হাসান আমিন: স্থগিত থাকা আগ্নেয়াস্ত্র আইন বিল সি-২১ এর একাধিক বিতর্কিত সংশোধনী প্রত্যাহার করেছে লিবারেল সরকার। আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই কিছু আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ও সমালোচকরা বলে আসছেন যে, আইনটি সংশোধনীর মাধ্যমে অন্যায়ভাবে শিকারি এবং কৃষকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কনজারভেটিভ, এনডিপি, ব্লক এমপি এবং আগ্নেয়াস্ত্র অধিকার গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে লিবারেল এমপি তালিব নুর মোহাম্মদ গত ৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার বলেছেন, সরকার বন্দুকের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যেগুলোকে চাপের মুখে ‘নিষিদ্ধ’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো।

গত নভেম্বরে একজন লিবারেল এমপি আগ্নেয়াস্ত্র আইনের সংশোধনীগুলো উপস্থাপন করেছিলেন। যা তালিকায় থাকা অস্ত্রগুলোকে প্রবিধানের পরিবর্তে ফৌজদারি কোডের অধীনে নিষিদ্ধ করা যেত। এটি হলে ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য নিষেধাজ্ঞাটিকে পুনরায় পরিবর্তন করা আরও কঠিন হয়ে যেতো। সরকার এমন ধারাগুলো বাতিল করছে যা কার্যকরভাবে পাঁচ রাউন্ডের বেশি একটি ম্যাগাজিনসম্পন্ন যে কোনও রাইফেল বা শটগান নিষিদ্ধ করতে সক্ষম ছিলো। সরকার ১০ হাজার জুলের বেশি শক্তি উৎপন্ন করে এমন লম্বা বন্দুক বা ২০ মিলিমিটারের বেশি চওড়া মুখ ওয়ালা যে কোনও বন্দুক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল – এমন দুটি নিয়ম যা অনেক আগ্নেয়াস্ত্রকে বেআইনির তালিকায় ফেলে দিত।

এই সংশোধনীগুলো শিকারীদের দ্বারা বিস্তৃতভাবে ব্যবহার হওয়া বেশ কয়েকটি লম্বা বন্দুককে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ফেলত। বিল সি-২১ মূলত খসড়া হিসাবে হ্যান্ডগান নিষিদ্ধ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। তবে সংশোধনীগুলো এর পরিধি প্রসারিত করেছে। মূলত বিলটি প্রাথমিকভাবে যেভাবে লেখা হয়েছিলো সেখান থেকে সংশোধনী সংযোজনের মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলো, পরিবর্তনগুলো সংসদীয় নিয়মের অধীনে গ্রহণযোগ্য কিনা? সরকার বিতর্কিত ওইসব সংশোধনী থেকে সরে আসায় সেসব উদ্বেগ এখন দূর হয়েছে।
সরকার এখন বিল সি-২১ এর অধীনেই পদক্ষেপ নেবে; যা একটি হ্যান্ডগান বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বন্দুক চোরাচালান রোধ করে এবং গার্হস্থ্য নির্যাতনকারীদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করে। জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনো গত ৩ ফেব্রæয়ারি, শুক্রবার বলেছেন, সরকার এখন-বিলুপ্ত সংশোধনী প্যাকেজের কিছু অংশ পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবে। সিবিসি’র পাওয়ার অ্যান্ড পলিটিক্সের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে মেন্ডিসিনো বলেছেন, সরকার যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য ডিজাইন করা আগ্নেয়াস্ত্রের উপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করবে- আমাদের সমাজে যার কোনো স্থান নেই। মেন্ডিসিনো আরও বলেন, সরকার গ্রামীণ কানাডিয়ান, শিকারী বা আদিবাসীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সংশোধনীর খসড়া তৈরি করেনি যারা এই আগ্নেয়াস্ত্রের উপর নির্ভর করে। তিনি জানান, আমরা বারবার বলেছি, সরকারের উদ্দেশ্য হল এআর-১৫এস এবং অন্যান্য অ্যাসল্ট-স্টাইল অস্ত্রের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। শিকার শুধুমাত্র কানাডিয়ান একটি গর্বিত ঐতিহ্য নয়, এটি এই দেশ জুড়ে স¤প্রদায়ের জন্য জীবনযাপনের একটি উপায়। বিল সি-২১ শিকারীদের টার্গেট করে নয়। এটি এমন কিছু বন্দুকের বিষয়ে যা অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক।

এ দিকে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠী পলিসুভিয়েন্ট বলেছে, তারা সরকারের সিদ্ধান্তে মর্মাহত। তবে এটি স্পষ্ট যে, রক্ষণশীল এমপিদের দ্বারা প্রচারিত ভুল তথ্য এবং বন্দুক লবি জিতেছে, বলেছেন গ্রæপের মুখপাত্র নাথালি প্রভোস্ট। প্রভোস্ট বলেন, তিনি চান যে লিবারেল সরকার এনডিপি এবং বøক কুইবেকয়েসের সাথে কাজ করুক যাতে হামলার অস্ত্র নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করা যায়।

উল্লেখ্য, লিবারেল সরকার ইতিমধ্যেই একটি অর্ডার-ইন-কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘অ্যাসল্ট-স্টাইল’ আগ্নেয়াস্ত্রকে নিষিদ্ধ করেছে — যা নোভা স্কশিয়ার পোর্টাপিক হত্যাযজ্ঞের পর ২০২০ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভার নির্দেশ মোতাবেক করা হয়। প্রত্যাহার করা বিল সি-২১ সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল, আইনে সেই হামলার নিষেধাজ্ঞাকে কোডিফাই করা (একটি অর্ডার-ইন-কাউন্সিল অন্য সরকার সহজেই প্রত্যাহার করতে পারে) এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের তালিকায় আরও অনেক নির্মাণ এবং মডেল যুক্ত করা।

গভর্নমেন্ট হাউসের নেতা মার্ক হল্যান্ড বলেছেন, বাতিল করা কিছু সংশোধনী পুনরুজ্জীবিত করার আগে আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সাথে পরামর্শ করার জন্য সরকারের ‘আরো সময় দরকার’। এ দিকে ‘কানাডিয়ান কোয়ালিশন ফর ফায়ারআর্ম রাইটস’ এর একজন মুখপাত্র লিবারেল সরকারের সংশোধনী থেকে পিছিয়ে আসাকে ‘বড় যুদ্ধে একটি ছোট জয়’ বলে অভিহিত করেছেন। সূত্র : সিবিসি নিউজ