সোনা কান্তি বড়ুয়া : ভারতের জাতীয় পতাকা বৌদ্ধ অশোকস্তম্ভসহ, চাঁদে গিয়েছে বিজ্ঞান কিন্তু সেখানে হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসের শিবশক্তি যেতে পারেনি! ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যেখানে অবতরণ করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই জায়গার নাম দিলেন ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’! বহুজন হিতায় বহুজন সুখায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুর চন্দ্রপৃষ্ঠে পাকাপাকি ভাবে আঁকা হয়ে গেল অশোকস্তম্ভ ‘টায়ার্স অফ রোভার’ রেখে এল তার ছাপ, চাঁদে শুধু ভারতের জাতীয় পতাকা বহন নয়, চাঁদের মাটিতে অশোক স্তম্ভের ছাপ, ইসরোর নাম লিখে দিলো রোভার প্রজ্ঞান। বৌদ্ধ স ভ্যতাঅশোকস্তম্ভকে গ্রাস করেমোদি চন্দ্রযানের অবতরণের নাম ‘শিবশক্তি’! চাঁদের বুকে অশোকস্তম্ভ প্রতিষ্ঠা পর শিবশক্তি নিয়ে হিন্দু রাজনীতি কেন?

বিজ্ঞানীদের সফলতাকে, রাজনৈতিক সফলতা বা ধর্মীয় বা জাতিগত সফলতা বা হিন্দু রাজনীতির স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে বিতর্ক সৃষ্টি করার কোন যুক্তিকতা নেই। বিজ্ঞানীরা জাতি বা ধরমান্ধতায় বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানীদের চরিত্র ও গুণগত বৈশিষ্ট্য, রাজনীতির পর্যায়ে পড়ে না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে নিমজ্জিত থাকে। গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে, সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে কাজ করে। উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্যে, নতুন নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। মানব কল্যাণে তা ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীদের জয় ও গর্ব, সমগ্র মানব জাতির। প্রতিটি দেশে, বিজ্ঞানী আর জ্ঞান প্রতিবন্ধী জনগন আছে।

চন্দ্রপৃষ্ঠে ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যেখানে অবতরণ করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই জায়গার নাম দিলেন ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’। বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণকে বর্জন করার কারণে দলিত অস্পৃশ্যে পরিণত হয়! জাতিভেদ প্রথায় মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই শিবশক্তির হিন্দু রাজনীতির হিন্দু ধর্ম! শুধু তা-ই নয়, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ যেখানে ভেঙে পড়েছিল, ব্যর্থ হয়েছিল অভিযান, সেই জায়গার নাম রাখলেন ‘তেরঙা পয়েন্ট’। আজকের বিজ্ঞানের দিনে বহু মানুষই সংগঠিত ধর্ম কল্পিত ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’ দেবদেবী কল্পনায় সৃষ্টিকর্তা মতবাদ পছন্দ করে না। সেজন্যই বৌদ্ধধর্ম আফ্রিকা ইউরোপা আমেরিকায় এত জনপ্রিয় হয়েছে। হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়! কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মন-স্মৃতি ১১/ ১৩২)!

বিশ্বশান্তির উৎস নিরুপণ করতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাশয় জাতিসংঘের ভাষণে ঘোষণা করলেন, “ভারত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূজনীয় বুদ্ধ দিয়েছে এবং পূজনীয় গৌতমবুদ্ধই (বুদ্ধের উপদেশ) বিশ্বশান্তির উৎস ও প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি – বুদ্ধ বন্দনা! যুদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে শুক্রবার নিজের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন (27 September 2019 খবর এএনআই’র)।” জাতিসংঘে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বুদ্ধ বন্দনা কেন? আমার দেশ আমার পরম তীর্থভ‚মি এবং মানবাধিকারই সর্বকালের ধর্মের মূলমন্ত্র। বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ায় হিন্দুরাজনীতির শিবশক্তির শিবলিঙ্গ কেন?

ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সফলতা কে নিয়ে, বিতর্ক সৃষ্টি করা। বা সফলতা কে, নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। বিজ্ঞানীদের কে, তাঁদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনায়, চলতে দেয়া উচিত। সুতরাং পক্ষপাতদুষ্ট জনগন আছে। এখানে কোন হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টাণ এ ধরনের সংস্কৃতি চালু নেই। সুতরাং বিজ্ঞানীদের নিয়ে রাজনীতি করা, বাতুলতা মাত্র। অতএব বিজ্ঞানীদের সহযোগিতা করা হোক, এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করা হোক। মানব জাতির কল্যাণে কাজ করতে দেওয়া হোক। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সফলতার জন্যে অফুরন্ত ধন্যবাদ। এবং বিজ্ঞানীদের দীর্ঘায়ু কামনা করি! সঠিক যুক্তি হলো, চাঁদের দক্ষিণ মেরুরতে অবতরণ করা অত সহজ নয়। অতীতের অগ্রণী ভ‚মিকায় থাকা বিজ্ঞানীরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুরতে সফল অবতরনের শত চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন। অর্থ অপচয় ঠেকাতে, চন্দ্রাবিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। থেমে থেমে চন্দ্রাবিযান চালু রাখা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সবাই কে পিছনে ফেলে, শত জল্পনা কল্পনার উর্ধে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলতার সহিত অবতরণ করে, প্রথম বারের মতো, সফলতার সাক্ষর রেখেছেন। এটি খুব সহজ ব্যাপার ছিল না।

ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ও অন্য বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদদের সামনে প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণের কিছুটা ব্যাখ্যাও দিলেন। তিনি বললেন, শিবের সঙ্গে শক্তি জোড়া হয়েছে বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম, প্রেরণা ও নারী শক্তিকে সম্মান দিতে। ইসরোর নারী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে তিনি আলাদাভাবে কথা বলেন। অভিনন্দন জানান। বলেন, নারী শক্তির অবদান ছাড়া চন্দ্রাভিযান সফল হতো না।

চন্দ্রাভিযানের সাফল্য নিশ্চিতভাবেই শাসক দল বিজেপির রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে। হিন্দুত্ববাদী চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে তাই করা হয়েছে নামকরণ। হিন্দু দেবতা ‘শিব’কে বাছা হয়েছে যেহেতু শিবের জটায় লেপ্টে থাকে চাঁদ। ‘শক্তি’ শব্দ বাছার কারণ যে নারী শক্তিকে সম্মান জানানো, সে কথা মোদি নিজেই বলেছেন। চন্দ্রযান-২ যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই স্থানের নামকরণ ‘তেরঙা পয়েন্ট’ করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে।

জোয়ার-ভাটার সঙ্গে চাঁদের সম্পর্ক কী? চাঁদ না থাকলে পৃথিবীর সমুদ্রে জোয়ার-ভাটাই হতো না। সুতরাং বলা চলে, এ দুয়ের মধ্যে একেবারে গলায়-গলায় ভাব! এর কারণ হলো, পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব। প্রশ্ন উঠতে পারে, চাঁদ তো অনেক দূরে। তাহলে সেখান থেকে এত প্রভাব ফেলে কীভাবে? এটা অবশ্য ঠিক। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে গড় দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৯ কিলোমিটার বা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫৫ মাইল। সূর্যের তুলনায় অনেক কাছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। কিন্তু চাঁদের আকার পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সুতরাং পৃথিবীপৃষ্ঠের যে অংশ বরাবর আকাশে চাঁদ থাকে, সেই অংশের সমুদ্রের পানি চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কিছুটা ফুলে ওঠে। এটাই জোয়ার। আবার একই সঙ্গে চাঁদের টানে পৃথিবীও কিছুটা এগিয়ে যায়। তখন পৃথিবীর ঠিক বিপরীত পাশের সমুদ্রের পানি কিছুটা ফুলে ওঠে। তাই সেখানেই জোয়ার হয়। এই সময় অপর দুই পাশের সমুদ্রের পানিতে ভাটার সৃষ্টি হয়। পানির তল নেমে যায়। এভাবে চাঁদের প্রভাবে দিনে দুইবার করে জোয়ার-ভাটা হয়।

চাঁদ যদি না থাকত, তাহলে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা হতো এবং ১ হাজার বছরের চেয়ে বেশি দিনে এক বছর হতো। এর কারণ, চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি কিছুটা কমে যায়। তাই ২৪ ঘণ্টায় এক দিন, ৩৬৫ দিনে এক বছর। চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে এ ধরনের আরও অনেক ওলট-পালট লাগত।

তৃতীয় চন্দ্রযান সফল ভাবে চাঁদে অবতরণ করার চার দিনের মাথায় মন্দিরে পুজো দিতে দেখা গেল ইসরোর প্রধান এস সোমনাথকে। রবিবার সকালে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে পূর্ণমিকাভু-ভদ্রকালী মন্দিরে পুজো দেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রধান। এর আগে গত জুলাই মাসে তৃতীয় চন্দ্রযান অভিযানের সাফল্য কামনায় অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা তিরুপতি মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযানের একটি মডেল হাতে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন ওই বিজ্ঞানীরা। সেই সময় ইসরো প্রধান সোমনাথও অন্ধপ্রদেশের সুল্লুরপেটায় চেঙ্গালাম্মা পরমেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, চন্দ্রযানের সাফল্য কামনাতেই দেবতার আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন তিনি।

গত বুধবার চাঁদে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩। চল্লিশ দিনের দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি কাটাতে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার পরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নেয় ল্যান্ডার বিক্রম। তার আগমনে উপগ্রহের মাটিতে যে ধুলোর ঝড় উঠেছিল, ক্রমে তা থিতিয়ে পড়ে। তার পরে বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছ’চাকার ছাপ পড়ে চাঁদের মাটিতে। আগামী দু’সপ্তাহ (পৃথিবীর হিসাবে) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে প্রজ্ঞান। তাকে সাহায্য করবে ল্যান্ডার বিক্রম।

এই দিনটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে ইসরোকে। এই প্রসঙ্গে উঠে আসে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় চন্দ্রযানের ব্যর্থতার প্রসঙ্গও। একটি সাক্ষাৎকারে সোমনাথ বলেন, “এক বছর তো এটা বুঝতেই কেটে গিয়েছিল, ভুল কোথায় ছিল!’’ জানান, কী ভাবে শূন্য থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল সবটা। শিক্ষা নিতে হয়েছিল ব্যর্থতা থেকে। বার্তা স্পষ্ট, আগের অভিযান সম্পূর্ণ না হলেও হেরে যায়নি ইসরো। লক্ষ্য আরও বহু দূর। চাঁদে কলোনি স্থাপন! সাক্ষাৎকারে ইসরো-প্রধান বলেন, ‘‘মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও তৈরি করতে চায়। আমরা সেরা এলাকাটি খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি!

চাঁদে গিয়েছে বিজ্ঞান কিন্তু সেখানে কোন ধর্ম যেতে পারেনি! হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসের কারন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করে চন্দ্রযানের অবতরণের স্থানের নাম দিলেন ‘শিবশক্তি’ (২৬ আগস্ট ২০২৩ PROTHOM ALO. ২৬ আগস্ট বেঙ্গালুরুতে ছবি: এএনআই)! চন্দ্রাভিযানের সাফল্য নিশ্চিতভাবেই শাসক দল বিজেপির রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে। হিন্দুত্ববাদী চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে তাই করা হয়েছে নামকরণ। হিন্দু দেবতা ‘শিব’কে বাছাই করা হয়েছে যেহেতু শিবের জটায় লেপ্টে থাকে চাঁদ। ‘শক্তি’ শব্দ বাছার কারণ যে নারী শক্তিকে সম্মান জানানো, সে কথা মোদি নিজেই বলেছেন। চন্দ্রযান-২ যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই স্থানের নামকরণ ‘তেরঙা পয়েন্ট’ করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে। ভারতে হিন্দু রাজনীতি ধর্ম সব রকমের জ্ঞানকে দাবিয়ে উপরে উঠে যায় এবং প্রত্যেক বিষয়কে মিথ্যা ইতিহাসের গোবরে বদলে দিয়ে থাকে। একারণে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান এবং সভ্যতা যেভাবে যেভাবে প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে, সেভাবে সেভাবে ভারতীয়রা সত্যযুগে প্রবেশ করার জন্য পেছনের দিকে পা ফেলে চলেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানালেন, সার্থক চন্দ্রাভিযানের দিন ২৩ আগস্ট এখন থেকে ‘জাতীয় মহাকাশ দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হবে। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ও অন্য বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদদের সামনে প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণের কিছুটা ব্যাখ্যাও দিলেন। তিনি বললেন, শিবের সঙ্গে শক্তি জোড়া হয়েছে বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম, প্রেরণা ও নারী শক্তিকে সম্মান দিতে। ইসরোর নারী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে তিনি আলাদাভাবে কথা বলেন। অভিনন্দন জানান। বলেন, নারী শক্তির অবদান ছাড়া চন্দ্রাভিযান সফল হতো না।

