বিদ্যুত সরকার : ইচ্ছে করলেই ফোন-কলটি রিসিভ করতে পারতে। আমিতো দিন -ক্ষণ দেখে শুনেই কল করেছিলাম। তবে কি কোথাও কোন ভুল করে ফেলেছি আমি? ভুল হলেও হতে পারে, তাওতো জানতে পারিনি আদৌ। জানার অধিকারটুকুও কি আমার অজান্তেই হারিয়েছি আমি? কী অদ্ভুত নিয়মের ঘেরাটোপে আটকে গিয়েছি সজনে-বিজনে। তুমি কি তখন যার পর নাই ব্যস্ত ছিলে? তোমার কি খুব জরুরি কাজ ছিল ঠিক সে সময়টাতেই? থাকাটাও অপ্রত্যাশিত কিছু নয় কিন্তু, তাওতো আমার জানা ছিল না। ইচ্ছে করলেই জানাতে পারতে, এতে খুব কি অসুবিধে হতো তোমার? দু’ শব্দের একটি বাক্য সহজেই মেসেজ করে পাঠানো কি খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল তোমার জন্য? তবে কেন আমি স্বঘোষিত এক অভিমানী অপরাধী রূপে নিজকে আবিষ্কার করে ফেলি সহজেই। মাওয়া অভিমুখে সুনসান সড়ক, নিমেষেই পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। সামনেই স্বপ্নের পদ্মা-সেতু। দু’পাড়ের মৃত্তিকার অটুট বন্ধন, ভালোবাসার উজ্জ্বল নিবন্ধন আজ বাস্তবতার এক নিগুঢ় দৃষ্টান্ত কী মায়া জাগায় প্রাণে! রাস্তার দু’ধারের হলুদ সর্ষে ফুলে শোভিত ডিভান, মাওয়ার ‘প্রজেক্টে হিলসা’র সর্ষে ইলিশ – সব কিছুই কি মিথ্যে ভাববো আমি? আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ, নিমতলি’র ভালো লাগার স্টপেজগুলো আজ বড় অবহেলিত। পদ্মার হু হু হাওয়া বয়ে আনে ইলিশের সুঘ্রাণ। নন্ স্টপ চলাচল, নন্ স্টপ ভালো লাগা কি থমকে যাবে বিঘ্নিত ফোনালাপে, প্রলম্বিত নিরবতায়? তবে কি আর দেখা হবে না চিম্বুক পাহাড়ের দৃষ্টি নন্দন সবুজে ছাওয়া বন ভূমি, কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলের সজল প্রতিচ্ছবি? তবে কি আর শোনা হবে না কোন দিন কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের সারি সারি ঝাউ গাছের ফিস ফিস কথোপকথন? আমি কি আবার হারিয়ে যাবো এক জনবহুল ভিরের মাঝে? আমি কি আবার নিরুদ্দেশ হবো ঠিকানাবিহীন কোন দ্বীপপুঞ্জে, যেখানে নাবিক তার নোঙর তুলে জাহাজ ভাসাবে অথৈ সাগরে। একটি অসমাপ্ত ফোন কল, একটি অসমাপ্ত ভাবনা, একটি পরিসমাপ্ত ছোট গল্প।
বিদ্যুত সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা