সোনা কান্তি বড়ুয়া : সম্রাট অশোকের শারদীয় বিজয়া দশমীর বুদ্ধ পূজা ও বৌদ্ধ দীপাবলী উৎসব! বিশ্বমৈত্রীর আলোর ঝর্ণাধারায় বিশ্ববৌদ্ধ SOCIETIES কঠিন চীবর দানোৎসব সন্মেলন শারদীয় বুদ্ধ পূজা আশ্বিনী পূর্ণিমা হতে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত দীর্ঘ ১ মাস ব্যাপী পবিত্র কঠিন চীবর দানোৎসব। কার্তিকী পূর্ণিমায় শারদীয় বুদ্ধ পূজার ঐতিহ্যে বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডে জলে শারদীয় বুদ্ধ পূজার “লয় ক্রষতঙ্“ উৎসব!

জল হাওয়ার উপর নির্ভর রয়েছে। বৌদ্ধ দর্শনে ভ‚মি বা মাটি, জল, বায়ু ও অগ্নি চার অমূল্য রত্নের উল্লেখ রয়েছে। কার্তিকী পূর্ণিমায় (27 NOVEMBER 2023) বৌদ্ধ প্রধানদেশ (LAOS, COMBODIA, SRI LANKA, MYANMAR. KOREA, SINGAPORE, BHUTAN, TIBET, CHINA, JAPAN & MONGOLIA AND ALL OVER THE WORLD) এবং থাইল্যান্ডের জলে বুদ্ধ পূজার লয় ক্রষতঙ্ উৎসব! যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে দীর্ঘ ১ মাস ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব মৈত্রীর শারদীয় বুদ্ধ পূজার ঐতিহ্যে! কঠিন চীবর দানের ফল সম্পর্কে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি সুমেরু পর্বত সমান দানসামগ্রী একত্রিত করে দান করে তার ফল কঠিন চীবর দানের ষোল ভাগের এক ভাগও হয় না। শারদীয় বুদ্ধ পূজার ঐতিহ্যে এই দানের ফলে মানুষের সুগতি হয়, পরজন্মে দুঃখ পায় না!

সম্রাট অশোকের বিজয়া দশমী ছিল শারদীয় বুদ্ধ পূজার ঐতিহ্যে বিশ্বমানবতার অনিবার্য অভ্যুত্থানে অহিংসা পরম ধর্ম! আজও কলমওয়ালারা কলম হাতে লিখেন, শারদোৎসব হিংসার ধর্মান্ধ ধর্ম বিশ্বাস ই অধর্মের মূল! অহিংসা মনুষ্যত্বের ধর্ম এবং মানবতার অনিবার্য অভ্যুত্থানে সম্রাট অশোকের বিজয়া দশমী! সম্রাট অশোকের বিজয়া দশমী বুদ্ধ পূজার উৎসব বা ধম্মবিজয় উৎসব! বেদাতীত কাল থেকেই চলে আসছে এই শারদ উৎসব। আশ্বিন শুক্লা দশমী তিথিতে প্রিয়দর্শী সম্রাট অশোক ধর্মবিজয়ের উদ্দেশ্যে শারদীয় বুদ্ধ পূজার উৎসব। সম্রাট অশোক অধুনা তমলুক থেকে প্রিয় পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সঙ্ঘমিত্রাকে সিংহল (বিজয়সিংহের) দ্বীপরাষ্ট্রে প্রেরণ করেছিলেন। তাই দিনটি অশোক বিজয়া দশমী বলে খ্যাত।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণে বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত হাজার হাজার মানুষ! বর্তমান ব্রাহ্মণেরা অন্যান্যবৌদ্ধ উৎসবের মত দীপাবলী উৎসবকে ও আত্মসাৎ করে এর সাথে ব্রাহ্মণ্য মসলা মিশ্রিত করে নতুন কাহিনী বানিয়েছে। বিপুল বৌদ্ধ জনতার সমাগমে আকাশ বাতাসের কোলাহল বিদীর্ণ করে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি” ধ্বনিত হয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে ত্রিশরনসহ পঞ্চশীল প্রার্থনা, নিমন্ত্রিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে সঙ্ঘ দান, পিন্ডপাত প্রদান, নিমন্ত্রিত উপাসক উপাসিকাগণকে আহার প্রদান এবং পুণ্যানুমোদনের পুণ্য অনুষ্ঠানসমূহ সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়। জগজ্জ্যোতি বুদ্ধের বিশ্বমৈত্রীতে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্ঠানসহ সর্ব ধর্মের মানুষ এক ত্রে মানুষের ভাই বোন! শারদীয় বুদ্ধ পূজার অনিবার্য অভ্যুত্থানে ঐতিহ্যে এক মাস কঠিন চীবর দানোৎসব!

ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণে বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত হাজার হাজার মানুষ! আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদ, “৫ অক্টোবর, বুধবার দিল্লির অম্বেডকর ভবনে গণ ধর্মান্তরণ ছিল। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেখানকার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ধর্মান্তরণে উপস্থিত আপের মন্ত্রী। ধর্মান্তরণের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হিন্দুত্ব-বিরোধী শপথ নিয়েছেন আম আদমি পার্টির এক মন্ত্রী! অভিযোগ, রাজেন্দ্র পাল গৌতম প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আমি হিন্দু দেব-দেবীর পুজো করব না।’’ বিষয়টি নিয়ে আপের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। অভিযোগ করেছে, ‘হিন্দুত্ব-বিরোধী’ প্রচার চালাচ্ছেন কেজরীওয়াল। রাজেন্দ্র সব অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, বিজেপি আসলে ‘দেশ-বিরোধী, (৫ অক্টোবর, ২০২২)!” বাংলাদেশ ভারতীয় বৌদ্ধ সমাজ অধ্যয়নে ব্যক্তি স্বরূপ মিলিয়ে সন্ধিলগ্নের ভারতবর্ষের বৌদ্ধ চরিত মানস শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ পূজা ছিল বিশ্ববৌদ্ধ বৌদ্ধ দীপাবলী উৎসব!

বৌদ্ধ ভারতে ধর্মান্ধহিন্দু রাজনীতির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ! ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ প্রসঙ্গ! এখন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ-হিন্দুধর্মের পরিবর্তন মানে নাকি হিন্দুধর্মের বিপন্নতা! দেশদ্রোহ! স¤প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় (দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ৬ নভেম্বর ২০২২) প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম ছিল, বিজয়া দশমীর দিন দিল্লির সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাজেন্দ্রপাল গৌতমের উপস্থিতিতে কয়েক হাজার দলিত অম্বেডকরের ঐতিহাসিক ‘বাইশ প্রতিজ্ঞা’ পুনরুচ্চারণ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করলেন। ছেষট্টি বছর পর সেই পথে চলতে গিয়েই দিল্লি সরকারের মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা ছাড়তে হল। বৌদ্ধ ভারতে ধর্মান্ধ হিন্দুধর্মের রাজনীতির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কেন? জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের অনিবার্য অভ্যুত্থান! বুদ্ধভ‚মি পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ : বৌদ্ধবাংলায় ধর্মান্ধ মুসলমান রাজনীতির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কেন?

