সোনা কান্তি বড়ুয়া : বাংলাদেশে মাটি খুঁড়লে বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে আসছে! ও হিন্দু আমি মুসলিম না করে বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন শুনেছেন? ধর্মান্ধ মুসলমান রাজনীতি ও ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীরা মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাকে গ্রাস করে ফেলেছে! গত ১৬ সেপ্টেম্বর, (২০২৩), আনোয়ারা কর্ণফুলীর বড়উঠানে, প্রত্নতাত্তি¡ক খননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধপন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে আসছে! কানাডার আবাসিক স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের গণকবর উদ্ধারের ঘটনার মতো চট্টগ্রাম বৌদ্ধ পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখছে,প্রত্নতাত্তি¡ক খননে! চট্টগ্রাম দেয়াং পাহাড়ের মাটিতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে পন্ডিত বিহারের ধ্বংসের স্মৃতি চিহ্ন। এ পুরাকীর্তি পুন:রুদ্ধার করা হলে আনোয়ারা উপজেলাসহ গৌরবময় চট্টগ্রামের সুনাম, সুখ্যাতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আরেকটি মাইলফলক ঘটনার জন্ম দেবে। আসতে শুরু করেছে সফলতা, বেরিয়ে আসছে ১২’শ বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তির নিদর্শন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যদি ন্যায়সঙ্গত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের যুদ্ধও ন্যায়সঙ্গত (Hill Voice -সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩)! [গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ বন্ধ কর’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন অ্যাগেনস্ট অ্যাট্রোসিটিস অন মাইনরিটি ইন বাংলাদেশ (ক্যাম্ব) ও অল ইন্ডিয়া রিফিউজি ফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে ‘মানবাধিকার লংঘন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন’ বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি এখানে প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করা হলো।

পার্বত্য চুক্তি করেছে এই সরকার, সেই সরকার এখনো ক্ষমতায় আছে, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর চুক্তি হয়েছে, ২৫ বছর পার হয়ে গেছে, ওই মানুষগুলো এখনো নিজের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের সংখ্যা ৯২,৫০০+ পরিবার। বাংলাদেশে একটা পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা ৫.৫। তাহলে ৯২,৫০০-কে ৫.৫ দিয়ে গুণ করে দেখেন, কত মানুষ হয়। আর তার সাথে শরণার্থী যারা ফিরে এসেছেন। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ তো তাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারেননি। এই যদি হয় বাস্তবতা, চুক্তি করার ২৫ বছর পরে, তারপরে মানুষের জীবনে আর কী বাকী থাকে!

এই কথাগুলো বলছি, আমার নাম শুনে বুঝেছেন আমি একজন বাঙালি এবং বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত। বাঙালি জাতি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম জাতি। বাঙালি হিসেবে আমি খুবই গর্বিত। কিন্তু আমি মনেকরি, বাঙালির যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, ন্যায্য অধিকার আছে, পাকিস্তানীরা সেই অধিকার লংঘন করেছিল বলেই বাংলাদেশের বাঙালি সেদিন যুদ্ধে নেমেছে এবং পাকিস্তানের মত সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার বাঙালিসহ ভারতের সমস্ত জাতির মানুষ আমাদেরকে সমর্থন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের সংগ্রাম ও অত্যন্ত ন্যায্য সংগ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদেরকে বলেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী। একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। আমি নিজে এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। আমি আমার পিএইচডি করেছি এটা নিয়ে। আমি সমস্ত ডকুমেন্ট পড়ার চেষ্টা করেছি এবং সেনাবাহিনীর কাছে যে ডকুমেন্ট আছে সেগুলোও সার্চ করার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধুরা সেনাবাহিনীতে আছে।

আমি প্রথমেই ঢাকায় গতকাল থেকে শুরু হয়ে আজকে যে সমাবেশ চলছে তার সাথে সংহতি ঘোষণা করছি, ঢাকায় থাকলে আমিও সেখানে থাকতাম। আর আজকে এখানে যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন, তার সাথেও সংহতি প্রকাশ করছি। আমি প্রথমেই বলি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শরণার্থী আসা শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে। কিন্তু তখন ততটা হয়নি, প্রধানত হয়েছে যখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরি হলো। সে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে আবাদযোগ্য ভ‚মি তার ৪০ শতাংশ পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। আটটা উপজেলা বলি আমরা, আপনাদের আটটা বøকের সমান জায়গা পানির নীচে তলিয়ে গেছে, রাজার বাড়িও পানির নীচে তলিয়ে গেছে এবং সেখান থেকে এক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওখান থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, সে বিদ্যুতের এক কণা পরিমাণও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ ভোগ করতে পারেনি। যে এক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেন, সেই এক লক্ষ মানুষের মধ্য থেকে ৪০ হাজার মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে এসেছেন। সেটা হচ্ছে ষাটের দশকের গোড়ার কথা। ১৯৬১, ১৯৬২, ১৯৬৩, ১৯৬৪- এই সময়ের কথা।”

১৬৬৬ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খান, আরাকানীদের পরাজিত করে বৌদ্ধ চট্টগ্রাম দখলে নেন। মহাকালের বিবর্তনের ধারায় চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন। হিন্দু মুসলমান রাজনীতির ইতিহাস বলছে, বৌদ্ধ বাংলাদেশে বৌদ্ধ চট্টগ্রাম মাটির নিচে লুকানো কেন? বাংলাদেশে মাটি খুঁড়লে বৌদ্ধ প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন। হিন্দু মুসলমান রাজনীতির বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞে বৌদ্ধ নগরী মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে মাটির নিচে লুকানো এবং চট্টগ্রাম বৌদ্ধ পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় মাটির নিচে লুকানো কেন?

পাকিস্তান ও সাতচল্লিশের ধর্মান্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে স্বাধীনতার অভ্যুত্থান এবং আইনের শাসনে বাংলাদেশে ধর্মান্ধরা কোরাণে পদচিহ্ন দিয়ে বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞ Kil PSYCHOLOGICALLY মনুষ্যত্ব বিকাশে মুসলমান ধর্ম নয়! হিংসায় উন্মত্ত ধর্মান্ধ মুসলমানদের উগ্র সা¤প্রদায়িকতায় শান্তিকামী বৌদ্ধদের অহিংসা পরম ধর্ম! ‘চার্টার অব রাইটস’ সবারই অধিকারকে রক্ষা করে। বৌদ্ধদের ভ‚মি (ভারত, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া) দখল করার নাম ধর্মান্ধ ইসলাম ধর্মের বিকৃত ও মনগড়া ব্যাখ্যাদানকারী উগ্রবাদীদের মুসলিম ধর্ম! বাংলাদেশে বৌদ্ধদের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ধর্মান্ধ মুসলমানদের উগ্র সা¤প্রদায়িকতায় শান্তিকামী বৌদ্ধদের এই অস্তিত্বের সংকটের আবহমান বেদনার অনুভব। কিংবা পাকিস্তান ও সাতচল্লিশের ধর্মান্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে স্বাধীনতার অভ্যুত্থান এই চরিত্রগুলোতে সংস্কার আন্দোলনের ছায়া থাকলেও তারা কিন্তু কেউই হিংসায় উন্মত্ত ধর্মান্ধ মুসলমানদের উগ্র সা¤প্রদায়িকতায় এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারেনি!

ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে ১২০২ সালে বিদেশী তুর্কী সন্ত্রাসী মুসলমান বখতিয়ার খিলজি বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ করে গণহত্যায় চারশত বছরের (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বৌদ্ধ রাজত্ব বাংলাদেশ দখল করেছিল!! ধর্মান্ধ জামাতের বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন! এবং জামাত হিন্দু বৌদ্ধদের মুসলমান বানষচ্ছে! হিন্দু ও বৌদ্ধগণকে মুসলমান বানষতে কোরান অবমাননার গুজব! হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে ইসলাম ধর্মকে মহিমান্বিত করতে হিন্দু বৌদ্ধদের ভারত ভ‚মি ও দেশ দখল করার নাম পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মুসলিম ধর্ম!

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় এই নিদর্শন অনুসন্ধানে গত ১৬ সেপ্টেম্বর, আনোয়ারা কর্ণফুলীর বড়উঠানে সম্ভাব্য স্থানে প্রতœতাত্তি¡ক খনন কাজ শুরু হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই পুরাকীর্তি অনুসন্ধান এতোটা সহজ কাজ ছিল না,পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে পথচলার পথ পরিক্রমায় বর্ণিত স্থানে প্রত্নতাত্তি¡ক খননের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলদ্ধি করে পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ‘জ্ঞানতাপস’ ড. জিনবোধি বৌদ্ধ ভিক্ষু মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্নতাত্তি¡ক অধিদপ্তরের তত্বাবধানে সর্বপ্রথম সরকারিভাবে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে নানান জটিলতার পর সেটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর আলোর মুখ দেখে। এক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

এই ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা, এ সম্বন্ধে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা সামগ্রিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পটিয়ার কৃতি সন্তান প্রয়াত নাট্যকার আহমেদ কবির নানা গবেষণা করে প্রাপ্ত বাস্তব তথ্যের আলোকে রচনা করেন নাটক “পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়”, আর সেটি মঞ্চস্থ করে সৃষ্টি হউক সচেতন মানুষ এই স্লোগানে কাজ করা নাট্যসংগঠন “নাট্যাধার”। এই নাটকটি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি নয় বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি, এমপি মহোদয়ের শহর চাঁদপুরেও মঞ্চায়ন করে পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জনমত গড়ে তুলে।আমার কাছে গর্বের বিষয় আমি নিজেও সেই নাটকে অনেকগুলো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগের পাশাপাশি কয়েকবার প্রস্তাবিত পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত স্থান সহ খনন শুরু হওয়া জায়গা পরিদর্শন করার। এ পুরাকীর্তি পুন:রুদ্ধার করা হলে আনোয়ারা উপজেলাসহ গৌরবময় চট্টগ্রামের সুনাম, সুখ্যাতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আরেকটি মাইলফলক ঘটনার জন্ম দেবে।

পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখছে, প্রত্নতাত্তি¡ক খননে আসতে শুরু করেছে সফলতা, বেরিয়ে আসছে ১২’শ বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তির নিদর্শন। এই নিদর্শন অনুসন্ধানে গত ১৬ সেপ্টেম্বর, আনোয়ারা কর্ণফুলীর বড়উঠানে সম্ভাব্য স্থানে প্রত্নতাত্তি¡ক খনন কাজ শুরু হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই পুরাকীর্তি অনুসন্ধান এতোটা সহজ কাজ ছিল না, পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে পথচলার পথ পরিক্রমায় বর্ণিত স্থানে প্রত্নতাত্তি¡ক খননের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলদ্ধি করে পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ‘জ্ঞানতাপস’ ড. জিনবোধি ভিক্ষু মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্নতাত্তি¡ক অধিদপ্তরের তত্বাবধানে সর্বপ্রথম সরকারিভাবে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে নানান জটিলতার পর সেটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর আলোর মুখ দেখে। এক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া নৈতিক অপরাধ এবং “১৬৫৯ সালে এই রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে যোগদান থাকায় মহাকবি আলাওলের ৫০ দিনের কারাবাস হয়েছিল (নয়া দিগন্ত, ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮)।”)। তখন থেকে রোহিঙ্গাদের সাথে আরাকানের শাসকদের সাথে শত্রæতা শুরু হল। ভ‚মি ও দেশ দখল করার নাম বাংলাদেশে মুসলমান ধর্ম এবং বৌদ্ধ বাংলাদেশে (BAKHTIAR KHILJI) বৌদ্ধ চট্টগ্রাম!! চর্যাপদে কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন! ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)” থেকে ঐতিহাসিক ‘বাঙালি’ শব্দের অভ‚তপূর্ব সংযোজন হয়েছিল এবং (দি বুক অব এনলাইটেনমেন্ট) ৪৯ নম্বর কবিতায় সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবি®কৃত হল। পূজনীয় ব্যক্তির প্রতি সন্মান প্রদর্শন বাঞ্ছনীয়।

জিতু চৌধুরী ব্যাখ্যা করেছেন, “দশম শতকের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম পট্টিকারা (বর্তমান পটিয়া) চন্দ্রবংশের রাজাদের শাসনাধীন ছিল। এই চন্দ্র রাজবংশের সাথে আরাকানের চন্দ্ররাজ বংশের বৈবাহিক সম্পর্ক তথা জ্ঞাতি সম্পর্ক ছিল। পট্টিকারা চন্দ্র রাজবংশের শাসনকালে চট্টগ্রামে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তিব্বত বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত শরচ্ছন্দ্র দাস (১৮৪১-১৯৯১ সাল) ও লামা তারানাথ তিব্বতি গ্রন্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যায়। শুরুর দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করা হতো। এর প্রধান অধক্ষ্য ছিলেন পটিয়া উপজেলার চক্রশালা নিবাসী সন্তান তিলপাদ বা প্রজ্ঞাভদ্র। মগধের প্রধান আচার্য নারোপা বা নারোতপা তার কাছে দীক্ষা গ্রহন করেন। খ্যাতনামা বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ এ বিশ্ববিদ্যলয়ে পরিদর্শক রূপে অথবা অধ্যাপক ছিলেন, তাদের মধ্যে ধর্মশ্রী, জ্ঞানপা, বুদ্ধপা, অনঙ্গবজ্র, সবরিপা, লুইসা, লাড়পা, অবধুতপা, অমোঘনাথ প্রমুখ। পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।

পণ্ডিত শরচ্চন্দ্র দাস অনুমান করেন যে, চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লাস্থ জামে মসজিদের নিকটস্থ পাহাড়ে এই পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় এর অবস্থান । আবার কারো কারো মতে, পটিয়ার চক্রশালায়, দেয়াঙ পাহাড়ে ঝিওরী, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়শীর্ষে, মীরশ্বরাই থানার পাগলপুরের ছুটিখা’র দীঘির সন্নিকটবর্তী এলাকায় এর অবস্থান ছিল বলে পণ্ডিতের ধারণা। পণ্ডিত শরচ্চন্দ্র দাস উক্ত লিপির তারিখ মগী সন ধরে (৯০৪ মগী+৬৩৮) (শোর, ২৯৯-৩০২) ১৫৪২ সালে স্থির করে চাÐিলা রাজাকে আরাকান রাজ মিনবিন জৌবক শাহার (১৫৩১ – -১৫৫৩) অধিকৃত চট্টগ্রামের সামন্ত রাজা বলে চিহৃত করেছেন। ড. সুনীতিভ‚ষণ সমর্থন করেন কিন্তু ড. আব্দুল করিম বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়, কারণ রাজার নাম উল্লেখ ছাড়া কোন সামন্ত রাজার লিপি উৎকীর্ণ করার নিয়ম নেই। ড. সুনীতিভ‚ষন বড়ুয়া তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলেন পূর্নচন্দ্র (সামন্ত রাজা) ৭৮৮-৮২৮ খৃষ্টাব্দ ও সুবর্নচন্দ্র রাজা (সামন্ত রাজা) ৮২৮-৮৬৮খৃষ্টাব্দ বৌদ্ধ নথিপত্রে পাওয়া। দীপক বড়ুয়া সৃজন তাহার হাজার বছরের বাঙ্গালী বৌদ্ধ বইয়ে ও উল্লেখ করেছেন।

ডা: রবীন্দ্র নাথ বড়ুয়া তাহার বইতে লিখেছেন সামন্ত বংশের অধিপতিরা এক সময় ধুংশাং জমিদারে পরিনত হয়, তিনি আরো উল্লেখ করে বলেন, তৎকালীন কলকাতা বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমিতি বা বেঙ্গল বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের আজীবন সাধারণ সম্পাদক কর্ত্তালা নিবাসী প্রয়াত ডা: শান্ত কুমার চৌধুরী’রা সামন্ত বংশের বংশধর। ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের কোলে এক গণ্ডগ্রাম ঝিওরী। প্রত্নতাত্তি¡ক আবিষ্কারের ইতিহাসে সারা উপমহাদেশে এখন ও উজ্জ্বল হয়ে আছে। ঝিওরী গ্রামের সফরআলী বলীর ভিটে মাটি খোড়ার সময় ৬৬টি পিতলে বৌদ্ধ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের অধ্যাপক ধর্মবংশ মহাথের দীপংকর নামে এক ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে উক্ত বাড়ীতে যান কিন্তু সফর আলী বৌদ্ধ মূর্তি দিতে অস্বীকার করলে উক্ত আবিষ্কারটি পত্রিকায় প্রকাশ করে দেন। মনে করা হয় উক্ত গ্রামে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বলে সকল প্রকারের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটান। পরবর্তীকালে বিশ্ববিশ্রুত ড. বেনী মাধব বড়ুয়া ও উমেশ চন্দ্র মুৎসুদ্দী প্রমুখ পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তারা মনে করেন, আন্দরকিল্লার রঙমহল পাহাড় এলাকার, যেখানে জেনারেল হাসপাতাল নির্মানকালে একটি বিরাট বৌদ্ধ মূর্তি সহ বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া যায়। আবার কারো কারো মতে পটিয়া চক্রশালায় পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থান ছিল তবে ঝিওরী গ্রামটিতে এই বিশ্ববিদ্যলয়টির অবস্থান স্থল যে দেয়াঙ পাহাড় তার প্রমান অনেকাংশে নিশ্চিত করে দেয় ।”

১৬ই অক্টোবর ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের আদেশে বাংলা দ্বিখÐিত হল। ঐ দিনই বিকেলে কলকাতায় আপার সার্কুলার রোডে ফেডারেশন হলের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেন পণ্ডিত ও নেতা আনন্দমোহন বসু। অনুষ্ঠানের শেষে যে বিশাল জনসমুদ্র এগিয়ে চলেছিল, তার অগ্রভাগে ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন! “আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে। ও হিন্দু আমি মুসলিম না করে বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন শুনেছেন? মুসলমান রাজনীতি হিন্দুত্ববাদীরা মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাকে গ্রাস করে ফেলেছে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, কিন্তু যেভাবে আমাদের সংগ্রাম ন্যায্য ছিলো, আমি মনেকরি, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খুমী, খিয়াং, বমসহ যে জাতিগুলো বাস করে তাদের যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামও অত্যন্ত ন্যায্য সংগ্রাম। কারণ আমাদের বাঙালিদের সংগ্রাম যদি ন্যায্য হয়ে থাকে, যে কারণে ন্যায্য, কারণ আমরা আমাদের পরিচয়ের স্বীকৃতি চেয়েছি, আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা চেয়েছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও তার পরিচয়ের স্বীকৃতি চায়, তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা চায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের সংগ্রামও অত্যন্ত ন্যায্য সংগ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদেরকে বলেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী। একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। আমি নিজে এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। আমি আমার পিএইচডি করেছি এটা নিয়ে। আমি সমস্ত ডকুমেন্ট পড়ার চেষ্টা করেছি এবং সেনাবাহিনীর কাছে যে ডকুমেন্ট আছে সেগুলোও সার্চ করার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধুরা সেনাবাহিনীতে আছে।

সেই মানুষগুলো যারা দেশ ত্যাগ করেছেন, তারা উত্তর-পূর্ব ভারতের দু-তিনটা রাজ্য ঘুরতে ঘুরতে, পায়ে হেঁটে, অনেকে শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছেন অরুণাচল রাজ্যে। এবং আপনারা যদি ১৯৬১-৬৪ থেকে হিসাব করেন, তাহলে আজকে কত বছর, প্রায় ৭০ বছর, এত বছর পরেও সেই মানুষগুলো এখনো ভারতের নাগরিকত্ব পাননি। আসার পথে তারা অনেকেই মারা গেছেন এবং এখানে এসে তারা আশ্রয় পেয়েছেন, কিন্তু তারা স্টেটলেস সিটিজেন (রাষ্ট্রহীন নাগরিক)। সেই ৪০ হাজার মানুষের সংখ্যা এখন এক লক্ষের বেশি হয়ে গেছে। মানুষ কী দুর্ভোগে রয়েছেন!

কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরা তো বাংলাদেশের মানুষ, কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কথা ভুলে গেছে। যেমন এই ঘরে আপনারা অনেকেই আছেন, যারা বাংলাদেশের মানুষ, যারা সা¤প্রদায়িক দেশ বিভাগের কারণে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে এদেশে এসেছেন। যে মাটিতে আপনাদের নাড়ি পোতা, সেই মাটি ছেড়ে এসেছেন। আপনাদের কথাও বাংলাদেশ ভুলে গেছে। আমি খুব কষ্টের সাথে কথাগুলো বলছি। কারণ ‘দেশভাগ’ বাংলাদেশে কোনো আলোচ্য বিষয় নয়। এমনকি যে একাডেমিক চর্চা হয়, সেই একাডেমিক চর্চাতেও ‘পার্টিশান’ আলোচ্য বিষয় নয়। এমনকি কবিতা, গল্প, সাহিত্যের মধ্যেও খুবই সামান্য তার রিফ্লেকশান। কিছু আছে, যারা এদেশ থেকে বাংলাদেশে গেছেন, যেমন হাসান আজিজুল হক কিংবা আনিসুজ্জান, তাঁদের লেখায় কিছু পাবেন। এছাড়া তেমন কোনো রিফ্লেকশান আমরা সাহিত্যেও পাই না।

এই যে দুর্ভাগ্য, এই যে নাড়িছেঁড়া মানুষগুলো আসেন এখানে, এবং ওখানে শুধু চাকমারা না, তার আগে ময়মনসিংহে, ওখানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের গভর্ণর ছিলেন মোনায়েম খান, মোনায়েম খানের নিজের জেলা ময়মনসিংহ, এই ময়মনসিংহেরই সীমান্তবর্তী গারো, হাজং- এনারা থাকেন, সেইখানে একেবারে মুসলিমলীগের গুন্ডা, তার সাথে সেনাবাহিনী নামিয়ে সেখান থেকে হাজংদেরকে এবং গারোদেরকে উৎখাত করা হয়েছিল। হাজংরা ছিলেন হিন্দু, গারোরা ছিলেন খ্রিশ্চিয়ান বেশির ভাগ। সেই গারো খ্রিশ্চিয়ানরা দেশান্তরিত হওয়ার পরে আন্তর্জাতিকভাবে খ্রিশ্চিয়ানরা সংগঠিত হয়েছিল। পরে পাকিস্তান সরকার ওদেরকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে। বর্ডারের কাছে মাইক লাগিয়ে আহŸান করা হয়, আপনারা আসুন বলে। হাজংরা হিন্দু ছিলেন, তারা ফিরতে পারেননি এবং ওখান থেকে মেঘালয়ের তুরা, ওখান থেকে যেয়ে তারা অরুণাচলে আশ্রয় নিলেন। তারাও এখনো নাগরিকত্ব পাননি। এই হচ্ছে এই রিফিউজিদের অবস্থা।

বাংলাদেশ থেকে তারপরেও আবার রিফিউজি এসেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন সংঘাত শুরু হয়েছে। তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চাপে সেখান থেকে প্রায় এক লক্ষ মানুষ এখানে ভারতে এসেছে রিফিউজি হিসেবে। মূলত চাকমা এবং অন্যান্য জাতির মানুষ। এবং তাদের মধ্য থেকে ৬৫ হাজার মানুষ ফিরে গেছে। বাকীরা ফিরে যেতে পারেননি। কিন্তু যে ৬৫ হাজার ফিরে গেছেন, সেই ৬৫ হাজার মানুষকে কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়ে, লিখিত চুক্তি মোতাবেক তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে পুনর্বাসন করার কথা ছিলো। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে গৌতম দা বললেন, ঊষাতন দাও সেটা একটু ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটা হচ্ছে, এই ৬৫ হাজার মানুষ তাদের নিজের বাড়িঘরে জায়গা-জমিতে ফিরে যেতে পারেননি। এটাতো একটি দিক।

আরেকটা দিক হচ্ছে, এই যে যুদ্ধের ২০ বছর, এই ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরে যে আদিবাসীরা ছিলেন, এই আদিবাসীদের মধ্যে অনেক মানুষ যারা ছিলেন তারা তো নিজের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। যেমন এক কোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে এসেছিলেন, ভারত সরকার জায়গা দিয়েছিলেন, তেমনি আবার প্রায় ৪ কোটি মানুষ দেশের ভেতরে উদ্বাস্তু ছিলেন। আমি নিজে একজন উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্য ছিলাম। তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় এক লক্ষ মানুষ শরণার্থী হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দেশের ভেতরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ছিলেন। সেই উদ্বাস্তুরা, তারাও কিন্তু পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নিজের জমিতে, নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা। সেটার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেটা কিন্তু রাষ্ট্র করেনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কখনো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়নি। তারা কী চেয়েছে? তারা চেয়েছে যে, সংবিধানের মধ্যে তাদেরকে একটু জায়গা দেয়া হোক। যখন বাংলাদেশের সংবিধানও, খুবই দুর্ভাগ্যজনক, যখন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সময়ে যে সংবিধান গ্রহণ করা হলো, সেই সংবিধানেও তাদেরকে জায়গা দেওয়া হলো না। বলা হয়েছে, এদেশের জনগণ জাতিতে বাঙালি। সবাই বাঙালি? তাহলে ঊষাতন তালুকদার বসে আছেন, উনিও কি বাঙালি? বাংলাদেশ এখন কিন্তু ৫০টা আদিবাসী জাতিকে, আদিবাসী নামে নয়, অন্য নামে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ নামে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার মানে, বাঙালি ছাড়াও আরও ৫০টা জাতি আছে। এই ৫০টা জাতিকে বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সেই জাতিগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য যে কমিটি করেছিলো, সেই কমিটির প্রধান ছিলাম আমি। আমি এবং আমার টিম ৭৮টা জাতিকে চিহ্নিত করেছি। তার থেকে বাংলাদেশ সরকার ৫০টা জাতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার মানে, যে স্বীকৃতিটা তারা ৫২ বছর পরে এসে দিলো বা ৫০ বছর পরে এসে দিলো, সেই স্বীকৃতিটা যদি ৭২-এ দেয়া হতো, তাহলে তো যুদ্ধের দরকার হতো না। এবং সরকার কী করেছে? সমতল থেকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ বাঙালি মুসলমানকে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসিয়ে দিলো এবং সেখানে তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ছত্রছায়ায় অন্যদের উপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, জমিজমা দখল করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ তারা কী করবে? জীবন বাঁচানোর জন্য তারা সেদিন প্রতিরোধে নেমেছে এবং নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিরোধ, নিজের আত্মপরিচয় রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ন্যায়সঙ্গত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যদি ন্যায়সঙ্গত হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের যুদ্ধও ন্যায়সঙ্গত। এটা রাষ্ট্রীয় পলিসির ব্যাপার। রাষ্ট্রীয় পলিসি যদি ডাইভারসিটিকে স্বীকার করে, রাষ্ট্র যদি প্লæরালিটিকে স্বীকার করে, তারা যদি বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে, এদেশে একটা জাতির মানুষ না, এদেশে বহু জাতির মানুষ আছে, একটা ধর্মের মানুষ না বহু ধর্মের মানুষ আছে, যেমন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আরও অন্যান্য মানুষ আছে, বাঙালির পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খুমী, খিয়াং, সাঁওতাল, ওঁরাও, গারো, মনিপুরী, কত জাতি আছে, এই সকলের স্বীকৃতিটা যদি সংবিধান দেয়, তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী বন্ধুরা, তারা চেয়েছেন, সংবিধানের মধ্যে একটু জায়গা দিন। তারা বলেছে আমাদেরকে একটু আশ্রয় দিন। তারা কী চান? তারা চান, সংবিধানে দুই ধরনের অন্তর্ভুক্তি। একটা অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে, বাঙালি ছাড়াও এদেশে আরো অনেক জাতি আছে- এই কথাটা লেখা হোক এবং তার একটা তালিকা, একটা সিডিউল, আপনাদের যেমন আছে এসটি সিডিউল, তারা চান এরকম একটা সিডিউল করে সবাইকে যুক্ত করে নেওয়া হোক। এই সিডিউল তো ছিলো। এমনকি পাকিস্তানের ৫৬ সালের সংবিধানেও এই সিডিউল ছিলো। সেই সিডিউল ভারতের সংবিধানে তুলে ধরা হয়েছে। আপনাদের এখানে এসটি আছে, এসসি আছে, ওযিসি আছে।

বাংলাদেশে কিছুই নাই। সেখানে কোনো এসটি নাই, এসসি নাই, ওযিসি নাই, তো বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ তাদের কি নাগরিক অধিকার নাই? তাদের কি সমান তালে এগিয়ে আসার সুযোগ থাকা উচিত নয়? তাদের জন্য কি বিশেষ ব্যবস্থার দরকার নাই? তাদের জন্য কোটার দরকার নাই স্কুলে, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে, চাকরিতে? নিশ্চয়ই দরকার আছে। কারণ পিছিয়ে যারা পড়ে আছে তাদেরকে সমানতালে এগিয়ে আসার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। রাষ্ট্র যদি এগুলো না করে, রাষ্ট্র যদি ডাইভারসিটি, প্লæরালিটিকে ডিনাই করে, তাহলে সেখানে মানুষের যে সমঅধিকার, সেই সমঅধিকার লংঘিত হয়। এদিক থেকে আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, এটা শুধু জাতিগত কর্তৃত্ব না, তার সাথে যে অভিযোগটা উঠেছে, খুবই সত্য অভিযোগ, সেখানে আসলে ধর্মীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

খুবই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যারা এক সময় অসা¤প্রদায়িকতার সংগ্রাম করে পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসা¤প্রদায়িকতা বিকাশে কাজ করেছেন তারাই আজকে দেখা যাচ্ছে যে, তারাই আজ সা¤প্রদায়িকতাবাদীদের পৃষ্টপোষকতা করছেন। বাংলাদেশ কিন্তু সা¤প্রদায়িকতার পথে এগুলে সামনে এগুতে পারবে না। ভারতের জন্যও বিপদের কথা বলছি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি উগ্র সা¤প্রদায়িকতাবাদীদের দখলে চলে যায় তাহলে যেটা হবে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে অশান্তি ছিলো ভারতে, সেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অশান্তিকে উস্কে দেয়ার মত পরিস্থিতি আবার তৈরি হবে। এই বিষয়টা আমার মনে হয় বিবেচনায় আনা উচিত। কাজেই আমি মনে করি, আসলে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য চিরজীবী হওয়া দরকার এবং আপনারা, বিশেষ করে যাদের পূর্বপুরুষের নাড়ি বাংলাদেশে পোতা এবং এদেশের মানুষ যেখানেই জন্ম হোক, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের আমাদের পাশে, বিপদের দিনে আপনারা যেমন আগে এসে দাঁড়িয়েছেন, এখনো এসে দাঁড়াবেন।

বাংলাদেশ থেকে কিন্তু বহু মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, শুধু ভারতে আসছেন না, সারা পৃথিবীতে যাচ্ছেন এবং কেন যাচ্ছেন? শুধু কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন না, প্রধানত যেজন্য সংঘ্যালঘুরা যাচ্ছেন, সেটা হচ্ছে নিরাপত্তার অভাব। এটা বুঝতে হবে। দেশের খারাপ কথা বলতে ভালো লাগে না, কষ্টবোধ হয়। কিন্তু আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে দেখতে চাই।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE, (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!