২৩০০ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ আজ ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রস্থলে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় ২৪টি দণ্ডযুক্ত ((প্রতীত্যসমূৎপাদ বা সমগ্র কার্যকারণ প্রবাহ) ঘন নীল রঙের অশোকচক্র সংবলিত ভারতীয় গেরুয়া, সাদা ও ভারতীয় সবুজ এই তিন রঙের একটি আনুভ‚মিক আয়তাকার পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই আয়োজিত গণপরিষদের একটি অধিবেশনে পতাকার বর্তমান নকশাটি গৃহীত হয় এবং সেই বছর ১৫ অগস্ট এটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকার স্বীকৃতি লাভ করে। এরপরে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেও জাতীয় পতাকার স্বীকৃতি বজায় রাখে। ভারতে এটিকে “তেরঙা” নামে অভিহিত করা হয়। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত “স্বরাজ” পতাকার আদলে। বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ দিল্লির সিংহাসনে বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। সাধু সাধু সাধু।

শিবশক্তির হিন্দু রাজনীতির সন্ত্রাসী জাতিভেদ প্রথায় বেরিয়ে আসছে অপরাধের ফিরিস্তি! ‘শিবশক্তিরহিন্দুরাজনীতিতে মানুষগুলো ছিল দলিত অস্পৃশ্য। অস্পৃশ্য কারণে দলিত মানুষদের কোমড়ে ঝাড়ু গলায় মাটির হাঁড়ি ঝোলানো মানুষগুলো ছিল অস্পৃশ্য। শুদ্ররা চতুবর্ণের ভিতরে কিন্তু অস্পৃশ্যরা বাইরে। তাদের পঞ্চম বা opressed বা depressed class বলা হয়েছে। তারা হিন্দু সমাজ ব্যবস্থার বাহিরের মানুষ। বাবা সাহেব আম্বেদকর তাদের নিয়ে বহিস্কৃত হিতকারিণী সভা বানিয়েছিলেন। অস্পৃশ্যদের দৈনন্দিন সমাজিক সংস্কারে ব্রাহ্মণ বর্জিত ছিল। কারণ তারা ছিল বৌদ্ধ। বাবা সাহেব আম্বেদকর এটা (ইতিহাস) বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ৫০,০০০০ অনুগামীদের নিয়ে ১৪ই অক্টোবর ১৯৫৬ সালে নাগপুরে (প্রাচীন নাগবংশীদের রাজধানি) বুদ্ধধম্মে প্রত্যবর্তন (ঘরে ফিরে যাওয়া) করেছিলেন। ‘হিন্দু রাজনীতির শিবশক্তি’ সংস্কারে ব্রাহ্মণ বর্জিত মানুষগুলো ছিল অস্পৃশ্য। ভারতীয় সংবিধান বিরোধি বর্তমান ভারতের জাতিভেদ প্রথা (ব্রাহ্মণ ও দলিত বিতর্ক)। কিন্তু বৌদ্ধ রাজ্য সিকিমকে ভারত অজগরের মতো গিলে ফেলেছ এবং শত শত দেব দেবীর পূজা করতে করতে নর নারায়ন বা দলিত জনতার মনুষ্যত্ব কেড়ে নিয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি হিন্দুরাজনীতির হিন্দু ধর্মের ভয়ঙ্কর বিদ্বেষটাই ধর্মান্ধদের অধর্ম! অদ্বৈত বেদান্ত হলো বৈদিক দর্শনের সর্বেশ্বরবাদী ধর্মীয় অনুশীলন বা সাধনার পদ্ধতিগত ধারা যা মহাজগতের সামগ্রিকতাকে জীবন্ত সত্তা মনে করে। বৌদ্ধ ধর্মের মুল গ্রন্থ বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ জাতকের গল্পকে চুরি করে ((১) রামায়ন (২) মহাভারত (৩) বেতাল পঞ্চবিংশতি (পঞ্চতন্ত্র, (৫) HITOPADESA এবং (৬) কথাসরিৎসাগর রচনা করেছেন (WEEKLY BARTAMAN MAGAZINE EDITORIAL page 4, dated 2 January 2016)! ১৮৯৭ সালে Mr. H. LUDERS এর লেখা “LEGEND IN THE EPICS AND IN THE PALI JATAKAS“ বই এবং RENATE SÖHNEN – THIEME এর লেখা “BUDDHIST TALES IN THE MAHABHARATA” বই ২টি (Please find it in your Google) প্রকাশে স্বীকার করেছেন হিন্দু ব্রাহ্মণ লেখকগণ বৌদ্ধ জাতককে বদলায়ে মহাভারত বানিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ওঠে ইউরোপের German & ব্রিটেনে। বিখ্যাত ইউরোপীয়ষন সাহিত্যিকগণকে গভীর ভাবে প্রভাবিতকরেছে, তাঁরা বার বার ফিরে এসেছেন বই ২টির কাছে। ক্রমশ তার আঁচ পড়তে থাকে আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্যান্য রাজ্যে। ছড়াতে থাকে গোটা বিশ্বেই। বৌদ্ধ নলিনীকা (৫২৬) এবং কট্টহারী জাতক হতে নেওয়া হয়েছে মহাভারতের শকুন্তলা ও রাজা দুস্যনের প্রেম কাহিনী। কট্টহারীর নাম পরিবর্তন করে শকুন্তলা রাখা হয়েছে এবং বারানসীর রাজার পরিবর্তে রাজা দুস্যনের নাম রাখা হয়েছে।

বৌদ্ধ সম্রাটের ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মহামতি সম্রাট অশোকের বংশজ (5tth Generation) মৌর্য বংশের সর্বশেষ বৌদ্ধ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে করল (100 B. C.)! হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ দর্শন’কে চুরি করে ঈশ্বরএ বিশ্বাসী নয় বরং প্রাচীন বেদএ বিশ্বাসী ব’লে নিম্নোক্ত ছয়টি দর্শনের আস্তিক অস্তিত্ব স্বীকৃত এগুলির প্রত্যেকটিকে ‘দর্শন’ বলা হয়। সাংখ্য: নিরীশ্বরবাদী দর্শন AND AGAINST OF HINDU GOD PHILOSOPHY. । এই দর্শনে পুরুষ ও প্রকৃতির দ্বৈতবাদী তাত্তি¡ক ব্যাখ্যার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে DESTROYER OF বৌদ্ধ ধর্ম – আদি শঙ্কর ACHARYA মতে, “নির্গুণ ব্রহ্ম বা গুণবিহীন ব্রহ্ম চূড়ান্ত এবং একমাত্র বাস্তবতা। শ্রুতি যে ব্রহ্মের জ্ঞান অদ্বৈত বেদান্ত এই দর্শনে ব্রহ্ম (BUDDHIST NIRVANA) হলো একমাত্র অপরিবর্তনীয় বাস্তবতাÑ “সেখানে কোনো দ্বৈততা নেই, কোনো সীমিত, স্বতন্ত্র, স্ব বা পৃথক সীমাহীন মহাজাগতিক ‘আত্ম’ (self) নেই, বরং তা সমস্ত স্ব, সমস্ত অস্তিত্ব, সমস্ত স্থান ও সময় জুড়ে এক এবং অভিন্ন” (Brodd, Jeffrey, 2009, World Religions: A Voyage of Discovery, পৃ.-৪৩)। অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে প্রতিটি সত্তার ভিতরের ব্রহ্মাণ্ড ও আত্মা হলো ব্রহ্ম, এবং প্রতিটি সত্তার বাইরের ব্রহ্মাণ্ড ও আত্মা হলো ব্রহ্ম। ব্রহ্ম হলো বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সব কিছুর আদি ও শেষ এবং সমস্ত কিছুর মূল উৎস। মহাবিশ্ব ব্রহ্ম থেকে আসে না, বরং সে নিজে-ই ব্রহ্ম। অদ্বৈত বেদান্তের একজন প্রবক্তা আদি শঙ্করের মতে, “নির্গুণ ব্রহ্ম বা গুণবিহীন ব্রহ্ম চূড়ান্ত এবং একমাত্র বাস্তবতা। শ্রুতি যে ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে তা আত্ম অনুসন্ধান ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যায় না। চেতনা ব্রহ্মের সম্পত্তি নয় বরং এর স্বভাব“ (Brodd, Jeffrey, 2009, World Religions: A Voyage of Discovery, পৃ.-২৩২)। চেতনা যদি ব্রহ্মের স্বভাব হয়ে থাকে তাহলে আমরাও সেই স্বভাবের দাশ। ইচ্ছার উৎস হিসেবে যদি ব্রহ্মের অখণ্ড চেতনাকে মেনে নেওয়া হয় তাহলে আমাদের ইচ্ছাকে স্বাধীন বলা চলে না।

হিন্দুরাজনীতির হিন্দু ধর্ম বৌদ্ধ ইতিহাসকে ধ্বংস করতে হিন্দু ধর্ম হল সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ২৬০০ বছর পূর্বে আষাঢ?ী পূর্ণিমার রাতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ সারানাথের ঈষিপত্তন মৃগদাবে সেই পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে প্রথম “ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র” দেশনা করলেন! গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র উপদেশ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ অশোক চক্র (ধর্মচক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমবেøম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে “সত্য মেব জয়তে” বিরাজমান! ভারতীয় উপমহাদেশ সাতচল্লিশে ধর্মের জন্য ভারত ও পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মান্ধ রাজনীতি তৈরি করল কাঁটাতারের বেড়া আতঙ্ক!

বর্তমানে হিন্দু বলে যে যে জাতিরা ইচ্ছা অনিচ্ছায় লিখে চলেছেন – তাদের (জাতিগুলিকে) ৬টী তপশিল বা Schedule এ ভাগ করা হয়। জনগণনার শ্রেণী বিন্যাসের দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার দিয়েছিলেন হিন্দুদের। যেহেতু, ব্রিটিশরা ভারতের সনাতন ধর্মীয় ও হিন্দুধর্মীয় জাতি সমূহের সম্পর্কে আদ্যোপান্ত ধারণা ছিল না বলে। ১৯৩১ সালে জনগণনার রিপোর্ট এ ভারতের এবং অখন্ড বাংলায় ৬টি তপশিল বা 6th schedule – নিম্ন রূপ :– ১) 1st = ব্রাহ্মণ, ২) 2nd = ক্ষত্রিয়, ৩) 3rd = বৈশ্য, ৪) 4th = শুদ্র। ৫) 5th = অর্ধ হিন্দু অবদমিত ৩৯টি জাতি, বর্তমানে ৬০টি জাতি, ৬)। 6th = অর্ধ হিন্দু আদিবাসী ৪০টি জনজাতি। উপরের ৪টি তপশিল বা schedule ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র নিয়ে হিন্দুর তপশিল বা schedule নিয়ে হিন্দুধর্মের তালিকা সম্পূর্ণ হয়। (১৯৩১ সাল।) হিন্দুর তালিকা থেকে 5th এবং 6th schedule’ এর জাতি এবং জনজাতি গুলি হিন্দুধর্মের বাইরে রাখা হয়।
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া ((Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি