ফরিদ আহমেদ : ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সবে পা দিয়েছে মহাকাল। ঠিক এই সময়ে বাংলার বুকে নেমে আসে এক অন্ধকার অমানিশা। কালরাত্রিসম এক ক্রান্তিকালে ডুবে যায় দেশ। এমন ক্রান্তিকাল বাংলাতে এর আগে আসেনি কখনো।

সেন রাজাদের তখন ক্ষয়িষ্ণু সময়। ক্ষমতায় রয়েছেন বয়োবৃদ্ধ রাজা ল²ণ সেন। বয়স-জনিত কারণেই হোক, কিংবা দুর্বল চরিত্রের কারণেই হোক, তিনি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন তাঁর রাজ্যের উপর। তাঁর শাসন শিথিল থেকে শিথিলতর হচ্ছে। রাজ্যের কলকাঠি সব সামন্ত-প্রভুদের হাতে। নিজেদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ ও পাকাপোক্ত রাখতে এরা অবর্ণনীয় অত্যাচার আর নির্যাতন চালাতো সাধারণ মানুষের উপরে। তাদের দ্রাংষ্টাঘাতে দগ্ধীভ‚ত জীবন তাদের।

ঠিক এই সময়ে পশ্চিম সীমান্ত থেকে দেখা দেয় ভয়াবহ এক হুমকি। মগধ দখল করে ফেলে তুর্কী মুসলমানরা। এদের নেতা হচ্ছেন ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি। খিলজি বাহিনী যে নৃশংসতায় মগধ দখল করেছে, সেটা জানার পরে বাংলার বুকেও হৃৎকম্প শুরু হবার কথা। হয়েছিলোও তাই। বিদেশি এই বর্বর বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন ছিলো একতার, সম্মিলিত প্রতিরোধের। সেই একতাটাই তখন দূরীভ‚ত। সম্মিলিত প্রতিরোধ তাই সূচিত হতে পারে নাই।

সেন রাজবংশের রাজত্বকালে এদের অত্যাচারে বৌদ্ধরা পরিণত হয়েছিলো বোবা প্রাণীতে। কাল পরিবর্তনের হাওয়াতেও তারাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। রহস্যময় হয়ে ওঠে তাদের আচরণ। তারা কি যবনদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, নাকি তারাও প্রতিরোধের অংশ হবে, বোঝা যায় না। যদিও মগধে তুর্কি মুসলমানদের কাছে বৌদ্ধরাও কোনো খাতির পায়নি। ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল এবং নালন্দা বিহারকে ধ্বংস করে দিয়েছে মুসলমানরা।

শুধু বৌদ্ধরাই নয়, উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের উপরেও চালাতো অবর্ণনীয় অত্যাচার। বিদেশি আক্রমণ তাই তাদেরকেও বেশি বিচলিত করেনি। তারা নিশ্চুপ থাকারই সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, যৌথভাবে বিদেশি শত্রæর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনাটাই জাগে না। যে সমাজে একতা বলতে কিছু নেই, সেই সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। বাংলাও তাই ধ্বংস হয়েছিলো তুর্কি মুসলমানদের প্রবল আক্রমণের তোড়ে।

১২০৩ সালে বখতিয়ার খিলজি মঙ্গল বাহিনীর মতো দ্রুততায় আক্রমণ চালায় বাংলায়। লক্ষণ সেনের রাজধানী লক্ষণাবতী দখল করে নেয় তারা। সেখান থেকে আরও পূর্ব দিকে আক্রমণ শানাতে থাকেন বখতিয়ার খিলজি। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দখল করে নেন পুরো বাংলা। তাঁর নৃশংস আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় বাংলার প্রধান প্রধান সব বৌদ্ধ বিহারগুলো। বৌদ্ধদের প্রতি তাঁর আলাদা কোনো রাগ ছিলো এমন না। বিহারগুলোতে মূল্যবান রতœভাÐার থাকে, সেগুলোকে ছিনিয়ে নেবার জন্যই মূলত সেখানে আক্রমণ হতো। একই কারণে মন্দিরেও হামলা করতেন তিনি।

বখতিয়ার খিলজির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বহু লোক প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায় ভিন্ন দেশে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শুধু নিজেদের প্রাণ নয়, একই সাথে বহু মূল্যবান পুঁথিও সাথে করে নিয়ে পালিয়ে যায় তিব্বত, নেপাল কিংবা আরও দূর দেশে। যে কারণে আমাদের বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ আমরা বাংলাদেশের কোথাও পাইনি, পেয়েছি নেপালের রাজদরবারে।

ইতিহাসের এই ক্রান্তিকালকে পটভ‚মিকা বানিয়ে একটা উপন্যাস লিখেছেন প্রীতম বসু। উপন্যাসের নাম “চৌথুপীর চর্যাপদ”। শুধু এই ক্রান্তিকালকে পটভ‚মি বানিয়েছেন তিনি, এটা বললে ভুল হবে। তাঁর উপন্যাসে বর্তমানের একটা ধারাও শক্তভাবে বহমান। অতীত আর বর্তমানের দু’টো ধারাকে তিনি সমান্তরালে চলার সুযোগ দিয়েছেন। আটশো বছরের বেশি সময় ব্যবধানে চললেও, এই দুই ধারা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, বরং পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ইতিহাসের সেই অতীত ধারা গড়ে উঠেছে গন্ধকালীকে কেন্দ্র করে। গন্ধকালী ছিলেন কৈবর্ত কন্যা। উত্তর বাংলার তালপাটক গ্রামের অধিবাসী তাঁরা। বাল্যকালেই গন্ধকালীর জীবনে ