বনানী বাবলি : সবুজ : হ্যালো… সুপ্রভাত। কী ব্যাপার? ফেবু থেকে তুমি উধাও দেখি অনেকদিন যাবৎ …
অন্বেষা : শুভরাত্রি… উধাও কী … সব সময় কি ফেবুতে থাকবো?
সবুজ : না… না… সব সময় থাকতে বলছি না। তবে অনেকদিন জ্বালাময়ী পোস্ট টোস্ট দিচ্ছ না তাই বললাম। রাগ করো কেন? তোমাদের মেয়েদের নিয়ে ওই এক সমস্যা।
অন্বেষা : তোমার এই রকম একচোখা কথা কেন? মানুষের কি সুখ-দুঃখ কিংবা ভালো মন্দ থাকতে পারে না? সব সময় তো আর লিখতে ইচ্ছে করে না বা লিখা আসেও না…
সবুজ : ও আচ্ছা। তো তোমার কোনটা হয়েছে …. মন খারাপ না কী শরীর খারাপ?
অন্বেষা : আর কী ….ওই অমিক্রন এসে বাসা বাঁধলো শরীরে। আজ প্রায় পনেরো দিন ওই নিয়েই তো ছিলাম।
সবুজ: বলো কী? অমিক্রন তোমার? গত দুইবছর যাবৎ তোমাকে ছবিতে দেখলাম মাস্ক, শিল্ড, হলুদ গাউন অর্থাৎ ফুল পি পি ই তে নিজেকে ঢেকে অফিস করছো? না বললে তো চেনার উপায় নেই যে সেটা তুমি …. অমিক্রন আসে কী করে তোমার কাছে?
অন্বেষা : বাজে বকোনা। এই ভাইরাস কখন যে কার নিরাপদ বেষ্টনী ভেদ করে আক্রমণ করবে তা কেউ বলতে পারে না।
সবুজ : একদম ঠিক বলেছো। কেউ ফুল পি পি ই পরিধান করে কাজ করে আবার যারা বস্তিতে থাকে তারা জানেও না পি পি ই কী জিনিস। এই অংকের তো কোনো সমাধান নেই। আচ্ছা এই বার বলো…. এই কয়দিন নিশ্চই বই পড়েই সময় কাটিয়েছো?
অন্বেষা : হ্যাঁ …. বই পড়েই দিনগুলি পেরিয়ে এলাম।
সবুজ : কে কে ছিল তোমার ঝুলিতে?
অন্বেষা: আরজ আলী মাতুব্বর এর রচনা সমগ্র। কুমার সুশান্ত সরকার এর অসা¤প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু সা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ সুনন্দা শিকদার এর দয়াময়ীর কথা আর তুমি? তুমি কী কী পড়লে?
সবুজ: হ্যাঁ ওগুলি বেশ সমৃদ্ধ বই। আমি পড়লাম Ha Jin এর Waiting যেটা National Book award, winner of the PEN/Faulkner award পেয়েছে। আর পড়েছি Kite Runner যেটা লিখেছেন Khaled Hosseini এবং এটা National Bestseller বই ছিল।
অন্বেষা : দারুণ… দারুণ। লেখক পরিচিতি দাওতো …
সবুজ: Ha Jin হলো অরিজিনালি চীনের এবং ১৯৮৫ সালে দেশ ত্যাগ করেন উচ্চ শিক্ষার্থে। বর্তমানে আমেরিকার আটালান্টাতে Emory University-তে অধ্যাপক … আর হুসাইনি জন্মগ্রহণ করেন কাবুলে এবং ১৯৮০ সাল থেকে পলিটিক্যাল এসাইলাম করে ক্যালিফোর্নিয়াতে আছেন। তারপর? আর কী খবর বলো… নুতন কিছু লিখলে?
অন্বেষা: একটা গল্পের কিছু অংশ শুনবে?
সবুজ: বলো … বলে যাও… শুনি ….
অন্বেষা : “শুয়ে আছি সুরিথের একটা মানসিক হাসপাতালের আইভরি শুভ্র মেঘপুঞ্জের মতো সাদা চাদরের নরম বিছানায়। আমি আধো ঘুমে শুনতে পাচ্ছি ডাক্তার বলছেন নার্সকে, “রোগীর হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।” জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আল্স পর্বতের বরফে ঢাকা উঁচু নিচু পাহাড়ের সারি। আমি উড়তে গেলাম সেই পাহাড় ডিঙিয়ে আকাশে কিন্তু পারলাম না। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, থমকে গেলাম। আমার পায়ে অদৃশ্য সোনার শিকল দিয়ে আটকানো। আমি শিকল ছিড়ে উড়ে যেতে গিয়ে খোলা আকাশ থেকে মাটিতে মুখ থুবড়ে পরে গেলাম, বুকে একটা বিষ মাখানো তীরের আঘাতে।”
সবুজ: কী হলো …. এই রকম দুঃখকষ্টের তীর ছুঁড়ছো কেনো বলতো?
অন্বেষা : আহা …. দুঃখ নিয়েই তো মানুষের জীবন …।
সবুজ : ধ্যাৎ … মুডটাই খারাপ করে দিলে …. আচ্ছা রাখি এবার…. বাইই।
অন্বেষা: হোকা বন্ধু… তোমার মুড় খারাপ হোক বা না হোক …. দুঃখকে খন্ডাতে পারে কেউ? যেটা আসার সেটা আসবেই। দুঃখ আছে বলেই সুখ হয় মধুর …
আর শোনো… রবি ঠাকুর বলেছেন, “দুঃখকে আমরা দুর্বলতাবসত: খর্ব করিব না, অস্বীকার করিব, দুঃখের দ্বারাই আনন্দকে আমরা বড় করিয়া এবং মঙ্গলকে আমরা সত্য করিয়া জানিব। একথা আমাদের মনে রাখিতে হইবে অপূর্ণতার গৌরবই দুঃখ, দুঃখই এই অপূর্ণতার সম্পদ, দুঃখই তাহার একমাত্র মূলধন।” ভালো থেকো ….বাই।
কথোপকথন: সবুজ ও অন্বেষা (পর্ব ২)
অন্বেষা : হ্যালো… হ্যালো? শুনতে পাচ্ছ? সুপ্রভাত ….. কী ব্যাপার এবার দেখি তুমি উধাও ফেবু থেকে। ওয়াটস আপ, মেসেঞ্জার কোথাও তুমি নেই। তোমার মেয়ে বন্ধুরা তোমার খোঁজে পোস্টিং দিচ্ছে ফেবুতে … হুমম?… কী হলো?
সবুজ: শুভরাত্রি … আরে দাঁড়াও… এক নিঃশ্বাসে এতো প্রশ্ন করলে উত্তর দেই কী করে? অমিম এসেছিলো আমার বাহুডোরে …
অন্বেষা: বলো কী? তোমার? গত সপ্তাহে তো একহাত নিলে আমার অমিক্রন নিয়ে। বিশাল বক্তৃতা শুনতে হলো। তিনি এলেন কী করে তোমার কাছে? ঠিকানা দিলো কে?
সবুজ : দেখো উল্টা কথা বলো না … আমার কলিগ টেকস্টে ফ্লাইটে উঠার আগের দিন পিসিআর টেস্ট করে দেখলো পজিটিভ কোনো সিম্পটম নেই কিন্তু সে ক্যারিয়ার ছিল। ব্যাস… আর কী… ছড়িয়ে গেলো… পুরা ডিপার্টমেন্ট এখন আইসোলেশনে …
অন্বেষা : টেকস্টে? অরিজিনালি কোন দেশের উনি বলতো?
সবুজ : Eritrea… যে দেশে গাছের কোনো শাখা বা ডাল কাটলে কারাগারে রাত কাটাতে হয় শাস্তি স্বরূপ…
অন্বেষা: বলো কী? ইন্টারেষ্টিং- তো এই আইন কেনো হলো ঐ রাষ্ট্রে?
