ইউসুফ কামাল : রিয়া’র কথায় পুরোপুরি বিস্মিত হয়ে গেলো অভি। বল্লো, তোমার কথা তো অবিশ্বাস্য, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।
রিয়া বল্লো, প্রথম থেকেই আমার মা এর বিশেষ দোয়া ছিলো আমার উপর, আর তাই তো আমি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যেতে পেরেছিলাম।
আমার পড়ালেখা করার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিলো, বাবার প্রাথমিক বাধায় সেটা হয় নাই। কিন্তু পরবর্তিতে আমার বড় চাচাসহ পরিবারের সবাই আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে সার্বিকভাবে আমাকে সাহস যুগিয়ে গিয়েছিলেন।
বড় চাচা যে ভাবে আমার দিকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেটা আমি নিজে কখনো কল্পনাও করিনি। শেষ সময় পর্য্যন্ত নার্সিং কোর্সের এর সমস্ত ব্যায় উনি নিজে সামলেছেন।

উনিসহ বাকী সবার দোয়ায় আমি আজ এই পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পেরেছি।
কিন্তু বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে, তোমার সাথে আমার ন্যূনতম একটা যোগাযোগ থাকলে অন্তত তোমার জীবনটা এমন হতো না। এটা আমার চরম ব্যার্থতা, হয়তো আমি সত্যিই তোমাকে চিনতে পারিনি।
আমি আমার জেদকে বজায় রাখতে সব কিছু করেছি, সত্যিই আমি তখন অন্ধের মতো চলেছি। যখন বুঝতে পেরেছিলাম তখন অনেক অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।
আমাকে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

রিয়া’র কথায় অভি ওর দিকে সরাসরি তাকালো, বুঝতে চেষ্টা করলো ওর এই কথার মধ্যে আন্তরিকতা কতটুকু।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বল্লো, রিয়া এ কেমন অদ্ভূত এক ভালোবাসা নামক খেলায় আমরা মেতেছিলাম? বলতে পারো?
আমরা একজন অন্যজনকে কি সত্যিই ভালোবাসতাম? আমরা কি উভয় উভয়কে সম্পূর্ন রুপে বিশ্বাস করতাম?
অভি বল্লো, তুমিই না একদিন বলেছিলে, ভালোবাসার পূর্বশর্ত হলো বিশ্বাস। এক জন অন্য জনের উপর যদি বিশ্বাস স্থাপনই না করতে পারে তাহলে সেটা কি ভালোবাসা হলো?
মনে আছে কথাটা, নাকি ভুলে গেছো?

তুমি চলে যাওয়ার সময় আমাকে একবারের জন্যও জানিয়ে যাওনি, কিন্তু কেন? এ কথার উত্তরে তুমি কি বলবে?
অভি বল্লো, রিয়া এগুলো আমার কষ্ট। আমার মনের মধ্যে দীর্ঘদিন এই প্রশ্নগুলো জমাট বেধে ছিলো, ভেবেছিলাম যদি কোন দিন দেখা হয় আমি জানতে চাইবো, আমার ভুল কোথায় ছিলো?
দীর্ঘ দিন দূরে সরে থাকায় আমার কষ্টটা সয়ে গিয়েছিল। বলা নাই কওয়া নাই হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে গেলে।
রিয়া, তোমায় নিয়ে যে, কেউ চিন্তা করতে পারে, খুঁজতে পারে সেটা কি একবারও মনে হয়নি তোমার? শুধু বলো, আমার দিক থেকে কি এই সম্পর্কের মধ্যে কোন ঘাটতি ছিলো?

রিয়া, আমি নিজে কি সংসারী হয়েছি? নিজস্ব বলতে কোন সংসার তো আমার নাই, একাকীত্বের এই জীবনকেই আমি বেছে নিয়েছি।
কিন্তু কেন এমন হলো বলো?
একাকীত্বের এ জীবন বড়ই যন্ত্রণার, বড়ই কষ্টের। একটা শূন্যতার মধ্যে অহ দিন রাত্রি নিজেকে নিয়ে বসবাস করা যে কত কষ্টের, তা আমি বুঝেছি।
আপাতদৃষ্টিতে আমার তো ভালো থাকারই কথা, কিন্তু আসলেই আমি কি ভালো আছি? আমার তো এখন সব কিছু থাকার কথা, কিন্তু নাই কেন?
মেনে নিলাম তুমি আমাকে দুই বছরের সময় দিয়েছিলে, আমার পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু আমি তো সময় মতো ঠিকই সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম, কিন্তু শেষে কি হলো? বলো?
কথাগুলো বলে অভি থামল। তাকিয়ে দেখলো রিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
রিয়া মিলিয়ে দেখলো অভি’র কথার সাথে বাস্তবের মিল গুলো একদম পরিস্কার। সব সত্যি কথাই তো অভি বলেছে। আসলেই ওর তো কোন দোষ নেই।

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে মনে হলো অভি একটু হাপিয়েও উঠেছে। রিয়া ভালো করে অভি’র দিকে তাকিয়ে দেখলো বয়স ও শরীরের প্রতি অযতেœর কারণে শরীর কিছুটা ভেংগে পড়েছে, চুলে ভালোই পাক ধরেছে।
প্রচন্ড মায়া হলো রিয়া’র।
আবারও নিজের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ হলো, কেন সে এভাবে অভি’র সাথে দুরত্ব বজায় রেখেছিলো?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অভি বল্লো, আমার অবস্থা তো তুমি সচক্ষেই দেখে গেলে এখন বলো, তুমি কেমন আছো?
রিয়া বল্লো, তোমার কি মনে হয়, আমি কেমন আছি। পুরোপুরি সংসারী হয়ে গিয়েছি তাই না!

অভি বল্লো, কয়েক বছর আগে তোমাকে দেখেছিলাম নিউমার্কেটে ঘুরতে, সাথে সম্ভবত কেউ একজন ছিলো। তুমি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলে, দূর থেকে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলাম, যেয়ে আর তোমাকে পাইনি।
রিয়া একটু চিন্তা করে বল্লো, বুঝেছি তখন আমার মা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিউমার্কেটে এসেছিলাম মায়ের জন্য চশমা তৈরী করতে। অবশ্য তার ছয় মাস পরই আমার মা মারা যান।
ঐ দিন সাথে ছিলো আমার বড় চাচার ছেলে, আমার সাত বছরের ছোট চাচাতো ভাই রফিক।

রিয়া বল্লো, দেখো নিয়তির খেলা বোধ হয় একেই বলে, সে দিন সামনা সামনি দেখা হয়ে গেলে হয়তো আজকের এই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতো।
ডেল সিটি, ভার্জিনিয়া, ইউএসএ