিয়েছিলাম যে, আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।

আবদুর রহিম আংকেল চিত্রালীতে নিয়মিত কলাম লিখতেন ‘নিশাচরের নিশিদিন’ নামে। আব্বা বিগত হবার পর তিনি পুরো একটা এপিসোড আমার আব্বার স্মৃতিচারণ করে কলাম লিখেছিলেন। সেই অংশটুকু এখনও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। একটা সময় তিনি সরকারের প্রিন্সিপাল ইনফরমেশন অফিসার (পিআইডি) পদে যোগ দিয়েছিলন। আমি তখন পরিবেশ অধিদপ্তরে সহকারি পরিচালক হিসেবে যোগদান করি। তথ্য বিষয়েই আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তার সাথে দেখা করেছিলাম। এরপর তিনি লন্ডনে পাড়ি দেন বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হয়ে।

তারপর আর বহুবছর যোগাযোগ ছিলো না। একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও আমার দুয়েকজন ওয়েলউইশার আমাকে তাগাদা দিচ্ছিলেন আমার পিতার জীবনী লেখার জন্য। আমি কিছুটা অগ্রসরও হয়েছিলাম। প্রখ্যাত সাংবাদিক কে. জি. মোস্তফা ও মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্র সাথে দেখা করি। মাহফুজউল্লাহ্ আংকেল প্রথিতযশা সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এর জামাতা। তিনি তখন দৈনিক বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। তিনি আমার পিতা সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। অকুন্ঠ প্রশংসা করলেন সাংবাদিকতায় আমার পিতার মূল্যবান অবদান সম্পর্কে। কে. জি. মোস্তফা আংকেল তখন মুক্তকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তিনি আমাকে নিয়মিত লিখতে বললেন তার পত্রিকায়। তাতে অসুবিধা ছিলো না। আমি তখন পুরোপুরি লেখালেখিতে মগ্ন। আর আমার লেখা দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিলো। আমার কর্মক্ষেত্রের ধরনটাই ছিলো লেখালেখির। তবে পত্রিকায় আমি বিশেষভাবে গল্প লিখতাম আর বই সমালোচনা করতাম। তো মোস্তফা আংকেলের অনুরোধে আমি পরিবেশবিষয়ে একটা লেখা দিলাম। সেটা পত্রিকার একটা পাতার প্রায় অর্ধেকটাজুড়ে ছাপা হলো। এরপর আমি সৃষ্টিশীল লেখায় ব্যস্ত হয়ে গিয়ে আংকেলের অনুরোধ রাখতে পারলাম না।

২০১৬ সালে আমি রহিম আংকেলের গুলশান ১ এর বাসায় যাই। তিনি আমাকে দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। সমস্ত খোঁজ খবরাদি নিলেন। তিনি বই আকারে প্রকাশিত ‘নিশাচরের নিশিদিন’ ও ‘হাইওয়ে’ নামের একটি গ্রন্থ আমাকে ও আমার স্ত্রী’র নাম উল্লেখ করে বিশেষভাবে লিখে দিলেন। আমি ক্যানেডায় সেটলড হয়েছি শুনে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।

রহিম আংকেলের বাসায় আমি দ্বিতীয়বার পদার্পণ করি সম্ভবত ২০১৭ সালে। আমি তাকে আমার পিতা সম্পর্কে কিছু লিখে দিতে বলি। তিনি আমাকে জানালেন আমি যেন ক’দিন পর গিয়ে লেখাটা নিয়ে আসি। লেখাটা যথাসময়েই পেলাম। তাতে এমন কিছু তথ্য ছিলো যা আমি নিজেও জানতাম না। খুব আহ্লাদিত হলাম।

তবে ইতোমধ্যে পটপরিবর্তন হলো। ভেবে দেখলাম, নিজ পিতা সম্পর্কে লেখাটা একপেশে ও আবেগাপ্লুত হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া, আমার পিতার এমন কিছু প্রজিীবনীতবাদী ও ব্যতিক্রমী কর্মকান্ড ছিলো, যা আমি নিজে লিখলে সেসব পাঠকেরা সঠিকভাবে রসাস্বাদন করতে পারবেন না। যেমন, পিতা সম্পর্কে রহিম আংকেলের লেখাটা পড়ে আমার কাছে উপজীব্য মনে হয়েছে। এমন সমসাময়িক আরও কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে আব্বা সম্পর্কে লেখা নিয়ে সেসব সংকলিত করলে আমার পিতার জীবনী পাঠকেরা সুন্দরভাবে গ্রহণ করবেন। আপাতত আমি নিজে আমার পিতা সম্পর্কে লেখার চিন্তাটা বাদই দিলাম।

কিন্তু একটা অভাবনীয় বিষয় ঘটে গেলো। ভৈরব সম্পর্কে অঞ্চলভিত্তিক একটা গ্রন্থ লেখার প্রস্তাব আসে। প্রস্তাবটা এলো ভৈরবের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক আলহাজ¦ রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে। আমাদের আদিনিবাস ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামে। যদিও আমরা জন্মেছি ও বড় হয়েছি ঢাকায়, দেশের বাড়িতে গিয়েছি কালেভদ্রে, তবুও একটা টান অনুভব করলাম। অবশ্যি ইতোমধ্যে ট্রেন টু ইন্ডিয়া বেস্টসেলিং বইটিা লিখতে আমি কয়েকবার ভৈরব গিয়েছি। স্থির করলাম ভৈরব সম্পর্কে বই লিখবো। তবে গতানুগতিক ধারায় নয়। ভৈরবের ইতিহাস ভাষা, সংস্কার, কৃিিষ্ট, জীবনযাত্রা ও ভৈরবের বিশিষ্ট মানুষদের সম্পর্কে আর ভৈরবের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সাহিত্যমানে ও ধারায় লিখবো। ভৈরবে কয়েকবার সফরে আমার সঙ্গী ছিলো রফিক ভাইয়ের ছেলে আইনজীবী রাকিব সরফুদ্দিন। রাকিবের গাড়িতেই আসা যাওয়া করতাম। ঘটনাক্রমে ঢাকায় আমরা ও রফিক ভাই পাশাপাশি থাকতাম। রাকিবের সাথে অনেকবছর যোগাযোগ ছিলো না নানা ব্যস্ততায় ও আমার ক্যানেডা পাড়ি দেবার ফলে।

আমি ভৈরব বা দেশের বাড়িতে যোগাযোগ না রাখলেও আমার পিতাকে ভৈরব, তথা সমগ্র কিশোরগঞ্জ জেলা ও নরসিংদীর অনেক প্রবীণ ব্যক্তিই চিনতেন। ভৈরবে যাতায়াতের ফলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার আর তাদের কাছে আমার পিতা সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পেলাম। পেলাম বাংলাদেশ অবজারভারের ভৈরব করেসপন্ডেন্ট আবদুল মতিন সাহেবকে। তিনি আব্বা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। আরও অনেককে পেলাম। এরমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরক্ারি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান সাহেব ছিলেন। যিনি ছোটোবেলায় আমার পিতাকে একজন অতিমানব বলে মনে করতেন। ট্রেনে চড়ে ঢাকায় এসে তিনি অবজারভার অফিসে এসে আব্বার সাথে দেখা করে যেতেন। আর ছিলেন রাকিবদের আত্মীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন ভাই। তার কাছে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য ও লেখা পেয়েছি।

আমি গ্রণথটির নাম দিলাম: ভৈরবপুরাণ: শেকড়ের সন্ধানে। এর একটি চ্যাপ্টার লিখেছি আমার পিতা সম্পর্কে। তিনি ভৈরবের একজন গর্ব ছিলেন, সেই হিসেবে। রহিম আংকেলের লেখাটাও সেখানে বসিয়ে দিলাম, যাতে আমার পিতা সম্পর্কে অনেক বিদগ্ধজনই অজানা অনেককিছু জানতে পারলেন। আমার উদ্দেশ্য সফল হলো। নিজেকে পুরোপুরি পিতার জীবনী লিখতে হলো না। যা লিখেছি কিছু আমি আর সিংহভাগই প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সাজানো। আমার এ কূল ও কূল দু’কূলই রক্ষা পেলো। ভৈরব পুরাণ বইটি ভৈরব, সংলগ্ন অঞ্চল ও পুরো কিশোরগঞ্জ, এমনকি নরসিংদী জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেললো। ঢাকা ও ভৈরব বইমেলায় ও অনলাইনে এর কাটতি ছিলো ইর্ষণীয়।

এর একটা কপি রহিম আংকেলকে দেয়ার কথা ছিলো। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আমি ফিরে গেলাম ক্যানেডায় আর রাকিব চাচ্ছিলো আমরা দুজনই যাই। সেটা হয়ে ওঠেনি নানা কারণে। বেলা গড়িয়ে গেলো।

২৭ তারিখে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন প্রিয় আংকেল। তার ফোন নাম্বারটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার বাসায় ২/৩বার গেলেও আমি আসলে মনে করতে পারছিলাম না রোড ও বাড়ির নাম্বার। হারিয়ে গেলেন তিনি চিরতরে। এটা ছিলো না শোধরাবার মতো একটি ভুল। এমন ভুল আমি জীবনে অনেক করেছি। আর যেন কোনো ভুল না করি আল্লাহ্ সেই তওফিক আমাকে দিন।

আল্লাহ্ রহিম আংকেলকে বেহেশতবাসী করুন।