বিদ্যুৎ সরকার : ও থাকে দূরের একটি ছোট্ট শহরে। যেখানে সবুজটা আরো গাঢ়, আকাশটা তেমনি নীল, অন্ধকারটা অনেকটাই গভীর। জনমানবের কোলাহল বলতে মাঝে মধ্যে দু-চারটে চলন্ত গাড়ির চাকার খস্ খস্ শব্দ। সন্ধ্যা না হতেই যেন গভীর রাতের অহেতুক হাতছানি। রাতের অন্ধকারে জোনাকির মায়াবী আলোক সজ্জা। এমনতর পরিবেশ আপনাকে খমোখা একজন কবিতে রূপান্তরিত করে দিতে পারে। অবশ্য, আপনি কবি হবেন কি না সেটাতো একশত ভাগ আপনার চয়েস।

সেও এখন কলি থেকে ফুল হোয়ে ফুটেছে জানা-অজানার মধ্য দিয়েই। তবুও গন্ধে, বর্নে উজ্জ্বল-উচ্ছল। ভাললাগে আকাশ, শরতের আকাশ। ভাললাগে পাহাড়, আকাশ ছোঁয়া পাহাড়। তার বদ্ধ ধারণা এ পাহাড়টা একদিন আকশটাকে ছুঁবেই। তাদের কোন নিজস্ব পাহাড় নেই, আছে স্রোতস্বিনী একটি ছোট্ট নদী। পাহাড় না থাকার দুঃখগুলো সেই নদীর জলে মিশিয়ে দেয় কখনো কখনো। দূরের পাহাড়টার সবুজ তাকে অবুঝ কোরে তুলে মাঝেমধ্যে। পাহাড় ও নদী এক বিপ্রতীপ ভালোবাসার সীমারেখায় যেন তার অবস্থান। শুধু নদী কিংবা পাহাড় তার একক ভালোবাসার বিষয় আসয় হতে পারে না কোন মতেই। পাহাড় ও নদী দুটোকেই তার চাই। নদী থেকে পাহাড়ের দূরত্ব অনেক তব্ওু, নদীর জলে পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি। মনে হবে পাহাড় ডুবে আছে নদীর স্বচ্ছ জলে। আর, তারওতো ভীষণ ইচ্ছে নদীর জলে অবগাহনের। সেই কবে কর্ণফুলীর জলে এক জলজ অনুভূতিতে উদ্বেলিত হোয়েছিল একবার। যেমন সেবার ভাল লেগেছিল বান্দরবনের সাজেক ভ্যালির কটেজের বারান্দায় বসে দূরের অন্য একটি পাহাড়কে দেখা। সে পাহাড়ের সবুজ কেমন করে একপশলা বৃষ্টিতে ভিজছিলো। আর বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ছিল যেন সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে। ওর কেন জানি মনে হছিল সারাটাদিন বৃষ্টি ঝরুক, অবিরাম।

সে শুধু তাকিয়ে থাকবে সেই সবুজ পাহাড়টির দিকে। আর, বৃষ্টির রিম ঝিম শব্দে ছন্দময় হয়ে উঠবে চারিধার। কী এক বৃষ্টি ভেজা মনের মৌতাতে যেন কাটিয়ে দিতে পারতো বাকীটা জীবন।

‘আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম শুধু শ্রাবন সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!!’ স্রীকান্তের এক দারুণ গান আদ্রিত করে দিল, শান্ত করে রাখলো অবলিলায় সারাটা দিন, সারাটা ক্ষন। সে তখনও এক মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো দূরের ঐ সবুজ পাহাড়টার দিকে। তবুও বুঝি এক পাহাড় দুঃখ নিয়ে অপেক্ষায় নতুন এক সূর্যোদয়ের আশায়।
বিদ্যুৎ সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা