সোনা কান্তি বড়ুয়া : বিশ্বমৈত্রীর আলোর ঝর্ণাধারায় উদ্ভাসিত হিংসা উন্মত্ত সমাজে গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমানবতাবাদ! বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় মহামুক‚ট বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ৩ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিগত ১৮ই অক্টোবর থেকে ২০শে অক্টোবর (২০২২)। সুখী হও সুখী হও / এ মৈত্রী ভাবনা। / দিবা নিশি হিত সুখ করিনু প্রার্থনা। মহামান্য থাইল্যান্ডের রাজা ব্জ্রলঙ্কন (His Majesty King Vajiralongkorn) থাইল্যান্ডে বিশ্ববৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদবোধন করেছেন। এবং উক্ত অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল প্রদান করেন থাইল্যান্ডের মহামান্য সঙ্ঘ রাজ। অনুষ্ঠানে মাননীয় সংঘরাজ, উপসংঘরাজবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রী, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন!

মহামুক‚ট বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মহতি অনুষ্ঠানে বহু দূর প্রবাসে বৌদ্ধ সংস্কৃতির শিকড় ছুঁয়ে থাকার প্রয়াসে ৩৭ টি রাষ্ট্রের সম্মানিত বৌদ্ধ সদস্যবৃন্দ ৫৫২ জন বৌদ্ধ জাতির এই মহান সন্মেলনে বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের বাহাত্তরতম (৭২তম) জন্মবার্ষিকী বিপুল বৌদ্ধ জনতার সমাগমে আকাশ বাতাসের কোলাহল বিদীর্ণ করে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি” ধ্বনিত হয়।

হিংসা উন্মত্ত সমাজে গৌতমবুদ্ধের মানবতাবাদ ! সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি তত্তে¡র মর্মভেদী করুনাণাঘণ গৌতমবুদ্ধ মানুষের মঙ্গলের জন্যে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির সমৃদ্ধ সাধনে “অহিংসা পরম ধর্ম” প্রচার করে সমগ্র মানব জাতির সর্বাঙ্গীন মঙ্গল সাধন করেছিলেন!

72 ANNIVERSARY OF THE WORLD FELLOWSHIP OF BUDDHISTS
Mahamakut Buddhist University and the WFB
welcome all delegates and participants of
the 30″ General Conference of the World Fellowship of Buddhists,
the 21’General Conference of the WFBY and
the 12″ Meeting of the World Buddhist University
on the Theme of
‘BUDDHISM IN THE TIME OF CRISIS’
19-20 October B.E.2565 (2022)
at Mahamakut Buddhist University

‘অহিংসা পরম ধর্ম গৌতমবুদ্ধের দান / ধর্মান্ধের ধর্মের চেয়ে মানুষ বড় মানবতায় প্রাণ! বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা। ‘বৌদ্ধ সংস্কৃতি’ নামের জোড়কলম শব্দটা বাংলাদেশে বসে যে ভাবে চোখের সামনে ভাসে, সেই অক্ষদ্রাঘিমা থেকে দূরে থাইল্যান্ডে বসে তার আদলটা বোঝা অত সহজ কর্ম নয়। নির্ভেজাল সত্যবচন। থাইল্যান্ডে মেডিটেশন সেন্টার আছে এবং আধুনিক কর্পোরেট সংস্কৃতির কাজের ফাঁকে আনাপাণাস্মৃতি ও মৈত্রীভাবনা করার সুযোগ লাভ করা যায়।
কিন্তু মনে হচ্ছে দিন কয়েকের জন্যে খাস থাইল্যান্ডেই যেন বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ একটি ধর্ম দ্বীপে উঠে এসেছেন, সকাল বিকাল বুদ্ধ ধর্ম সংঙ্ঘ বন্দনায়। চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করছি, বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে থাকা প্রবাসী বৌদ্ধগণ আপ্রাণে তাঁদের শিকড়ের বৌদ্ধ সংস্কৃতি টা ছুঁয়ে থাকার চেষ্ঠা করে চলেছেন। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক পা ফেলার পর থেকে ঝলক দর্শনে দেখা গেল, তা থেকেই মনে হয়েছে, এ বারে র সম্মেলনে একাধিক বাংলাদেশী বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনা আন্তরিকসাড়া জাগিয়েছে।

World Fellowship of Buddhist Youth (WFBY) এর সহকারী মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন মি. ব্রহ্মান্ড প্রতাপ বড়ুয়া রিপন। তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন বৌদ্ধ যুবনেতা। বাংলাদেশ থাইল্যান্ড চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পরিচালকসহ দেশি বিদেশী বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা তাঁর এ সফলতার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ভদন্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো ও মি. ব্রহ্মান্ড প্রতাপ বড়ুয়া রিপন বিশেষ কাজে দুইজনই উক্ত মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁদের অতীত কর্মকান্ডকে গুরুত্ববহ ও যোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে করে শ্রদ্ধেয় বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো’কে World Fellowship of Buddhist (WFB) এর Vice President এবং মি. ব্রহ্মান্ড প্রতাপ বড়ুয়া রিপন’কে World Fellowship of Buddhist Youth (WFBY) এর সহকারী মহাসচিব নির্বাচিত করায় তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

বৌদ্ধ কাহিনী অবলম্বনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নাটক (১) নটীর পূজা (২) শ্যামা (৩) চন্ডালিকা (৪) মালিনী (৫) রাজা (৬) অচলায়তন ও (৭) গুরু। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী” গানটি (বুদ্ধ জন্মোৎসব ২১শে ফাল্গুন, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ) মহামানব বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করেছিলেন,
“হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বি নিত্য নিঠুর দ্ব›দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার লোভ জটিল বন্ধ।
নতুন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী
কর ত্রান মহাপ্রাণ আন অমৃত বাণী
বিকশিত করো প্রেম প্রদ্ম চিরমধু নিষ্যন্দ
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুণাঘন ধরণীতল করহ কলংক শূন্য
এস দানবীর দাও ত্যাগ কঠিন দীক্ষা
মহাভিক্ষু লও সবার অহংকার ভিক্ষা।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্ত কলুষ গøানি;
তব মঙ্গল শঙ্খ আন, তব দক্ষিণ পাণি
তব শুভ সঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ।
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুনা ঘন ধরনীতল করহ’ কলঙ্ক শূন্য।”

রাজপুত্র সিদ্ধার্থ মনের লোভ দ্বেষ মোহ অহঙ্কারসহ মারসমূহ জয় করে বুদ্ধত্ব লাভ করলেন পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ সমগ্র মানবজাতির কল্যাণমিত্র এবং আজ ২৬০০তম পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমায় বৌদ্ধ জগত জুড়ে বুদ্ধ বন্দনায় জন গণমনে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি” বিরাজমান। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ তাঁর পিতা মহারাজা শুদ্ধোধনের রাজসিংহাসন ত্যাগ করে ছয় বৎসর কঠিন সাধনার (আর্য্য অষ্ঠাঙ্গিক মার্গ ও ৩৭ প্রকার বোধিপাক্ষীয় (বুদ্ধত্বের সাধনা) ধর্মের অনুসরন); পর মহাকরুনা এবং মহাপ্রজ্ঞার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে ‘বুদ্ধ বা মহাজ্ঞানী মহাজন’ হয়েছিলেন।

ভগবানবুদ্ধের ধ্যানে ও বন্দনার আলোকে মানবাধিকার প্রসঙ্গ নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চন্ডালিকা নৃত্যনাট্যে চন্ডাল কন্যা চন্ডালিকার অশ্রæ প্রবাহ বিরাজমান। বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ ও আদিমতম নিদর্শন চর্যাপদ ও বৌদ্ধ দর্শনে সমৃদ্ধ। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘মহামানব বুদ্ধ’ শীর্ষক প্রবন্ধে ১৮ মে, ১৯৩৫ সালে কোলকাতায় মহাবোধি সোসাইটির ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে মহাবোধি সোসাইটি হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন,
“আমি যাঁকে আমার অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করেছি আজ তাঁর জন্মোৎসবে তাঁকে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি, এ কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে অর্ঘ নিবেদন নয়, যাঁকে নির্জনে বারংবার অর্ঘ নিবেদন করেছি, সেই আজ নিবেদন করতে উপস্থিত হয়েছি। একদিন বুদ্ধগয়াতে বুদ্ধমন্দির দর্শনে গিয়েছিলুম। সেইদিন এ কথা মনে জেগেছিল- যে সময়ে ভগবানবুদ্ধেও চরণস্পর্শে সমস্ত বসুন্ধরা জেগে ওঠেছিল, গয়াতে যেদিন তিনি স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন, সেদিন কেন আমি জন্মাইনি, কেন সেদিন অনুভব করিনি তাঁকে একান্তভাবে শরীর মন দিয়ে। বর্তমানের পরিধি অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। এই ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে তাঁকে উপলব্ধি করতে পারা যায় না। কিছুদিন পুর্বে তাঁর জীবন কথায় পড়েছিলুম- সে যুগের কথা। সেদিন ছিল কথায় বিরোধ, চিন্তার বিরোধ। সেদিন তাঁকে খর্ব্ব করতে, তাঁর চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু যাঁরা মহাপুরুষ তাঁরা কোন ক্ষুদ্র কালে আসেন না। বর্তমানকে উপলক্ষ করে তাঁরা জন্মান না, মহাযুগের মধ্যে তাঁদের আবির্ভাব, ক্ষুদ্র বর্তমানের মধ্যে তাঁদের আবির্ভাব সম্ভব নয়। সুদূর জাপানের এক মৎস্যজীবি সেদিন এই বোধিদ্রæমমূলে কাতরভাবে তার পাপ বিমোচনের জন্য প্রার্থনা করেছিল, বুদ্ধদেবের চরনতলে লুটিয়ে পড়েছিল, সেদিনও বুঝেছিলুম তাঁর জন্ম ক্ষুদ্র কালের মধ্যে নয়।

