স্বপন কুমার সিকদার : (ইতিপূর্বে ২২-শে শ্রাবন ফেইসবুকে প্রকাশিত)
“শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।।
যে শাখায় ফুল ফোটে না,ফল ধরে না একেবারে,
তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে, সেই শাখারে”। – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“কী সুর বাজে আমার প্রাণে আমিই জানি, মনই জানে\
কিসের লাগি সদাই জাগি, কাহার কাছে কী ধন মাগি–
তাকাই কেন পথের পানে”। – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজ ২২-শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়ান দিবস। শ্রাবণের ধারায় সিক্ত হয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের উনার প্রিয় মাস শ্রাবণের বাইশ তারিখে চিরবিদায় নেন। শ্রাবণ আর রবীন্দ্রনাথ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। শ্রাবন নিয়ে অসংখ্য গান/ কবিতা লিখেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রাবনের মেঘ, বৃষ্টির অমোঘ ছন্দ ও রূপ বারবার এসেছে উনার লেখনীতে।

মেঘের ভেলায় ভর করে আসে শ্রাবণ। কখনো প্রায় কাল, কখনো ধূসর বর্ণের মেঘ যেন সূর্যটাকে ঢেকে দিতে চায়। শ্রাবনে সারা আকাশ জুড়ে চলে মেঘের মিছিল, চিত্ত হয় চঞ্চল। শ্রাবণের বারিতে প্রকৃতি হয় সজীব ও প্রাণবন্ত। মেঘের শব্দলহরী, রূপ ও বর্ণ বিমোহিত করে তোলে আমাদের। এক অদৃশ্য বেদনায়, সৌন্দর্য চেতনায় ও জীবনের প্রয়োজনে মানুষ নতুন মেঘকে বরন করে। মানুষের চিন্তাচেতনায় মেঘ প্রভাব বিস্তার করেছে অনন্তকাল। মেঘ পুরাতন হয়েও চির নতুন। বৃষ্টিধৌত প্রকৃতির রূপ আমাদের বিমোহিত করে। নবধারায় আমাদের আসার আহ্বান করে কবি বলেন – “এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নবধারাজলে\

দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ, পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ-
কাজলনয়নে, যুথীমালা গলে, এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে”।
শ্রাবণ আর রবীন্দ্রনাথ একসুরে গাঁথা। বাদলমুখর দিন ও রাত কবি মনকে যেন মাতাল করে। তিনি তা প্রকাশ করে বলেন –
“পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে
চেনা শোনার কোন বাইরে, যেখানে পথ নাই নাই রে”।
শ্রাবন অনন্যরুপে স্মৃতিতে নাড়া দেয়। বিচিত্র কলধ্বনি শ্রাবন ধারার। প্রকৃতির রূপ ও বৃষ্টির পতনে যেন আশ্চর্য সংগীত ধ্বনিত হয়। মেঘ ও বৃষ্টি বাঙালির কাছে প্রিয়তর হয়ে ওঠে। কখনো দিনের সূর্য আর রাতের তারাকে মেঘ আঁচলে নিয়ে পথ অন্ধকার করে। অবিরল বৃষ্টিধারায় অন্ধকার রাত হয় বর্ষণগীত ঝংকৃত। সঙ্গীর সান্নিধ্য পেতে আমরা মরিয়া হই। কবির মনকে করে উচাটন। কবি বলেন-

“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে, জানি নে, জানি নে, কিছুতে কেন যে মন লাগে না
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে, উদ্ভ্রান্ত মেঘে মন চায়, মন চায় ঐ বলাকার পথখানি নিতে চিনে”।
বৃষ্টি পতনের দৃশ্য কবির মনকে করে রোমাঞ্চিত, আবেগপূর্ণ ও বিরহী। তাহাই তিনি গানে তুলে ধরলেন – “সঘন গহন রাত্রি, ঝরিছে শ্রাবণধারা, অন্ধ বিভাবরী সঙ্গপরশহারা” ।

বর্ষণের মাদকতা কবির মনে কখনো নান্দনিক আবেগের সৃষ্টি করে। মেঘমাখা বৃষ্টি ঝরানো আকাশের দিকে তাকালেই মন উদাস হয়। শ্রাবণরাতের অবিশ্রান্ত বৃষ্টিধারা বিষন্নতার সুগভীর প্রকাশ ঘটায়। কবি বলেন – “আজ বারি ঝরে ঝর ঝর ভরা বাদরে। আকাশ-ভাঙা আকুল ধারা, কোথাও না ধরে”। ‘বর্ষামঙ্গল’ উৎসবে রবি ঠাকুর মনের কথা প্রকাশ করলেন এই ভাবে:‘আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো বাজে’।

কবিগুরুর অসংখ্য কালজয়ী বরষার গান। বৃষ্টিবিলাস ও বর্ষা বন্দনায় রোমান্টিক কবি লিখেন, “এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়”। রিমঝিম বারি ধারা কবি মনকে উদ্দীপ্ত করে। তাই তিনি গেয়ে উঠেন – “মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ্দিগন্তের পানে, নিঃসীম শূন্যে, শ্রাবণ বর্ষণ সঙ্গীতে, রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম” ।
রবি ঠাকুরের সৃষ্টিতে শ্রাবণের ভ‚মিকা অনন্য। তাই উনাকে বলতে দেখি – “তুমি যদি না দেখা দাও কর আমায় হেলা, কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল বেলা”। একই ভাবে আমরা দেখি বিশ্বকবিকে বলতে- “ওরে ঝড় নেমে আয়, আয় রে আমার শুকনো পাতার ডালে, এই বরষায় নবশ্যামের আগমনের কালে। যা উদাসীন, যা প্রাণহীন, যা আনন্দহারা, চরম রাতের অশ্রæধারায় আজ হয়ে যাক সারা”।

জমে থাকা মেঘ কখনো ঝরতে থাকে মাঠ-ঘাট-উঠানে। তখন হৃদয়ও নেচে ওঠে অজানা শিহরণে। এ আবেশ কখনো আনন্দের, কখনো বিষাদের। বাঙালির প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ বৃষ্টি, মেঘ, বরষাকে দারুণভাবে চিত্রায়িত করেছেন। এসব গান আমাদের দোলায়িত করে, ভিন্নলোকে নিয়ে যায়। শ্রাবণের ধারা কবির সৃষ্টিসম্ভারে কতটুকু অবদান রেখেছে তার ইঙ্গিত মেলে উনার কবিতায়। কবি বলেন –
“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।।
… …. …
এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে, তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে; ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান”।।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানে গানে অভিবাদন জানিয়েছেন বর্ষাকে। বাদল দিন যেন তার নূপুরের শব্দ শোনায় কবিকে। কদম, কেতকী ধোয়া বৃষ্টিস্নাত দিন বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন সওগাত। শ্রাবণ মানেই কবির কাছে আবেগ ও অনুভ‚তির জোয়ার সৃষ্টিকারী। শ্রাবণ মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ ও জেগে ওঠার গান। শ্রাবণ আমাদের মনকে কখনো করে স্নিগ্ধ ও কখনো করে উদ্দীপ্ত। আমরা জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে। কবি বলেন – “শ্রাবণ, তুমি বাতাসে কার, আভাস পেলে। পথে তারি সকল বারি, দিলে ঢেলে”।

শ্রাবণ আমাদের জন্য অপরিহার্য এক মাস। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, সঞ্চারিত হবে না প্রাণ। এক পশলা বৃষ্টি নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে যা অন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। ফোটে কেতকী। হিজল আর কেয়াফুলের অপরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে। কবির ভাষায়, “তোমার বেড়ায় উঠল ফুটে হেনার মঞ্জরী\ গন্ধ তারি রহি রহি বাদল-বাতাস আনে বহি, আমার মনের কোণে কোণে বেড়ায় সঞ্চরি”।
বৃষ্টি হয়ে শ্রাবণের দিন যেন ঝরে ঝরে পড়ে। কবির মনকে শ্রাবন কখনো বিষাদগ্রস্থ করে তোলে। তাই উনাকে বলতে দেখি – “শ্রাবণ গগন ঘিরে, ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, শূন্য নদীর তীরে রহিন, পড়ি”।

অনন্তের বোধ রবীন্দ্রনাথের শ্রাবণের গানে বার বার ফিরে এসেছে। শ্রাবণের সঙ্গে যেন কবির এক গভীর ভাব। তা আমরা দেখি ‘আজি শ্রাবণঘন গহন মোহে গোপন তব চরণ ফেলে’ গানটিতে।
শ্রাবণ দিবসের ঘনীভ‚ত বিরহ যেন মূর্তি ধরে প্রকাশ পায় রাতের কল্পনায়। ধরা দেয় পরম সুন্দর ও অন্তরতর প্রেমিকের কাছে। নীল আকাশ যেন কৃষ্ণরূপেরই নৈসর্গিক অভিব্যক্তি ছড়ায়। চারিদিকে বর্ষণস্তম্ভিত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর শ্রাবণের মোহসঞ্চারী গহন গভীর স্তব্ধতা মন ও দৃষ্টি কাড়ে। কবি বলেন -“আমি শ্রাবণ-আকাশে ওই দিয়েছি পাতি, মম জল-ছলো-ছলো আঁখি মেঘে মেঘে। বিরহদিগন্ত পারায়ে সারা রাতি”।

শ্রাবনে সমস্ত আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে, মেঘ জমে বৃষ্টি শুরু হয়। সবুজ ক্ষেতের উপরে তিমিরাচ্ছন্ন রুপ ভারি সুন্দর দেখায়। মেঘে ঢাকা শ্রাবণের রৌদ্রহীন মধ্যাহ্ন ঘনিয়ে আসে। নিবিড় বর্ষার বর্ষণমুখর দিনের ঘনান্ধকারটুকু কবি ধরে রেখেছেন সৃষ্টিতে। এই ঘনঘোর বরিষার সময়টুকু যেন নিজেকে ব্যক্ত করার উপযুক্ত সময়। যেমন -“যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে, সে কথা আজি যেন বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়, এমন দিনে তারে বলা যায়”।
বর্ষায় ভরা নদীর দুক‚ল, বিস্তীর্ন মাঠ, জলে ভেজা প্রকৃতির স্নিগ্ধতা কবি মনকে জাগিয়ে তোলে। তিনি প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরেছেন উনার গানে। গান দিয়ে অনুভব, প্রত্যাশা, পাওয়া আর না পাওয়ার কথা নিপুণভাবে বেঁধেছেন রবিঠাকুর। অভিসার মানেই প্রেম- বিরহ-মিলন। তিনি লিখেন- “আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে, আমার ভাবনা যত উতল হল অকারণে”।
শ্রাবন মনের চঞ্চলতা বাড়ায় – চিত্তকে অস্থির করে। প্রকৃতি যেন কথা বলতে থাকে মানুষের সাথে। শ্রাবনের আগমনে কবি যেন বিস্ময়ে বাকহারা, বিমোহিত ও মুগ্ধ। তাহা তিনি প্রকাশ করে বলেন – “আমি কী গান গাব যে ভেবে না পাই – মেঘলা আকাশে উতলা বাতাসে খুঁজে বেড়াই”।

শ্রাবণ এনে দেয় প্রশান্তি ও নির্মল আনন্দধারা। এ সময়ে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে তথা প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ সবাইকে মুগ্ধ করে। উনার কাছে যেন “এই শ্রাবণ-বেলা বাদল ঝরা যুথি বনের গন্ধে ভরা”।
শ্রাবণ কাব্যময় ও প্রেমময়। বাদল দিনে মানুষের মন উতলা থাকে – হারিয়ে যেতে চায় কোনো অজানায়। তখন মনে মনে আমরা কেউ হয়তো গেয়ে উঠি কবির সেই প্রিয় গানটি – “আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে, জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না”।

শ্রাবণে মন হয় মেঘের সাথী। বাদলে রবিঠাকুরের মন যে কতটাই আবেগী উতলা হতো, তা আজ বিপুল বিস্ময়। তিনি লিখেন, “একলা বসে ঘরের কোণে কী ভাবি যে গোপন মনে, সজল হাওয়ায় যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে”। শ্রাবণ সন্ধা উনার কাছে কত তাৎপর্য্যপূর্ণ তা প্রকাশ করেছেন এই ভাবে- “নামিল শ্রাবণ সন্ধ্যা। এসো গো জ্বালিয়ে দিয়ে যাও প্রদীপখানি বিজন ঘরের কোনে”।
প্রকৃতির কোলে বারবার ঘুরে ফিরে আসে শ্রাবন। শ্রাবন যেন কবির প্রাণ। কবি মনে-প্রাণে শ্রাবণকে আহ্বান করেছেন। তিনি বলেন – “ওগো আমার শ্রাবণমেঘের খেয়াতরীর মাঝি, অশ্রুভরা পূরব হাওয়ায় পাল তুলে দাও আজি”।

কবি বলেন, বসন্তে চোখের জল থাকে না, কেবলমাত্র হাসি। শ্রাবণের শুক্লরাতে ফুল ফোটার সাথে ফুল ঝরার হয় মালাবদল। ফুল ফোটার হাসি, ফুল ঝরার কান্না, বিরহ-মিলন, বাদল হাওয়া সব মিশে একাকার হয় শ্রাবণে। তাই কবি বলেন- ‘আজ-শ্রাবণের সজল ছায়ায় বিরহ মিলন”।
শ্রাবণ আসে, শ্রাবণ যায়। রেখে যায় অবিরল প্রেমসুধা আর কষ্টমাখা স্মৃতি। কবি শ্রাবণ নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরে বলেন – “শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনীরে… পথতাপ লুণ্ঠিত, থরথর কম্পিত দেহ”। সুখ আর দুঃখে বিজড়িত দিন উনাকে কাতর করে। উনি বলেন – “আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে, তারি ছায়া পড়েছে শ্রাবণগগনতলে”।
বৃষ্টির মধ্যে এক ধরনের নেশা অনুভব করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বর্ষারাতে ক‚লকিনারাহীন অসীম মায়ালোকে যেন আনমনে চেয়ে থাকেন তিনি অবিরাম। আমরা উনাকে বলতে দেখি “এ ঘোর শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে”। কখনো শুধু শ্রাবণরাতিই যেন উনার দুঃখ-রজনীর সাথী। কবি বলেন -“আজি বরিষণ মুখরিত শ্রাবণরাতি, স্মৃতিবেদনার মালা একেলা গাঁথি”।

আকাশের নীলিমা, বৃষ্টি-নূপুরের শব্দ ও ঘন মেঘের ভেসে বেড়ানো ইত্যাদি কবির মনে ও প্রাণে তরঙ্গ তোলে। তিনি তা প্রকাশ করে বলেন, “মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো,দোলে মন দোলে অকারণ হরষে, হৃদয়গগনে সজল ঘন নবীন মেঘে, রসের ধারা বরষে”।

শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা, বর্ষণস্তম্ভিত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সৃষ্টি করে এক মোহসঞ্চারী গহন গভীর স্তব্ধতা ও পূর্বাভাস। কখনো শ্রাবণে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়। কবি বলেন – “আবার শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে, মেঘ-আঁচলে নিলে ঘিরে! সূর্য হারায়, হারায় তারা, আঁধারে পথ হয়-যে হারা … সকল আকাশ, সকল ধরা, বর্ষণেরি বাণী-ভরা”। আকুলতাভরা শ্রাবণকে রবিঠাকুর তার গানে স্থান দিয়েছেন প্রকৃতির রূপ ও রস মাখিয়ে। যেমন, “হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে, সেই সজল কাজল আঁখি পড়িল মনে”, কিম্বা, “মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে, আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে”, কিম্বা, “এসো শ্যামল সুন্দর, আনো তব তাপহারা তৃষাহারা সঙ্গসুধা, বিরহিনী চাহিয়া আছে আকাশে”, কিম্বা, ‘আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদল সাঁঝে, গহন মেঘের নিবিড় ধারার মাঝে, বনের ছায়ায় জলছলছল সুরে, হৃদয় আমার কানায় কানায় পুরে” ইত্যাদি। এসব গানে আছে প্রেম, আছে ভালবাসা, আছে বিরহী মনের ব্যাকুলতা।

শ্রাবনের বিরহ-মিলনের ভাবাবেগ তাঁর গানে সঞ্চারিত হয়েছে এবং বহু যুগ পরেও সেই রোমাঞ্চিত অনুভ‚তির আবেদন এতটুকুও কমেনি। যেমন – “আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে কী এনেছিস বল্-হাসির কানায় কানায় ভরা নয়নের জল।
বাদল-হাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে যুথীবনের বেদন আসে- ফুল-ফোটানোর খেলায় কেন ফুল-ঝরানোর ছল”।
রবীন্দ্রনাথ গানে বর্ষার বিদায়ের কথাও বলেন। যেমন, “বাদল-ধারা হল সারা, বাজে বিদায়-সুর, গানের পালা শেষ করে দে রে, যাবি অনেক দূর”। শ্রাবণকে ভালোবেসে কবি বলেন, “শ্যামল শোভন শ্রাবণ, তুমি নাই বা গেলে, সজল বিলোল আঁচল মেলে”।

আমাদের প্রাণের কবি, গানের কবি, প্রেমের কবি উনার সৃষ্টি দিয়ে আমাদের মনের স্মৃতির মনিকোটায় বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে। উনার মহাপ্রয়ানের দিন ২২-শে শ্রাবণে উনার প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সবাই ভাল ও নিরাপদ থাকুন। সবার প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ।
* প্রকৌশলী, ‘ইনস্টিউশন অব ইজ্ঞিনিয়ার্স, বাংলাদেশ’-এর সদস্য, কোয়ালিটি এসুরেন্স এন্ড ম্যানেজমেন্টে অনার্স সহ স্নাতক (অন্টারিও), ও সমাজ হৈতষী কর্মী।