সবুজ: দেশটা কোন দিকে জানা আছে কি? রাজধানী হলো Asmara।
অন্বেষা: না … দেশের নামটি কখনো শুনেছি মনে হচ্ছে না তো। তুমিতো আবার বই খ্যাপা … সবই জানো …
সবুজ: Don’t be silly…বক বক করো না … কোনো মানুষের পক্ষে সব জানা সম্ভব না কি? ইরিত্রিয়া হলো Ethiopia, Sudan, Djibouti এই তিন দেশের বর্ডারে এবং এর অন্যদিকে coastline হলো Red Sea…
এক সময় একের পর এক যুদ্ধে এই দেশটি বিধস্ত হয়ে যায়, পুড়ে যায় এর বনাঞ্চল, প্রচুর ক্ষতি হয় এই দেশের রেইন ফরেস্টের … যার কারণে দেশের বন্য প্রাণীগুলিও নিরাপদ আশ্রয়ে এই দেশ ছেড়ে কাছের অন্যান্য দেশগুলিতে চলে যায়। ইথিওপিয়ার সাথেও যুদ্ধ চলে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের বর্ডারের আয়তন নিয়ে এবং যেটা eventually resolve হয় ২০১৮ সালে।
অন্বেষা: একটু তাড়াতাড়ি বলো …চুলায় ভাত বসিয়েছি … তারপর?
সবুজ : তারপর …বনের পর বন পুড়ে যাওয়ায় তদানিন্তন সরকার একটা আইনজারি করলো প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো এবং গাছকে সংরক্ষণ করার জন্য …
অন্বেষা : আইন তো আমাদের বাংলাদেশেও আছে কিন্তু আইনের তো প্রয়োগ নেই …
সবুজ: কিন্তু অবাক কান্ড দেখো … গাছ পালা, বনাঞ্চল সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে সব বন্য পশু পাখিরাও আবার ফিরে আসে এই ইরিত্রিয়াতে। এখানে শুধু পাখিই আছে ৫৬০ প্রজাতির। আর lion, elephant, mammal, African golden wolf, leopard এদের। অভয়ারণ্য এখন এই ইরিত্রিয়ার Rain Forest…
অন্বেষা: হায় রে … রবি ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা”… জয়নুল আর নজরুলের বাংলাদেশ।
সবুজ : তুমি কি আমার সাথে আছো? না কী ভাবনার সাগরে ডুব দিলে…
অন্বেষা : আমার দেশ … কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমার জীবনানন্দের “রূপসী বাংলা” …
সবুজ : তুমি আছো রূপসী বাংলা নিয়ে … দেখছো না সিআরবি নিয়ে কত কান্ড হচ্ছে দেশে? একটা গাছ বড়ো হতে কত শত বছর লাগে জানো?
অন্বেষা: জানো ভাবছি … আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বেঁচে থাকলে আজ কী বলতেন …
সবুজ : হুম … কী করা বলো? সরকার যদি বন সংরক্ষণে কঠোর না হয় তো তুমি আমি আর কী করতে পারি। রক্ষকই তো ভক্ষক এখন।
অন্বেষা : জানো …একটা পূর্ণ বয়স্ক নিম বা শিশু গাছ বড়ো হতে কতটা সময় দরকার? আর আমাদের আছে সেগুন, মেহগনি, শিরিষ বা বার্মা টিকের মতো সমৃদ্ধশালী ভেষজ গুনে ভরা অগুনতি গাছ। ক্ষমতাধারী মানুষের আকাশচুম্বী লোভের কারণে আজ এই বনাঞ্চল অবলুপ্তির পথে।
সবুজ : যাই হোক … শুধু ইরিত্রিয়া নয় … কানাডাতেও গাছের ডাল কাটতে সিটি অফিস থেকে পারমিশন নিতে হয়… এবং পারমিশন গ্রান্ট হবে যদি সন্তোষজনক বা লজিকাল কোনো কারণ পাওয়া যায়Ñ পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেই গাছ কাটা নিয়ে নানা রকম রেগুলেশন আছে এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হয়।
অন্বেষা : আমাদের দেশের কী যে হবে …
সবুজ : কী হবে আবার? শরীরের একটি অংশে পচন ধরলে সেটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় সব খানে যদি সঠিক চিকিৎসা না হয়। আমাদের লোভ আমাদের মজ্জাগত এখন। এটা আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ থেকে শুরু করে এখন ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে গেছে রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগে…
অন্বেষা: ইস… রাখছি রাখছি … ভাতটা পুড়ে শেষ …
সবুজ : আশ্চর্য …ভাত পুড়ছে গন্ধ পেলে না?
অন্বেষা: তোমার বন্ধু অমিম যে আমার ঘ্রাণেন্দ্রিওতে প্রভাব ফেলেছে … ভুলে গেলে? বাই।
সবুজ: কপালে আজকে তোমার দুঃখ আছে … বাইই।