বনানী বাবলি : গ্রেট লেকের রত্ন হলো মেনিটুলিন দ্বীপ যেটা অন্টারিও প্রভিন্সের কানাডাতে অবস্থিত। লেক হুরণ ২৭৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং এটা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফ্রেশ ওয়াটার বা মিষ্টি পানির বা মিষ্টি জলের দ্বীপ। এখানে একশত দশটি হ্রদ আছে শুধু একটাই দ্বীপে, যেটা পৃথিবীর আর কোনো দ্বীপে দেখা যায় না। মেনিটুলিন দ্বীপটি হলো এমন একটি দ্বীপ যেখানে শহর থেকে দূরে পালিয়ে যাওয়া যায় কিছু আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা কুঁড়ানোর জন্য। অথবা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য বা প্রকৃতির নীরব নিঃশব্দ কথা জেনে নেওয়া যায় এখানে এসে।

এই দ্বীপটি নানা কারণে একটা আবেদন তৈরী করেছে যা এখানে প্রায় দুই ডজনের বেশি ছোট ছোট স্থায়ী আদিবাসী, উপজাতি, ফার্স্ট ন্যাশন সেই বরফ যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত। একশতের ও বেশি ইনল্যান্ড হ্রদ আছে এটার উপক‚লে। আরো আছে এখানে নানা রকমের কানাডার ঐতিহ্য পূর্ণ রঙিন ইতিহাস, পাহাড়ের গল্প, অজানা গুহা, ঝর্ণা প্রপাত, ফসিল, বাতিঘর, বিবিধ রকমের সংস্কৃতির উপাখ্যান, অসংখ্য নদী, সবুজ বনাঞ্চল, টিপি, চাষাবাদ, বন্ধুত্ব পূর্ণ লোকবসতি, ঐতিহ্যগত উৎসব, গরমকালের নানারকম ফেস্টিভ্যাল এবং আদিবাসীদের ‘পাও পাও’ উৎসব। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা অভিবাদন করে বলে, ‘হ্যালো’, ‘আন্নি’ এবং ‘বনজুর’ (এটা ফ্রেঞ্চ শব্দ এবং ইংরেজিতে যেটা হয় হ্যালো)।

সুধী পাঠকবৃন্দ, ২০০৯ সালের অগাস্ট মাসে, আমরা যখন এখানে এসেছিলাম তখন এখানে কোন নেট কানেকশন ছিলো না। তাই না ছিলো কোন সেল ফোন, না ইন্টারনেট এখানকার স্থানীয়দের জন্য কিংবা টুরিস্টদের জন্য। আমরা যখন রাতের সৌন্দর্য দেখতে মোটেল থেকে বের হলাম তখন দেখলাম এক অপূর্ব দৃশ্য। আমরা মাথা উঁচু করে যখন রাতের আকাশের দিকে তাকালাম, তখন আকাশটাকে খুব নিকটে মনে হলো এবং আরো মনে হলো ওই ধূসর ভেলভেট চাদরের রাতের আকাশের ঝলমলে তারাগুলিকে ধরতে পারি একটু হাত বাড়ালেই।

বায়ু দূষিত না হওয়ার কারণে আমাদের দূরবীনের প্রয়োজন হয়নি সেই সারি সারি ডায়মন্ডের মতো তারাগুলিকে দেখতে। এটা ছিল আমাদের জন্য একটা অমূল্য স্মৃতি যেটা আমার উপভোগ করেছিলাম খালি চোখে। টুরিস্টরা কেউ যদি হোটেল বা মোটেলে না থেকে এই বৈচিত্র্যময় জায়গাকে আরো বেশি উপভোগ করতে চায় তাহলে তারা এখানকার রেন্টাল গুহাগুলিতেও রাত্রি যাপন করতে পারেন। এই দ্বীপে আসার সাথে সাথে অনুভব করা যায় একটা নরম মিষ্টি বাতাস যেটা অন্যান্য বড়ো শহর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

এখানকার অধিবাসীরা বড্ডো সহজ সরল। মোটেল থেকে বের হলাম সকালের প্রাতরাশ কোথায় পাওয়া যেতে পারে সেটা খুঁজতে। গাড়ি নিয়েই যেতে হলো অরণ্যের মাঝে আঁকা বাঁকা পথে। পেয়েও গেলাম একটা মাঝারি আকারের ঘর যেটাকেই বানানো হয়েছে ছোট্ট চায়ের দোকান, ঠিক আমাদের দেশের পল্লী সমাজে এমনটি দেখা যায়। ‘আনা’ বলে আমাদের সম্বাষণ করলেন তাঁরা আমরাও বললাম, ‘আনা’। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এলাম কিংবা কোথায় যাবো।

এই দ্বীপে যেতে হলে অক্টোবরের মধ্যে একটা বিরাট ফেরিতে করে যেতে হয় এবং ভ্রমণকারীদের কয়েকশত গাড়িগুলিকেও ফেরিতে তুলে নিতে হয়। এই ফেরিতে চায়ের স্টল থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলার প্লে এরিয়া বাথরুম, ছোট ছোট দোকান এবং ভলান্টিয়ার রয়েছে যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য।

এই ফেরিতে উঠতে হয় টোবড়মুড়ি শহর থেকে যেটা আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়। টরন্টো শহর থেকে প্রায় তিনশত কিলোমিটার দূরে এই টোবড়মুড়ি। সাধারণত প্রায় দুই ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছানো যায় যদি স্রোত অনুক‚লে থাকে। অথবা নর্থার্ন সিটি স্যাডবেরী থেকেও যাওয়া যায়।

এছাড়া স্যাডবেরীতে একটা ব্রিজ আছে যেটা খোলা বা বন্ধ থাকার নিয়ম আছে সেটা জাহাজ চলাচল করার সময়সূচির উপরে নির্ভর করে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ব্রিজটা পানির উপরে উঠে যায় নিচের দিকে জাহাজ পার হয়ে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া এই দ্বীপে দুইটা ব্যক্তিগত বিমান নামার জন্য এয়ারপোর্টও আছে। আর কেউ যদি খুবই এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাহলে ক্যানু দিয়ে অন্টারিও অন দা লেক ধরে এখানে পৌঁছতে পারেন। কানাডা একটা আশ্চর্য সুন্দর দেশ।

টরন্টো, কানাডা