অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অপমানজনক মন্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ট্রাম্প যখন প্রকাশ্যে তাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোমালি অভিবাসীদের “আবর্জনা” বলে উল্লেখ করেন, তা শুধু রাজনৈতিক বিতর্ককেই উসকে দেয়নি—একই সঙ্গে আঘাত করেছে পুরো সোমালি সম্প্রদায়কে। অভিবাসন নীতি, বর্ণবাদ এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষের আলোচনাকে আরও তীব্র করেছে এই ঘটনা।
গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প হঠাৎ করে ইলহান ওমরসহ সমস্ত সোমালি অভিবাসীদের “গারবেজ” বলে আক্রমণ করেন। ঘটনার পটভূমিতে ছিল গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে হত্যার ঘটনা, যার সন্দেহভাজন একজন আফগান নাগরিক—২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল। এই ঘটনা পর ট্রাম্প দাবি করেন, “তৃতীয় বিশ্বের দেশ” থেকে অভিবাসন কমাতে হবে। এমনকি তিনি বলেন, “আমরা যদি দেশে আবর্জনা আনি, তাহলে আমেরিকা ভুল পথে যাবে।”
ওমরকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের ভাষা ছিল আরও আক্রমণাত্মক। তিনি বলেন, “ইলহান ওমর আবর্জনা। তার বন্ধুরাও আবর্জনা। এরা কাজ করে না, সারাক্ষণ অভিযোগ করে। যেখানে তারা ছিল, সেখানেও তাদের কিছুই ছিল না।” ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি নাকি ওমরকে “একটুও চেনেন না”, তবে বহু বছর ধরে তাকে দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে দেখেছেন। সেই সঙ্গে তিনি ওমরকে “অক্ষম ও ভয়ানক মানুষ” হিসেবেও আখ্যা দেন।
ইলহান ওমর সোমালিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ থেকে ছোটবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়া এক সাবেক শরণার্থী। তিনি মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম সোমালি-আমেরিকান আইনপ্রণেতা এবং মিনেসোটা রাজ্যের এমন একটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ সোমালি সম্প্রদায় বাস করে। যদিও সোমালিদের মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার তুলনামূলক বেশি, তবু ২০২১ সালে মিনেসোটা চেম্বার অব কমার্সের রিপোর্টে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র—দুই দশকে তাদের দারিদ্র্য কমেছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, গড় আয়ে বৃদ্ধি হয়েছে এবং শিক্ষার হারও উন্নত হয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ট্রাম্প কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি “তৃতীয় বিশ্বের দেশ” থেকে সব অভিবাসন স্থগিত করেছেন এবং ১৯টি দেশের স্থায়ী বাসিন্দাদের অভিবাসন স্ট্যাটাস পুনরায় পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী এবং বর্তমান স্ত্রী উভয়েই পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসী হলেও তিনি অভিবাসীদের দেশের ওপর “বোঝা” বলে উল্লেখ করে যাচ্ছেন।
মিনেসোটার সোমালি অভিবাসীরা বহু দিন ধরেই ট্রাম্পের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। প্রথম মেয়াদে তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঁচ দেশসহ উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে যে ‘মুসলিম ব্যান’ করেছিলেন, সেখানে সোমালিয়াও ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তিনি কোভিড-যুগের কল্যাণ তহবিল দুর্নীতি মামলায় সোমালি অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন—যদিও এই মামলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকই অভিযুক্ত।
ইলহান ওমর বহু বছর ধরেই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার। ২০১৯ সালে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “তারা যেন তাদের ভাঙা, অপরাধপীড়িত দেশগুলোয় ফিরে গিয়ে সেগুলো ঠিক করে আসে।” থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির সময় তিনি মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজকে “সিরিয়াসলি রিটার্ডেড” বলে অপমান করেন এবং দাবি করেন যে সোমালি গ্যাংরা নাকি রাস্তায় ঘুরে অপরাধ করছে। একই সঙ্গে ওমরের হিজাবকে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, “সে সব সময় তার সোঁদা-মোড়া হিজাবে মোড়া থাকে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওমর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, “তার আমার প্রতি এই আসক্তি ভৌতিক। আমি আশা করি সে যে সাহায্যের দরকার, তা দ্রুত পায়।” ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানায় প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটসও। এক বিবৃতিতে তারা বলে, “এটাই ট্রাম্পের কৌশল—নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতে ঘৃণা ছড়ানো, সম্প্রদায়কে বিভক্ত করা এবং আইসিই পাঠিয়ে অভিবাসীদের ভয় দেখানো। এটি ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী আচরণ।” ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন মিনেসোটায় যে আইসিই অভিযান শুরু করেছে, তা সোমালি অভিবাসীদের লক্ষ্য করেই পরিচালিত হচ্ছে বলে স্থানীয় মহল মনে করছে।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