সম্রাট অশোক ২৩০০ বছর পূর্বে ‘বৌদ্ধ ত্রিপিটক সহ সম্রাটের ভারতীয় বৌদ্ধ মিশন, সম্রাট অশোকের পুত্র বৌদ্ধভিক্ষু মহেন্দ্র (মহিন্দা) এবং কন্যা ভিক্ষুনী সংঘমিত্রা বঙ্গবীর বিজয় সিংহের সিংহল দ্বীপে (শ্রীলঙ্কা) প্রেরণ করলেন বৌদ্ধধর্ম ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মানসে। VENERABLE ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু লিখেন, “পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণেরা অন্যান্য বৌদ্ধ উৎসবের মত দীপাবলী কেও আত্মসাৎ করে এর সাথে ব্রাহ্মণ্য মসলা মিশ্রিত করে নতুন কাহিনী বানিয়েছে। বলা হয়েছে, ভগবান রাম লঙ্কায় রাবণ বধ করে বিজয় লাভ করে অযোধ্যা আগমণের আনন্দে দীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসব পালন করা হয়েছিল। ইহা একটি ডাহা মিথ্যা প্রচার। অথচ বাল্মিকী রামায়ণে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, রাম অযোধ্যা এসেছিলেন চৈত্র মাসে। কার্তিক মাসে আসেননি। ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শিরের’ দেশ ভারতে বুদ্ধ পূজায় দীপাবলী বৌদ্ধ উৎসব ভুলবি কি রে হায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়,

“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়-
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়-
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়!”

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘মহামানব বুদ্ধ’ শীর্ষক প্রবন্ধে ১৮ মে, ১৯৩৫ সালে কোলকাতায় মহাবোধি সোসাইটির ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে মহাবোধি সোসাইটি হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন,
“আমি যাঁকে আমার অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করেছি আজ তাঁর জন্মোৎসবে তাঁকে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি, এ কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে অর্ঘ নিবেদন নয়, যাঁকে নির্জনে বারংবার অর্ঘ নিবেদন করেছি, সেই আজ নিবেদন করতে উপস্থিত হয়েছি। একদিন বুদ্ধগয়াতে বুদ্ধমন্দির দর্শনে গিয়েছিলুম। সেইদিন এ কথা মনে জেগেছিল- যে সময়ে ভগবানবুদ্ধেও চরণস্পর্শে সমস্ত বসুন্ধরা জেগে ওঠেছিল, গয়াতে যেদিন তিনি স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন, সেদিন কেন আমি জন্মাইনি, কেন সেদিন অনুভব করিনি তাঁকে একান্তভাবে শরীর মন দিয়ে। বর্তমানের পরিধি অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। এই ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে তাঁকে উপলব্ধি করতে পারা যায় না। কিছুদিন পুর্বে তাঁর জীবন কথায় পড়েছিলুম- সে যুগের কথা। সেদিন ছিল কথায় বিরোধ, চিন্তার বিরোধ। সেদিন তাঁকে খর্ব্ব করতে, তাঁর চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু যাঁরা মহাপুরুষ তাঁরা কোন ক্ষুদ্র কালে আসেন না। বর্তমানকে উপলক্ষ করে তাঁরা জন্মান না, মহাযুগের মধ্যে তাঁদের আবির্ভাব, ক্ষুদ্র বর্তমানের মধ্যে তাঁদের আবির্ভাব সম্ভব নয়। সুদূর জাপানের এক মৎস্যজীবি সেদিন এই বোধিদ্রæমমূলে কাতরভাবে তার পাপ বিমোচনের জন্য প্রার্থনা করেছিল, বুদ্ধদেবের চরনতলে লুটিয়ে পড়েছিল, সেদিনও বুঝেছিলুম তাঁর জন্ম ক্ষুদ্র কালের মধ্যে নয়।

যাঁরা প্রতাপবান, বীর্য্যবান তাঁদের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশি নয়। অনেক মানব, রাজা, ধনী মানী ও রাষ্ট্রনেতা এ পৃথিবীতে জন্মেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ মনুষ্যত্ব নিয়ে কতজন এসেছেন? যিনি সম্পূর্ণ মনুষ্যত্ব নিয়ে এসেছিলেন আবার তাঁকে আহ্বান করছি আজকে এই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভারতে, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের বিসম্বাদ, যেখানে ভেদ বিবাদে মানুষ জর্জরিত, সেই ভারতে তিনি আবার আসুন।

কেমন করে কোন ভাষায় বলব, তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, কেমন করে মানুষকে তাঁর বাণী বলেছেন, সেই স্মৃতিটুকু রাখবার জন্য মানুষ অজন্তা গুহা হতে শুরু করে কত না অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এর চেয়ে দুঃসাধ্য কাজ হয়েছে সেদিন, যেদিন সম্রাট অশোক তাঁর শিলালিপিতে লিখলেন বুদ্ধের বাণী। অশোক তাঁর বীরত্বের অভিমান, রাজত্বের অভিমান দিয়েছিলেন ধূলায় লুটিয়ে। এতবড় রাজা কখনও পৃথিবীতে এসেছেন কি? কিন্তু সেই রাজাকে রাজাধিরাজ করল কে? সেই গুরু জাতিতে জাতিতে ভেদ, বিসম্বাদ পূর্ণ, হিংসায় ভরপুর ও পঙ্কিল এই জাতিকে কি শুধু রাষ্ট্রনীতি দ্বারা রক্ষা করা যাবে? যিনি এসেছিলেন, তিনি আবার আসুন, উপনিষদের সেই বাণী নিয়ে। উপনিষদ বলছে, “কো ধর্ম্মভ‚তে দয়া, সমস্ত জীবের প্রতি দয়া, শ্রদ্ধা ও দয়া। শ্রদ্ধয়া দেয়ম, ধিয়া দেয়ম। অশ্রদ্ধা করলে দান করলে সে দান কলুষিত হয়। যেখানে মানুষ মানুষকে অপমান করে, সেখানে কি মানুষ রাষ্ট্রনীতিতে সিদ্ধিলাভ করতে পারে?

সত্যের দ্বারা মানবের পূর্ণ প্রকাশ। যিনি আপনার মধ্যে সকল জীবকে দেখেন। তিনি স্বয়ং প্রকাশ। তিনি প্রকাশিত হবেন তাঁর মহিমার মধ্যে। এই জগতের অধিকাংশ মানুষ আজ আচ্ছন্ন, তারা প্রকাশিত হয়নি। সূর্যের আলো প্রবেশের পূর্বেই এই সুন্দরী পৃথিবীর সবকিছু যেমন আচ্ছন্ন ছিল, তেমনিতর আজকের দিনে মানুষ সমস্ত মানুষ আচ্ছন্ন, আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বারা। যাঁরা সত্যকে পেয়েছেন, তাঁরা প্রকাশ পেয়েছেন। যেমন সূর্য নিজেকে প্রকাশ করে সঙ্গে সঙ্গে এই পৃথিবীকে ও প্রকাশিত করেন, তেমনিতর মহাপুরুষগণ ও ভগবান তথাগত যখন প্রকাশিত হলেন তখন এই ভারতবর্ষ ও প্রকাশিত হ’ল পৃথিবীর কাছে। ভারত তখন আপনার সত্যবাণী প্রকাশ করলে। সকল বর্ণের, সকল ধর্মের ছোট ছোট গন্ডী এড়িয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়লন এই মহাবিশ্বে। সমস্ত মরুক্ষেত্রের মধ্যে, দুর্লঙ্ঘ্য পর্বতের উপরে প্রস্তর মূর্তিতে ও স্তপে স্তপে তাঁর বাণী রচিত হ’ল। তিনি মানুষকে বলেছিলেন সত্যকে উপলব্ধি করার জন্যে। কিন্তু সে সত্যকে কি সহজে পাওয়া যায়? তাই মানুষকত দুঃখ দিয়ে এবং কত কৃচ্ছ সাধন করে পর্বত শিখরে, মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের ভক্তিকে চরিতার্থ করেছে। এশিয়া খন্ডে মানবের সে কীর্তি দেখলে বিস্মিত হতে হয়।

কেমন করে কোন ভাষায় বলব, তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, কেমন করে মানুষকে তাঁর বাণী বলেছেন, সেই স্মৃতিটুকু রাখবার জন্য মানুষ অজন্তার গুহা হতে শুরু করে কত না অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তু এর চেয়ে দুঃসাধ্য কাজ হয়েছে সেদিন, যেদিন সম্রাট অশোক তাঁর শিলালিপিতে লিখলেন বুদ্ধের বাণী। অশোক তাঁর বীরত্বের অভিমান, রাজত্বের অভিমান দিয়েছিলেন ধূলায় লুটিয়ে। এতবড় রাজা কখনও পৃথিবীতে এসেছেন কি? কিন্তু সেই রাজাকে রাজাধিরাজ করল কে? সেই গুরু। জাতিতে জাতিতে ভেদ, বিসম্বাদ পূর্ণ, হিংসায় ভরপুর ও পঙ্কিল এই জাতিকে কি শুধু রাষ্ট্রনীতি দ্বারা রক্ষা করা যাবে? যিনি এসেছিলেন, তিনি আবার আসুন, উপনিষদের সেই বাণী নিয়ে। উপনিষদ বলছে, “কো ধর্ম্মভ‚তে দয়া, সমস্ত জীবের প্রতি দয়া, শ্রদ্ধা ও দয়া। শ্রদ্ধয়া দেয়ম, ধিয়া দেয়ম। অশ্রদ্ধা করে দান করলে সে দান কলুষিত হয়। যেখানে মানুষ মানুষকে অপমান করে, সেখানে কি মানুষ রাষ্ট্রনীতিতে সিদ্ধিলাভ করতে পারে?”

প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দও ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। বৌদ্ধ কাহিনী অবলম্বনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নাটক (১) নটীর পূজা (২) শ্যামা (৩) চন্ডালিকা (৪) মালিনী (৫) রাজা (৬) অচলায়তন ও (৭) গুরু। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী” গানটি (বুদ্ধ জন্মোৎসব ২১শে ফাল্গুন, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ) মহামানব বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করেছিলেন,

“হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বি নিত্য নিঠুর দ্ব›দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার লোভ জটিল বন্ধ।
নতুন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী
কর ত্রান মহাপ্রাণ আন অমৃত বাণী
বিকশিত করো প্রেম প্রদ্ম চিরমধু নিষ্যন্দ
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুণাঘন ধরণীতল করহ কলংক শূন্য
এস দানবীর দাও ত্যাগ কঠিন দীক্ষা
মহাভিক্ষু লও সবার অহংকার ভিক্ষা।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্ত কলুষ গøানি;
তব মঙ্গল শঙ্খ আন, তব দক্ষিণ পাণি
তব শুভ সঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ।
শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য
করুনা ঘন ধরনীতল করহ’ কলঙ্ক শূন্য।”

রাজপুত্র সিদ্ধার্থ মনের লোভ দ্বেষ মোহ অহঙ্কারসহ মারসমূহ জয় করে বুদ্ধত্ব লাভ করলেন পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ সমগ্র মানবজাতির কল্যাণমিত্র এবং আজ ২৬০০তম পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমায় বৌদ্ধ জগত জুড়ে বুদ্ধ বন্দনায় জন গণমনে “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি” বিরাজমান। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ তাঁর পিতা মহারাজা শুদ্ধোধনের রাজসিংহাসন ত্যাগ করে ছয় বৎসর কঠিন সাধনার (আর্য্য অষ্ঠাঙ্গিক মার্গ ও ৩৭ প্রকার বোধিপাক্ষীয় (বুদ্ধত্বের সাধনা) ধর্মের অনুসরন); পর মহাকরুনা এবং মহাপ্রজ্ঞার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে ‘বুদ্ধ বা মহাজ্ঞানী মহাজন’ হয়েছিলেন।

ভগবানবুদ্ধের ধ্যানে ও বন্দনার আলোকে মানবাধিকার প্রসঙ্গ নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চন্ডালিকা নৃত্যনাট্যে চন্ডাল কন্যা চন্ডালিকার অশ্রু প্রবাহ বিরাজমান। বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ ও আদিমতম নিদর্শন চর্যাপদ ও বৌদ্ধ দর্শনে সমৃদ্ধ।

জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় সমৃদ্ধ আজ বুদ্ধাব্দ কে বাদ দিয়ে ভারতে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ ঘোষনা করা হয়। অথচ “আজ ২৫৫৫ বাংলা বর্ষ ( থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৫৫) হবার কথা ছিল। বঙ্গাব্দের ইতিহাস চুরির পূর্বে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু পন্ডিতগণ “আল্লাহ উপনিষদ” রচনা করে সদাশয় সম্রাটের কৃপাদৃষ্ঠি লাভ করেন। বন্দে মাতরম” শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, আমি তোমাদের রক্ষা করিব।” স¤প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক “আজকাল” (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, “বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর “সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের ”পুরস্কার লাভ করেছেন।”

গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে মানবাধিকারের দীক্ষা নিয়ে সম্রাট অশোক ঘোষণা ছিল “অহিংসা পরম ধর্ম” শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথে ঠাকুর বৈদিক জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে চন্ডালিকা শীর্ষক নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন এবং তিনি তাঁর ভারতীয় সমাজের কাছে বৌদ্ধধর্মের পতনের কারন সম্বন্ধে জবাবদিহি করেছেন, “তাঁর (গৌতমবুদ্ধের) তপস্যা কি শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে? ভারতের মাটিতে আজ তাঁর তপস্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের অমূল্য ভান্ডারে দ্বার ভেঙ্গে গেছে। মানুষকে আমরা শ্রদ্ধা করিনে। আমাদের সেই প্রেম, মৈত্রী, করুণা, যা তাঁর দান, সব আমাদের গিয়েছে। তাঁর দানকে রুদ্ধ করেছি মন্দির দ্বার পর্যন্ত। এ জাতের কখনও মঙ্গল হতে পারে? তাঁকে বলা হয় শূন্যবাদী। তিনি কি শূন্যবাদী? তিনি বললেন, “জীবে দয়া কর।”

আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে- এটা বলে আমরা এক প্রকার স্বস্তি বোধ করলেও সময় এসেছে এ বিষয়ে আরো বেশি অনুসন্ধানী হওয়ার। বাংলাদেশে প্রতিবছর নিরীহ বৌদ্ধ ভিক্ষু মানুষদের হত্যা করা হয়েছে, তাতে মানুষ মাত্রই লজ্জিত হবেন। বিনা দোষে এভাবে মানুষ হত্যা করে জঙ্গিরা আসলে কী অর্জন করতে চায়, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। জঙ্গিদের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রাথমিকভাবে নমনীয়তা দেখালেও আন্তর্জাতিক চাপে তাদেরও কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছিল। বর্তমান সরকার অবশ্য আগাগোড়া জঙ্গি ইস্যুতে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। দেশের আহমদিয়া মসজিদে হামলা, সংখ্যালঘু হত্যা, গির্জার পুরোহিতকে হত্যা কিংবা নোয়াখালীর এক মসজিদের ইমামকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারি ক্যাফেতে এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে!

বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত ধর্মান্ধ রাজনীতির ধর্মান্ধরা বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা করছে বাংলাদেশকে মুসলমান রাষ্ট্র বানাতে! বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বাঙালির রক্তে রক্তে প্রবহমান! এবং ভারত বা ভুটানের আগে তো কোন মুসলমান রাষ্ঠ্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নি। ‘চার্টার অব রাইটস’ সবারই অধিকারকে রক্ষা করে। ইসলাম ধর্মকে মহিমান্বিত করতে কোরআন নিয়ে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও কুমিল্লা দূর্গাপূজায় ধ্বংসযজ্ঞ এই বিষয়টার মধ্যে যে সা¤প্রদায়িক বিদ্বেষের মশলা আছে তা জনমানসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংক্রমিত! লাদেশের আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক ধর্মান্ধ ইসলামী রাজনীতির জামায়াতের নৈতিক অপরাধ! এবং বৌদ্ধধর্মকে নিয়ে সর্বগ্রাসী অমানবিক ধর্মান্ধ ইসলাম রাজনীতির এতো ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র কেন?

ভারতীয় হিন্দু শাসকগণ গৌতম বুদ্ধকে হিন্দুর অবতার বানিয়ে বৌদ্ধগণকে নীচ জাতি করে বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দির” (বিহার) হিন্দুরাজনীতির ও তিরুপতি বালাজী, মন্দির”!

বৌদ্ধ চট্টগ্রাম এবং মুসলমান রাজনীতির ভীতির কবলে বৌদ্ধজাতি! ১৬৬৬ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খান, আরাকানীদের পরাজিত করে বৌদ্ধ চট্টগ্রাম দখলে নেন। এবং চট্টগ্রামের নাম ইসলামাবাদ রাখেন। যাই হোক, ঐ সময় ও মুঘল সাম্রাজ্য চট্টগ্রামের সমতল অংশগুলোই নিয়ন্ত্রণ করতো, এবং চাকমারা তখনো পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিলেন না। রাষ্ঠ্রধর্মের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা পাহাড়ী মেয়েদেরকে ধর্ষণের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা বাহিনীরা পাহাড়ী মেয়েদেরকে ধর্ষণ করার সাহস পেয়েছেন? ইসলাম ধর্মকে তলোয়ার বানিয়ে সন্ত্রাসী, শাসকগণ পাহাড়ী মানুষগুলোকে অজগরের মতো গিলে ফেলেছে! ভারতে এবং বাংলাদেশে ধর্মান্ধ ইসলাম রাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস লেখা হলে পাঠকগণ দেখবেন,তা হলোকাষ্টের চেয়ে কম বীভৎস নয়। বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করবার জন্যে ইসলামিক মৌলবাদী রাজনীতির ষড়য়ন্ত্র কেন?

বিজয় সিংহের সিংহলে (লঙ্কা) ধর্মবিজয়ী সম্রাট অশোকের ধর্ম সাম্রাজ্য স্থাপন! এই প্রসঙ্গে ইহা ও বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, রাজা বিজয় সিংহের শ্রীলঙ্কা জয়ের তিন শত বছর পরে ভারত সম্রাট অশোক ২৩০০ বছর পূর্বে তাঁর পুত্র বৌদ্ধভিক্ষু মহেন্দ্র (মহিন্দা) এবং কন্যা ভিক্ষুনী সংঘমিত্রা সহ সম্রাটের ভারতীয় বৌদ্ধ মিশন বঙ্গবীর বিজয় সিংহের সিংহল দ্বীপে (শ্রীলঙ্কা) প্রেরণ করেন বৌদ্ধধর্ম ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মানসে। বিভিন্ন কারনে ভারতে বুদ্ধাব্দ ও বৌদ্ধধর্মের পতনের পর শ্রীলঙ্কায় আজ সগৌরবে বৌদ্ধধর্ম ও বুদ্ধাব্দ বিরাজমান। তখন বুদ্ধাব্দই ছিল বঙ্গাব্দ। জনতার প্রশ্ন : বঙ্গবীর রাজা বিজয় সিংহ, সম্রাট অশোক এবং চর্যাপদের বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে, তদুপরি হিজরি সালকে বিকৃত করে ভ্রষ্ঠাচারের মাধ্যমে হিন্দুরাজনীতি কি ষড়যন্ত্রে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠা করেছে!

বীর পুরুষ বিজয় সিংহ বাঙালির আলেকজান্ডার ২৬০০ বছর পূর্বে বাংলাদেশের বিশ্ববিখ্যাত বীর পুরুষ বিজয় সিংহ লঙ্কা রাজ্য জয় করে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে বীর বাঙালির আসনে অলংকৃত করেন। তাই দুঃখের দিনে ও বাঙালি বীরের জাতি। বিজয় সিংহের বিজিত শ্রী লঙ্কায় আজ ও ধর্মবিজয়ী সম্রাট অশোকের ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠার মহামন্ত্র স্বত:স্ফূর্তভাবে উচ্ছারিত হয় “বুদ্ধং সরনং গচ্ছামি।” বিজয় সিংহ ভগবান বা রামের মহান শিষ্য বজরঙ বলী হনুমান ও নহেন। বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল?

গৌতমবুদ্ধের ভাষা আন্দোলন! গৌতমবুদ্ধ সংস্কৃত ভাষাকে বাদ দিয়ে তাঁর ভিক্ষুসংঘ এবং জনতাকে পালি ভাষায় উপদেশ দিয়ে ছিলেন। বাংলা বর্ণমালার ইতিহাসে (প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে) বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫) সগৌরবে লিপিবদ্ধ এবং ইতিহাসে দেদীপ্যমান হয়ে আছে। মনে মৈত্রী করুণ রস, বাণী অমৃত পদ। জনে জনে হিতের তরে, পড়েন জীবনযুদ্ধে বৌদ্ধ ত্রিপিটক! বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত গৌতমবুদ্ধের ভাষা আন্দোলন বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং গৌতমবুদ্ধ বাংলাভাষাসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা ব্রাহ্মণদের হাত থেকে রক্ষা করেন (দেশ, কোলকাতা ১ ফেব্র“য়ারী ১৯৯২ এবং নয়া দিগন্ত, এস. কে. বড়ুয়া, ২৫ আগষ্ট ২০১০)।

ভারত এবং বাংলাদেশে বগুড়ার পুন্ড্রবর্ধনে বাংলা ও ভারতের ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন! শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগরে তীরে বৌদ্ধ বাংলার অতীত আজও মুখ ফোটে মনের কথা বলতে পারেনি! দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয়পত্র পেশ করেন।

পালি ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মূখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক একটি জাতির পরিচয় ও অস্তিত্বের অভিনব স্বাক্ষর। একদা হিন্দুধর্ম ত্যাগ করার পর সম্রাট অশোকের প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।” ভ‚পালে সাঁচীর তোরনদ্বারের দক্ষিন তোরণের পশ্চিমের স্তম্ভের মাঝের দুটো প্যানেলে সেই মহামতি সম্রাট অশোকের তীর্থভ‚মি বুদ্ধগয়ায় মহাবোধিবৃক্ষে বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম আজ ও অ¤øান হয়ে আছে। গৌতমবুদ্ধের অহিংস নীতিতে দীক্ষা নিয়ে সম্রাট অশোক মানবাধিকারের ঘোষণা ছিল “অহিংসা পরম ধর্ম” শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

বাংলাদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসযজ্ঞ! পাকিস্তানের মুসলমান ধর্ম অপব্যবহারের প্রেতাত্মা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘাড়ে ছিল বলে পাহাড়ী মুসলমান নয় বলে মুসলমানদের বাংলাদেশ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে দেশের রাজনৈতিক দল সমূহের কোন নৈতিক সমর্থন পায়নি। মুসলমান রাজনীতির বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞে due to the Satanic Verses? ধর্ম কিছু মানুষের দুর্বৃত্তপনা এবং মুসলমান রাজনীতির বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞে আফগানিস্থান বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ইব্দোনেশিয়া এবং পাকিস্থানে বৌদ্ধগণ নু ভড়ৎপব মুসলমান হয়েছিলেন! মানব জাতির সকল উন্নতি কি শুধু মুসলমান জাতি দেশ, ও শাসকদের জন্যে? বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি বিহারে রোহিঙ্গা জামাতুল মুজাহিদীনের বোমা হামলা কেন? মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ এবং বখতিয়ার খিলজির দুর্বৃত্তপনাকে কাঁধে চাপড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর মহাকালের মোহনায় দাঁড় করায়। ঝড়ঁঃয থাইল্যান্ডে ও মায়ানমারে মুসলমান রাজনীতির বৌদ্ধভিক্ষু হত্যা আক্রমণের শিকার।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি