ডঃ বাহারুল হক : ওয়াশরুম, রেস্টরুম, বাথরুম এই তিনটা শব্দের অর্থ মূলত এক। তবে যারা ওয়াশরুম পছন্দ করেন তাদের ভাষ্য হলো- গ্রহণ এবং বর্জন হলো মানুষের ধর্ম। মানুষ গ্রহণ না করলে যেমন বাঁচে না তেমনি বর্জনও মানুষের জন্য অপরিহার্য।

আবার গ্রহণ করলে যেমন ওয়াশ করতে হয় তেমনি বর্জন করলেও ওয়াশ করার প্রয়োজন পড়ে। অতএব যেখানে অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ ওয়াশ কাজটি করা হয় তাকে তো ওয়াশরুম বলাই ভালো। রেস্টরুম পছন্দ তারা করেন যারা মনে করেন সেই রুমেতো বস্তুত রেস্টই নেয়া হয়। কোন জুট ঝামেলা নেই, কোন বাধা বিপত্তি নাই, নিজের মনে নিজের ইচ্ছা মত বসে বসে রেস্ট নেয়ার জন্য এর চেয়ে উত্তম স্থান আর কি। সে জন্য এ রুমের নাম হয়েছে রেস্টরুম। বাথরুম নাম যাদের পছন্দ তারা বলেন এই রুমে যত কাজ হোক, গোসলই হলো মুখ্য কাজ তাই একে বাথরুম বলতে হবে।

আমার আবার ওয়াশরুম নামটা পছন্দ। ওয়াশরুম ছাড়া এখন কিছু হয় না। বাসগৃহ থেকে শুরু করে পার্ক, বিমানবন্দর, রেষ্টুরেন্ট, ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, থিয়েটার, বাস স্ট্যান্ড কোথায় নাই ওয়াশরুম! বাসায়তো ওয়াশ রুম থাকবেই। ওয়াশরুম নিয়ে একটা গুরুত্বপুর্ণ কথা আছে। যে কোন বাসার ওয়াশরুম সে বাসার বাসিন্দাদের রুচি আর পরিচ্ছন্নতাবোধের পরিচায়ক। ওয়াশরুমে প্রয়োজনীয় উপাদানের উপস্থিতি, সাজানো গোছানো বা বিন্যাস এবং ওয়াশরুম কত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এসব দিয়ে বুঝা যায় বাসার বাসিন্দারা কি রকম রুচির এবং তাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বোধ কত প্রখর। বাসা ছোট হলে থাকে একটা, বড় হলে থাকে দুইটা বা তিনটা। কোন কোন বাসায় প্রত্যেকটা বেড রুমের সাথে থাকে একটা ওয়াশরুম। বড় বড় সে সব বাসা ধনীদের আবাস স্থল। সে সব বাসার ছেলে মেয়েরা বেড়ে উঠে ওয়াশরুম সংযুক্ত নিজের বেড রুমে। এ সব বাসার ছেলে মেয়েরা অন্য রকম এক মন মানসিকতা নিয়ে বড় হয়।

ওয়াশরুমটি একান্তভাবে তার। অন্য কেউ ব্যাবহার করতে আসে না। কোন কোন বাসায় ড্রইং রুমের পাশে মুলত মেহমানদের ব্যাবহারের জন্য থাকে একটা বিশেষ ওয়াশরুম যাতে সব আছে কিন্তু গোসলের কোন ব্যাবস্থা নাই।

গোসলের সুযোগবিহীন এই ওয়াশরুমকে বলা হয় পাউডাররুম বা হাফবাথরুম। যে সকল মেহমান অল্প সময়ের জন্য আসেন, রাত্রি যাপন করেন না বা থাকেন না, গল্প-সল্প করে চলে যান তাদের জন্য পাউডাররুম বা হাফ বাথরুম একটা অতি উত্তম ব্যাবস্থা। ওয়াশরুম সংযুক্ত পৃথক রুমে থাকা ছেলে মেয়েরা সময়মত ওয়াশরুম ব্যাবহার করতে না পারার যন্ত্রণাটা কি তা বুঝতেই পারে না। তারা যখন ইচ্ছা তখন ওয়াশরুমে যায়। যখন ইচ্ছা তখন বের হয়। কেউ কেউ কমোডে বসে বই পড়ে। গোসল করতে গেলে কেউ কেউ গান ধরে। কেউ কেউ শেভ করতে শুরু করলে আর থামে না। কেউ কেউ চুল ঠিক করতে গেলে মহা বিপদে পড়েন। সিঁথি কোন দিকে করবেন, আলপিটের ভাজ কেমন হবে উচ্চতা কেমন হবে ভাবতে ভাবতে সময় শেষ। আর নার্সিসিজম জটিলতায় যারা ভুগছে তাদের নিয়েতো মহা সমস্যা। শাওয়ারের পানির নিচে দাঁড়িয়ে নিজের রুপ দেখতে দেখতে নিজেই বিভোল। পানি শেষ হয় কিন্তু তাদের গোসল শেষ হয় না। এই ধরনের ছেলে মেয়েদের নিয়ে আত্মিয় স্বজনরা অসুবিধায় পড়েন।

বাংলাদেশের মানুষের অর্থিক স্বচ্ছলতা অনেক বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে ধনী পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিদেশে লেখাপড়া করার স্পৃহা। বিদেশ বলতে এখন শুধু ইন্ডিয়া নয়। ছেলে মেয়েরা এখন যেতে চায় ইউরোপ আমেরিকা। বিশেষ করে নর্থ আমেরিকার দেশ কানাডায়। এ জন্য বাংলাদেশের শহরগুলোতে রমরমা কোচিং ব্যবসা। আই ই এল টি এস কোচিং। টাকা কোন সমস্যা নয়। সমস্য শুধু ইংলিশ। কোচিং করে পরীক্ষা দিলে ইংলিশও আজকাল কোন সমস্যা নয়।

ফলে বিপুল সংখ্যায় প্রতি বছর যাচ্ছে কানাডা। যাচ্ছে টরন্টো, ক্যালগেরি, ভ্যানকুভার্, আলবার্টা, অটোয়া, মন্ট্রিআল এ রকম নানা শহরে। এদের অনেকেই কানাডায় গিয়ে উঠে কোন আত্মিয়ের বাসায়। দীর্ঘদিন না থাকলেও কয়েক দিনতো থাকা হয়। কানাডা যারা থাকেন তাদের কয়জনের বাসায় একাধিক ওয়াশরুম আছে? বেশির ভাগ থাকেন এক বা দুই ওয়াশরুম ওয়ায়ালা বাসায়। বেডরুম আছে দুইটা বা তিনটা। থাকেন স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়ে মিলিয়ে চার/ পাঁচ জন।

মনে করেন সে রকম ধনী পরিবারের (যাদের বাসায় প্রত্যেক বেডরুমের সাথে আছে ওয়াশরুম) এক ছেলে এসে কানাডা এসে উঠলো তাদের এক আত্মিয়ের বাসায় যে বাসায় সদস্য সংখ্যা চার আর ওয়াশরুম সর্বসাকুল্যে একটা। ধনীর সে দুলাল যার আনলিমিটেড সময় ওয়াশরুমে ব্যায় করার অভ্যাস সে এই বাসায় উঠা মাত্র শুরু হবে বিপত্তি। অবশ্য বিপত্তি ঘটবে না যদি ছেলেটার মধ্যে বিবেকবোধের আবির্ভাব ঘটে।

আর যদি বিবেকবোধের আবির্ভাব না ঘটে তাহলে সে বাসার কারো উপায় নাই বিপত্তি থেকে রেহাই পাওয়ার। এরা দেশ থেকে আসে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা পাস করার পর। বয়স কম। কত আর? আঠার কি উনিশ বছর। এদের বিবেকবোধ কেন এত প্রখর হবে? না হওয়ারই কথা। এরা ওয়াশরুম দেখলেই মনে করে ওর ওয়াশরুম। স্থান কাল সব ভুলে যায়। এরকম ছেলে মেয়ে পিঃ করতে ব্যায় করে পনের মিনিট, পুঃ করতে লাগে ত্রিশ মিনিট, গোসল করার জন্য প্রবেশ করলে বের হয় পঞ্চাশ মিনিট পর। আসলে যারা দেশ থেকে তাদের ছেলে মেয়েকে কানাডায় কোন আত্মীয়ের বাসায় পাঠান তাদের একটা দায়ীত্ব আছে। তাদের উচিত যে আত্মীয়ের বাসায় পাঠাবে সে আত্মীয়ের সাথে ফ্র্যাংকলি কথা বলে আত্মীয়ের বাসা সম্ম্ন্ধে সব জেনে নেয়া। তারপর তাদের কাজ হবে যে ছেলে বা মেয়েকে পাঠাবে তাকে ভালো করে বুঝানো কেমন করে সে বাসায় থাকতে হবে। তার হাঁটা-চলা- উঠা-বসা-শোয়া-জাগা ইত্যাদি কোন কিছুতেই যেন যে বাসায় সে থাকতে যাচ্ছে সে বাসার কেউ বিরক্ত না হয়। আর ওয়াশরুমের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে – সে যেন ওয়াশরুমে মিনিমাম সময় ব্যায় করে; সে যেন কিছুতেই ভুলে না যায় যে সে পরিবারের সবাই ব্যাবহার করে একটা মাত্র ওয়াশরুম। অতএব অকারণে ওআশরুমে দীর্ঘ সময় ব্যায় করে পরিবারের অন্যদের জন্য কোন রকম সমস্যা সৃস্টি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

হাসির, রাগের, উপদেশ মুলক কত রকমের কথা যে কত জন তাদের ওয়াশরুমে লিখে রেখেছে! সেসব কথার কিছু এ রকম:-
* “প্লিজ ডু নট মোভ। রিমেইন সিটেড ফর দি এনটায়ার পারফরমেন্স”।
* “পিঃ করার সময়ও যদি পেছন দিয়ে শব্দ বের হয় ভয় পাবেন না;
মনে রাখবেন মাঝে মাঝে বৃস্টির সময় আকাশ গর্জন করে”।
* “ওয়েলকাম। হিয়ার ইজ দি বেস্ট সিট ইন দি হাউজ”।