যাঁরা প্রতাপবান, বীর্য্যবান তাঁদের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশি নয়। অনেক মানব, রাজা, ধনী মানী ও রাষ্ট্রনেতা এ পৃথিবীতে জন্মেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ মনুষ্যত্ব নিয়ে কতজন এসেছেন? যিনি সম্পূর্ণ মনুষ্যত্ব নিয়ে এসেছিলেন আবার তাঁকে আহ্বান করছি আজকে এই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভারতে, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের বিসম্বাদ, যেখানে ভেদ বিবাদে মানুষ জর্জরিত, সেই ভারতে তিনি আবার আসুন।

কেমন করে কোন ভাষায় বলব, তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, কেমন করে মানুষকে তাঁর বাণী বলেছেন, সেই স্মৃতিটুকু রাখবার জন্য মানুষ অজন্তা গুহা হতে শুরু করে কত না অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এর চেয়ে দুঃসাধ্য কাজ হয়েছে সেদিন, যেদিন সম্রাট অশোক তাঁর শিলালিপিতে লিখলেন বুদ্ধের বাণী। অশোক তাঁর বীরত্বের অভিমান, রাজত্বের অভিমান দিয়েছিলেন ধূলায় লুটিয়ে। এতবড় রাজা কখনও পৃথিবীতে এসেছেন কি? কিন্তু সেই রাজাকে রাজাধিরাজ করল কে? সেই গুরু জাতিতে জাতিতে ভেদ, বিসম্বাদ পূর্ণ, হিংসায় ভরপুর ও পঙ্কিল এই জাতিকে কি শুধু রাষ্ট্রনীতি দ্বারা রক্ষা করা যাবে? যিনি এসেছিলেন, তিনি আবার আসুন, উপনিষদের সেই বাণী নিয়ে। উপনিষদ বলছে, “কো ধর্ম্মভূতে দয়া, সমস্ত জীবের প্রতি দয়া, শ্রদ্ধা ও দয়া। শ্রদ্ধয়া দেয়ম, ধিয়া দেয়ম। অশ্রদ্ধা করলে দান করলে সে দান কলুষিত হয়। যেখানে মানুষ মানুষকে অপমান করে, সেখানে কি মানুষ রাষ্ঠ্রনীতিতে সিদ্ধিলাভ করতে পারে?

সত্যের দ্বারা মানবের পূর্ণ প্রকাশ। যিনি আপনার মধ্যে সকল জীবকে দেখেন। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তিনি প্রকাশিত হবেন তাঁর মহিমার মধ্যে। এই জগতের অধিকাংশ মানুষ আজ আচ্ছন্ন, তারা প্রকাশিত হয়নি। সূর্যের আলো প্রবেশের পূর্বেই এই সুন্দরী পৃথিবীর সবকিছু যেমন আচ্ছন্ন ছিল, তেমনিতর আজকের দিনে মানুষ সমস্ত মানুষ আচ্ছন্ন, আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বারা। যাঁরা সত্যকে পেয়েছেন, তাঁরা প্রকাশ পেয়েছেন। যেমন সূর্য নিজেকে প্রকাশ করে সঙ্গে সঙ্গে এই পৃথিবীকে ও প্রকাশিত করেন, তেমনিতর মহাপুরুষগণ ও ভগবান তথাগত যখন প্রকাশিত হলেন তখন এই ভারতবর্ষ ও প্রকাশিত হ’ল পৃথিবীর কাছে। ভারত তখন আপনার সত্যবাণী প্রকাশ করলে। সকল বর্ণের, সকল ধর্মের ছোট ছোট গন্ডী এড়িয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়লন এই মহাবিশ্বে। সমস্ত মরুক্ষেত্রের মধ্যে, দুর্লঙ্ঘ্য পর্বতের উপরে প্রস্তর মূর্তিতে ও স্তপে স্তপে তাঁর বাণী রচিত হ’ল। তিনি মানুষকে বলেছিলেন সত্যকে উপলব্ধি করার জন্যে। কিন্তু সে সত্যকে কি সহজে পাওয়া যায়? তাই মানুষকত দুঃখ দিয়ে এবং কত কৃচ্ছ সাধন করে পর্বত শিখরে, মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের ভক্তিকে চরিতার্থ করেছে। এশিয়া খন্ডে মানবের সে কীর্তি দেখলে বিস্মিত হতে হয়।

কেমন করে কোন ভাষায় বলব, তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, কেমন করে মানুষকে তাঁর বাণী বলেছেন, সেই স্মৃতিটুকু রাখবার জন্য মানুষ অজন্তার গুহা হতে শুরু করে কত না অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এর চেয়ে দুঃসাধ্য কাজ হয়েছে সেদিন, যেদিন সম্রাট অশোক তাঁর শিলালিপিতে লিখলেন বুদ্ধের বাণী। অশোক তাঁর বীরত্বের অভিমান, রাজত্বের অভিমান দিয়েছিলেন ধূলায় লুটিয়ে। এতবড় রাজা কখনও পৃথিবীতে এসেছেন কি? কিন্তু সেই রাজাকে রাজাধিরাজ করল কে? সেই গুরু। জাতিতে জাতিতে ভেদ, বিসম্বাদ পূর্ণ, হিংসায় ভরপুর ও পঙ্কিল এই জাতিকে কি শুধু রাষ্ট্রনীতি দ্বারা রক্ষা করা যাবে? যিনি এসেছিলেন, তিনি আবার আসুন, উপনিষদের সেই বাণী নিয়ে। উপনিষদ বলছে, “কো ধর্ম্মভূতে দয়া, সমস্ত জীবের প্রতি দয়া, শ্রদ্ধা ও দয়া। শ্রদ্ধয়া দেয়ম, ধিয়া দেয়ম। অশ্রদ্ধা করে দান করলে সে দান কলুষিত হয়। যেখানে মানুষ মানুষকে অপমান করে, সেখানে কি মানুষ রাষ্ট্রনীতিতে সিদ্ধিলাভ করতে পারে?

প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দও ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান।

জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় সমৃদ্ধ আজ বুদ্ধাব্দ কে বাদ দিয়ে ভারতে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ ঘোষনা করা হয়। অথচ “আজ ২৫৫৫ বাংলা বর্ষ ( থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৫৫) হবার কথা ছিল। বঙ্গাব্দের ইতিহাস চুরির পূর্বে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু পন্ডিতগণ “আল্লাহ উপনিষদ” রচনা করে সদাশয় সম্রাটের কৃপাদৃষ্ঠি লাভ করেন। বন্দে মাতরম” শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, – আমি তোমাদের রক্ষা করিব।” স¤প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক “আজকাল” (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, “বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর “সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের ”পুরস্কার লাভ করেছেন।”

গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে মানবাধিকারের দীক্ষা নিয়ে সম্রাট অশোক ঘোষণা ছিল ”অহিংসা পরম ধর্ম” শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথে ঠাকুর বৈদিক জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে চন্ডালিকা শীর্ষক নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন এবং তিনি তাঁর ভারতীয় সমাজের কাছে বৌদ্ধধর্মের পতনের কারন সম্বন্ধে জবাবদিহি করেছেন, “তাঁর (গৌতমবুদ্ধের) তপস্যা কি শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে ? ভারতের মাটিতে আজ তাঁর তপস্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের অমূল্য ভান্ডারে দ্বার ভেঙ্গে গেছে। মানুষকে আমরা শ্রদ্ধা করিনে। আমাদের সেই প্রেম, মৈত্রী, করুণা, যা তাঁর দান, সব আমাদের গিয়েছে। তাঁর দানকে রুদ্ধ করেছি মন্দির দ্বার পর্যন্ত। এ জাতের কখনও মঙ্গল হতে পারে? তাঁকে বলা হয় শূন্যবাদী। তিনি কি শূন্যবাদী? তিনি বললেন, “জীবে দয়া কর।”
ভারতে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণে বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত হাজার হাজার মানুষ! আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদ, “৫ অক্টোবর, বুধবার দিল্লির অম্বেডকর ভবনে গণ ধর্মান্তরণ ছিল। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেখানকার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ধর্মান্তরণে উপস্থিত আপের মন্ত্রী। ধর্মান্তরণের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হিন্দুত্ব-বিরোধী শপথ নিয়েছেন আম আদমি পার্টির এক মন্ত্রী! অভিযোগ, রাজেন্দ্র পাল গৌতম প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আমি হিন্দু দেব-দেবীর পুজো করব না।’’ বিষয়টি নিয়ে আপের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। অভিযোগ করেছে, ‘হিন্দুত্ব-বিরোধী’ প্রচার চালাচ্ছেন কেজরীওয়াল। রাজেন্দ্র সব অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, বিজেপি আসলে ‘দেশ-বিরোধী, (৫ অক্টোবর, ২০২২ )!”

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি