শওগাত আলী সাগর : ইন্সুরেন্স পলিসি বিক্রির জন্য লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্টরা নানাভাবে চেষ্টা করেন, এটাই স্বাভাবিক। সেই চেষ্টাটা যাতে প্রতারণায় গিয়ে না ঠেকে কিংবা জবরদস্তিমূলক না হয় সে ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা আছে এজেন্টদের জন্য। তারপরও বিভিন্ন সময় লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্টদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে, তাদের বিক্রির কৌশল নিয়ে নানা রকমের কথাবার্তা হয়। এবার অভিযোগ উঠেছে লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্টদের কেউ কেউ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট তথা বিদেশি শিক্ষার্থী বা নতুন আসা অভিবাসীদের বিধি বহির্ভূতভাবে এবং প্রতারণামূলকভাবে লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসি গছিয়ে দিচ্ছে।

ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস রেগুলেটরি অথরিটি অব অন্টারিও (এফআরএসএ) হচ্ছে লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্টদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই সংস্থার কাছে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ যাওয়ার পর তারা এই ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিবৃতিতে বলেছে, লাইফ ইন্সুরেন্স কেনাটা হচ্ছে ঐচ্ছিক। অর্থ্যাত একজন মানুষ চাইলে সেটি কিনতে পারেন, না চাইলে সেটি নাও কিনতে পারেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, চাকুরীর শর্ত হিসেবে লাইফ ইন্সুরেন্স কিনতে বলাটা বেআইনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্টদের কেউ কেউ বিদেশি শিক্ষার্থী এবং নতুন অভিবাসীদের এই ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছে লাইফ ইন্সুরেন্স কেনার জন্য।

সংস্থা এই ধরনের প্রস্তাবকারী এজেন্টদের ব্যাপারে সরাসরি তাদের তথ্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে যে কোনো লাইফ ইন্সুরেন্স এজেন্ট এর সঙ্গে ইন্সুরেন্স বিষয়ক লেনদেন করার আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের আপটুডেট লাইসেন্স আছে কীনা সেটি যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে এজেন্ট-এর নাম দিয়ে সার্চ করলেই তার আপটুডেট লাইসেন্স আছে কীনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আশ্বস্থ করেছে তারা এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সুপার ভিসা ইন্সুরেন্স এবং হার্ট কন্ডিশন
১. সুপার ভিসা ইন্সুরেন্সের ক্ষেত্রে ‘হার্ট কন্ডিশন’ অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে প্রিএক্সিসটিং কাভারেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে হার্ট কন্ডিশন সংক্রান্ত কতগুলো প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে হয়। কারো যদি হার্ট কন্ডিশন থেকে থাকে কিংবা অতীতে কখনো হার্ট কন্ডিশনের ভেতর দিয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিয়েই ইন্সুরেন্স নিতে হবে।
২. আমরা সবাই জানি, কারো হার্ট কন্ডিশন এবং ডায়বেটিসের মেডিকেশন থাকলে অধিকাংশ কোম্পানিই প্রিএক্সিসটিং কাভারেজ দেয় না। প্রিএক্সিসটিং কাভারেজ পাওয়ার জন্য এটি হচ্ছে কোয়ালিফাইয়িং কোশ্চেন।
কেউ শুধু ডায়বেটিসের ওষুধ খান, হার্টের ওষুধ খান না কিংবা হার্টের ওষুধ খান কিন্তু ডায়বেটিসের ওষুধ খান না, সে ক্ষেত্রে ঠিক আছে। কিন্তু এক সাথে দুটো ওষুধ থাকলেই সমস্যা। তিনি প্রিএক্সিসটিং কাভারেজ পাবেন না।
২/১টি কোম্পানি আছে যারা প্রিএক্সিসটিং কাভারেজ দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলো করে না। যাদের দুটো কন্ডিশনের জন্য মেডিকেশন নিতে হয়- তাদেরও ই২/১টি কোম্পানির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

৩. হার্ট কন্ডিশনের ক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্ন করা হয়- ১০ বছরের বেশি সময় আগে হার্ট বাইপাস, হার্ট ভাল্ভ সার্জারি বা এঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছে কীনা। ভালো করে খেয়াল করবেন- জানতে চাওয়া হচ্ছে- ১০ বছর আগে বাইপাস হয়েছে কীনা। সাধারনভাবে আমরা মনে করি, ২/১ বছরের মধ্যে হার্ট বাইপাস বা কোনো ধরনের সার্জারি হয়ে থাকলে সেটি বোধহয় রিস্কি। কিন্তু ইন্সুরেন্স কোম্পানি ২/৪ বছরের কথা জানতে চাচ্ছে না, তারা জানতে চাচ্ছে ১০ বছর আগের কথা। ১০ বছরের ভেতর বাইপাস হলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি সেটি গ্রহণ করছে কিন্তু ১০ বছর আগে হলে আর সেটি গ্রহণ করছে না। কাজেই এই ব্যাপারে আপনার পরিষ্কার তথ্য দিতে হবে।

৪. তবে এক বছরের মধ্যে হার্ট কন্ডিশন জনিত কিছু ছিলো কীনা সেটি ইন্সুরেন্স কোম্পানি জানতে চায়। পলিসি ইফেক্টিভডেট থেকে গত ১২ মাসের মধ্যে কোনো ধরনের হার্ট কন্ডিশন, শর্টনেস অবব্রেথ, চেষ্টপেইন, স্ট্রোক বা মিনি স্ট্রোক হয়েছে কীনা তা জানাতে হবে। শুধু তাই নয়- এই সময়ে হার্ট কন্ডিশনের জন্য চিকিত্সক নতুন কোনো ওষুধ দিয়েছে কীনা, কিংবা ওষুধের ডোজ, মাত্রা বা ওষুধ পরিবর্তন করেছে কীনা, চিকিত্সার কোনো চেঞ্জ হয়েছে কীনা, এই সময়ে টেস্টিং বা ইনভেস্টিগেশনের জন্য কোনো স্পেশালিষ্টের কাছে পাঠানো হয়েছে কীনা, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বা ইমার্জেন্সী বিভাগে চিকিত্সা নিতে হয়েছে কীনা- এগুলো জানাতে হবে।

যে কোনো ধরনের ইন্সুরেন্সই আপনার দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তনেয়। সঠিক তথ্য জানানোটা আপনার দায়িত্ব। সুপার ভিসায় আমাদের বাবামারা আসেন। অবস্থানগত কারনেই হয়তো তাদের শাররিক অবস্থার খুঁটিনাটি আমাদের জানা সম্ভব হয় না। সুপার ভিসা ইন্সুরেন্সর ক্ষেত্রে সব তথ্য জেনে নিয়েই আপনার এজেন্টের সাথে কথা বলবেন। বিশেষ করে হার্ট কন্ডিশন থাকলে অবশ্যই ডিটেইল জেনে নেবেন। লেখক: শওগাত আলী সাগার, ইন্সুরেন্স ব্রোকার, ইমেইল: shaugat@gmail.com