স্বপন কুমার সিকদার : ১৯৪৫ সনের ৬-ই আগষ্ট একটি আমেরিকান প্লেন জাপানের হিরোশিমায় কোন সাইরেন বা সতর্ক বানী ছাড়াই পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে। ইহা ছিল এক অভ‚তপূর্ব ঘটনা। এই বোমা নিক্ষেপের ফলে শহরের কেন্দ্রস্থলে চার বর্গ মাইলের অধিক জায়গা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়। প্রায় নব্বই হাজার মানুষ সাথে সাথে মৃত্যু বরন করে এবং প্রায় আরো চল্লিশ হাজার মানুষ মারাত্মক ভাবে আহত হয় যার অধিকাংশ রেডিয়েশনের কারনে মারা যায়। এই বিভৎস ঘটনার তিন দিন পর আরো একটি পারমানবিক বোমা জাপানের নাগাশাকিতে নিক্ষেপ করা হয়। ফলে নাগাশাকির প্রায় সাঁইত্রিশ হাজার লোক সাথে সাথে মারা যায় এবং প্রায় তেতাল্লিশ হাজার মানুষ মারাত্মক ভাবে আহত হয়। এই দুই হত্যাযজ্ঞে জাপানের প্রায় দুই লক্ষ বেসামরিক মানুষ মারা যায়। ১৯৪৫ সালের আগাষ্টের চৌদ্দ তারিখে জাপান মিত্রশক্তির কাছে নিঃশর্তভাবে যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় এবং ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরের দুই তারিখে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।উক্ত দুই বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর বিশ্ববিবেককে ভাবিয়ে তোলে যে, যুদ্ধে জয়ের জন্য, আদৌও হিরোশিমা ও নাগাশাকিতে আমেরিকার পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল কিনা। জাপান কার্য্যত: ১৯৪৫ সনের জুন থেকেই সামরিক দিক থেকে প্রায় পরাজিত ছিল। জাপানের ভরসা বিমান বাহিনী প্রায় বিধ্বস্ত, একদা প্রচণ্ড শক্তিশালী জাপানের ইম্পেরিয়েল নেভীর তেমন কিছু অবশিষ্ট ছিল না। ইউএস যুদ্ধ বিমানগুলো পুরো আকাশ দখল করে রাখে এবং বোমারু বিমান গুলো বৃষ্টির মতো বোমা ফেলে জাপানের শহরগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করে। এক কথায়, জাপান প্রায় সম্পূর্ন রুপে পর্য্যদস্তু হয়ে পড়ে। হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের পূর্বে, আমেরিকার এয়ারফোর্স জেনারেল কারটিস লি মে দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন, আমেরিকান বৈমানিকেরা জাপানীদের ‘প্রস্তর যুগ’-এ ফিরায়ে নিচ্ছিল। বিষয়টি স্বীকার করে আমেরিকান বিমান বাহিনীর কমান্ডিং জেনারেল হেনরী এইচ. আরনল্ড ১৯৪৯ সনে এক স্মৃতিচারনে বলেন, “the Japanese were alreadz on the verge of collapse” যাহা জাপানী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফুমিমারো কোনোয়িও নিশ্চিত করেছিলেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই জাপানের নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেছিলেন যে, যুদ্ধে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আমেরিকান অফিসিয়ালগন জাপানের সিক্রেট কোড পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে, জাপানের নেতৃবৃন্দ যতটুকু সম্ভব সহজ শর্তে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি চাচ্ছেন। ১৯৪৫ সনের ২২-জুন সম্রাট হিরোহিতো সুপ্রিম ওয়ার কাউন্সিলের একটি সভা ডাকেন এবং বলেন, “আমরা আশা করবো জাপানী নেতৃবৃন্দ যুদ্ধ বন্ধের পথ বাহির করতে অনুসন্ধান করবেন এবং চেষ্টা করবেন তাহা যেন অতীতের মতো না হয়”। আমেরিকানরা বুঝে গিয়েছিল যে, আমেরিকার প্রস্তাবিত ‘শর্তহীন সারেন্ডার’ যুদ্ধ বন্ধে প্রধান অন্তরায়। জাপানীরা মনে করতো তাদের সম্রাট হিরোহিতো একজন ‘জীবন্ত ইশ্বর’ এবং আমেরিকার প্রস্তাবিত শর্তহীন সারেন্ডার মেনে নিলে আমেরিকা তাদের সম্রাটকে ওয়ার ক্রিমিনাল হিসাবে হত্যা করবে। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ও কথাবার্তায় জাপানের সারেন্ডারের ইচ্ছার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।

এতদসত্তে¡ও, ১৯৪৫ সনের ২৬-শে জুলাই আমেরিকা ও ব্রিটেনের নেতৃত্ব যৌথ বিবৃতিতে আবারও জাপানকে নিঃশর্ত সারেন্ডারের আহ্বান জানায় এবং যুক্তভাবে বলা হয়, “The alternative for Japan is prompt and utter destruction”। ইতিহাসবিদগন মন্তব্য করেন যে, যদি আমেরিকার নেতৃত্ব নিঃশর্ত সারেন্ডারের কথা না বলে পরিষ্কারভাবে সম্রাট হিরোহিতো তাঁর স্থানে থাকবেন বলতেন, তবে সহসাই জাপান সারেন্ডার করতো এবং হাজার হাজার নিরাপরাধ প্রাণ রক্ষা পেত। দুঃখজনক বিড়ম্বনা এই যে, আমেরিকান নেতৃবৃন্দ সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হন যে, পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ তথা যুদ্ধের পরও কর্তৃত্ব ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সম্রাট হিরোহিতোকে প্রয়োজন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমেরিকার পারমানবিক বোমা ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, হিরোশিমা একটি মিলেটারী বেইস এবং আমরা যতটুকু সম্ভব কম বেসামরিক লোক মারা যাক চেয়েছি। তিনি আরও বলেন পারমানবিক বোমা তাড়াতাড়ি যুদ্ধ বন্ধে সহায়তা করেছে এবং এইভাবে ইহা “লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ রক্ষা করেছিল”। কিন্তু আমেরিকার কৌশলগত বম্বিং সার্ভে রিপোর্ট (১৯৪৬ সালে ইস্যুকৃত) অনুযায়ী, “Hiroshima and Nagasaki were chosen as targets because of their concentration of activities and population”। বলা হয় হিরোশিমাতে বম্বিং-এর পক্ষে যুক্তি দেখানো হলেও নাগাশাকিতে বম্বিং-এর পক্ষে যুক্তি দেখানো বেশ কঠিন। তরুন আমেরিকান যারা জাপানীদের সাথে যুদ্ধে রত ছিল তারা ১৯৪৫ সালে পারমানবিক বোমা ব্যবহারকে স্বাগত জানান এবং বলেন, “পারমানবিক বোমার জন্য ইশ্বরকে ধন্যবাদ”। তবে পত্রিকার এডিটোরিয়েলে, যেমন নিউ ইয়র্ক টাইমস, Hanson Baldwin বলেন, ÒWe are the inheritors to the mantle of Genghis Khan”। নরমেন থমাস নাগাশাকি হত্যাযজ্ঞকে বলেন, “খুবই নিষ্টুর এক যুদ্ধের সবচেয়ে বড় একটি নৃশংসতা। দৃঢ়ভাবে এই বোমা হামলাকে নিন্দা করে ‘Christian Century’-তে বলা হয়, এমন সময় বোমা হামলা হলো যখন জাপানের শক্তি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তাই বলা হয়, এই পারমানবিক বোমা হামলা শুধুমাত্র জাপানকে নয়, ক্রিসটিয়ানিটিকেও আঘাত করেছিল। এছাড়াও, অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংবাদ মাধ্যম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। আমেরিকান অনেক নেতাও বিশ্বাস করতেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য পারমানবিক বোমার প্রয়োজন ছিল না। জেনারেল Dwight Eisenhower ১৯৬৩ সনে এক স্মৃতি চারনে বলেন, “জাপানীরা সারেন্ডার করতে প্রস্তুত ছিলেন এবং তাদের ভয়ংকর জিনিষ দিয়ে আঘাত করার প্রয়োজন ছিল না.. আমি আমার দেশের এই ধরনের একটি অস্ত্র প্রথম ব্যবহারের নিন্দা জানাই”। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ট্রুম্যানের চীফ অব স্টাফ Admiral Leahy-ও বলেন, “ঐভাবে যুদ্ধ করার জন্য আমাকে শিক্ষা দেয়া হয় নাই এবং মহিলা ও শিশুদের ধ্বংস করে যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না”। প্যাসিফিকের আমেরিকার আর্মি ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল ডগলাস ম্যাক আর্থার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্টানে উনার মৃত্যুর পূর্বে বলেন, “সামরিক দৃষ্টিকোন থেকে পারমানবিক বোমা সম্পূর্ণরুপে অপ্রয়োজনীয় ছিল ৃৃজাপান পতন এবং আত্মসমর্পনের দ্বারপ্রান্তে ছিল”। জেনারেল কারটিস লি মে, পরবর্তীতে এয়ার ফোর্স চীফ অব স্টাফও বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য পারমানবিক বোমার কিছু করার ছিল না”।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের জণ্য ‘Enola Gay’ নামের বোমারু বিমান (বি – ২৯) ব্যবহার করা হয়। বিমানের পাইলট ছিলেন পল তিব্বেত ও সহ-পাইলট ছিলেন রবার্ট এ. লুইস।বোমারু বিমানের নামটি বিমানের পাইলট পল তিব্বেতের মার নাম অনুসারে দেয়া। পারমানবিক বোমার কোড বা সাংকেতিক নাম ছিল ‘লিটল বয়’। ১৯৪৫ সনের ৬-ই আগষ্ট ছিল সুন্দর সকালের একটি দিন। ক্যাপটেইন লুইস, প্যাসিফিকের উপর, উনার লগ বইতে লিপিবদ্ধ করেন, “We are loaded. The bomb is now alive, and itÕs a funny feeling knowing itÕs right in back of you!” বেঁচে যাওয়া জাপানী এক স্কুল ছাত্রী এমিকো-র দৃষ্টিতে দেখা সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ননা করতে গিয়ে লেখক Kildare Dobbs উনার লিখিত ‘The Scar’-এ বলেন, “ ইহা ছিল রৌদ্রউজ্বল উঞ্চ একটি দিন। এমিকো আকাশের দিকে থাকান এবং দেখেন মেঘমুক্ত নীলাকাশে অনেক উপরে একটি বোমারু বিমান। তখন সময় ছিল ঠিক সকাল ৮টা ১০ মিনিট। হঠাৎ লক্ষ্য করেন, আকাশে অসাধারণ সবুজ-সাদা ফ্ল্যাশ। ইহা ছিল সূর্য্যের চেয়ে উজ্বল….। এমিকো পরবর্তীতে অস্পষ্টভাবে স্মরন করেন তথায় গর্জন বা দ্রুত শব্দও ছিল, কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, কারন ঐ সময়ে তিনি সজ্ঞা হারান। উনার প্রথম ভাবনা, আমি জীবিত! তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। বাতাস ধুলো ও কালো ধোঁয়ায় ঝাপসা ছিল। পোড়া গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এমিকো তার চোখে টিপ টিপ বা ক্ষীণধারা প্রবাহিত হওয়া লক্ষ্য করেন,মুখে তার স্বাদ নেন। আলতো ভাবে মাথায় হাত বুলান এবং হাতের দিকে তাকান। তিনি মনে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে এবং বিস্মিত হয়ে খেয়াল করলেন মাথা রক্তে আবৃত”।

বোমারু বিমান ‘Enola Gay’ হতে উত্তর আমেরিকা থেকে যাওয়া ‘আগন্তুকবৃন্দ’ নীচে তাদের কৃত কর্মের দিকে তাকান। কো-পাইলট লুইস লিখেন, “তথায়, আমাদের চোখের সামনে, নিঃসন্দেহে মানুষ এই পর্য্যন্ত যা দেখেছে তার চেয়ে বড় বিস্ফোরন ছিল। শহরের দশভাগের নয়ভাগ ফুটন্ত প্রকৃতির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল, মনে হচ্ছিল ভবন সমূহ উড়ায়ে দেয়া হয়েছিল এবং বৃহৎ সাদা মেঘ যাহা তিন মিনিটের কম সময়ে ৩০,০০০ ফুট এবং এর পরে কমপক্ষে ৫০,০০০ ফুট পর্য্যন্ত উপরে পৌঁছেছিল”। লেখক Kildare Dobbs উনার লিখিত ‘The Scar’-এ সেই দিনের মর্মদন্তু ঘটনার বিবরন দিতে গিয়ে বলেন, “Some of the burned people had been literally roasted. Skin hung from their flesh, like sodden tissue paper”। যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ছিল আক্ষরিক অর্থে অগনিত – অসংখ্য।

যখন বোমারু বিমান ‘The Enola Gay’ মিশন শেষ করে বেইসে ফিরে আসছিলো, কো-পাইলট লুইস সবার পক্ষ থেকে উনার অনুভ‚তি প্রকাশ করতে চাইলেন। উনি লগ বইতে লিখেন এইভাবে, “আমার ইশ্বর! আমরা কি করেছি?” তিনি যুক্ত করেন, “যদি আমি একশত বছর বাঁচি, আমি আমার মন থেকে কখনও ঐ কয়েক মিনিটের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারবো না”। ১৫-ই আগষ্ট, ১৯৪৫ ইংরেজী সম্রাট হিরোহিতো তাঁর দেশের সারেন্ডার বা পরাজয় অফিসিয়ালি ঘোষনা করেন।

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ২০১০ সালে চুক্তি করে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ‘নিউ স্টার্ট’ নামের চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। তবে, এর আগেই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতার শিকার হয়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহর। সেই শহরে ১৯-শে মে থেকে ২১-শে মে , ২০২৩ পর্য্যন্ত অনুষ্টিত হয় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন। সম্ভবতঃ পারমানবিক বোমার ভয়াবহতার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন এবং আরো অনেক বিষয় যেমন -খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু, এনার্জি ইত্যাদি বিষয়ে করনীয় ঠিক করতে হিরোশিমাতেই এই জি-৭ শীর্ষ সম্মলন। ১৯-শে মে সকালে জি-৭ নেতাগন একসঙ্গে হিরোশিমায় পারমাণবিক হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণে নির্মাণ করা শান্তি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় জি-৭ সম্মেলনের নেতাগন পারমাণবিক হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণ করেন। জাদুঘর পরিদর্শনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামাও হিরোশিমা সফর করেন যিনি হিরোশিমা ও নাগাশাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হামলার বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। এই সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধ, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ইত্যাদি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। নেতৃবৃন্দ বলেন,আমাদের কাজ জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মধ্যে প্রোথিত। পারমানবিক চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসা ও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং স¤প্রতি অনুষ্ঠিত জি-৭-সম্মেলনের ইউক্রেন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ক্রমাগত-যুদ্ধের ইংগিত দিচ্ছে ও পারমানবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে হিরোশিমা ও নাগাশাকির মতো এক একটি আঘাতে এমন ধ্বংস-যজ্ঞের ঘটনা ইতিপূর্বে আর কখনো কোথাও ঘটে নাই। জানা যায়, আধুনিক পারমানবিক বোমাগুলো হিরোশিমায় ও নাগাশাকিতে ব্যবহৃত পারমানবিক বোমার চেয়ে হাজারগুন বেশী শক্তিশালী, বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী। “Eye for eye, tooth for tooth” নীতি খুবই কঠোর। ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’।বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ খাদ্য, তৈল ও জ্বালানী, সার, নিত্য ব্যবহার্য্য দ্রব্য ইত্যাদির সংকটে ভুগছে। মানবতাবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ চায় দু’টো ভাত একটুকু নুন, বেলা বয়ে যায় খায়নিকো বাছা কচি পেটে তার জ্বলে আগুন”- কথাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করার সময় এসেছে । শানিত তলোয়ার, কিবা সাধ্য তাহার, কিবা তাহার ধার। কবিগুরুর মতো আমাদের মনও বলুক – “যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ। সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ”। বিশ্বকবির সুরে সুর মিলায়ে আমাদেরও কামনা হউক,”হে বন্ধু মোর, হে অন্তরতর, এ জীবনে যা-কিছু সুন্দর, সকলি আজ বেজে উঠুক সুরে”। Kildare Dobbs উনার লিখিত ‘The Scar’-এর উপসংহারে লিখেন, “যে সাদা ক্ষত এমিকোর ছোট্ট হাতে দেখেছিলাম; তা ক্ষুদ্র, ক্ষীন ও অস্পষ্ট কিন্তু তা বাগ্মী স্মারকচিহ্ন”। আমাদের প্রত্যাশা – আর হিরোশিমা ও নাগাশাকি নয়। জয় হউক বিশ্বমানবতার । সবার প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা। সংযুক্ত ছবি সমূহ সংগৃহীত। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

(Reference: ÒWas Hiroshima Necessary?Ó by Mark Weber, ÒThe ScarÓ by Kildare Dobbs and other sources)
* প্রকৌশলী, ইনস্টিউশন অব ইজ্ঞিনিয়ার্স, ঢাকা, বাংলাদেশ-এর সদস্য, কোয়ালিটি এসুরেন্স এন্ড ম্যানেজমেন্টে অনার্সসহ স্নাতক (অন্টারিও) এবং একজন সমাজ হৈতষী কর্মী।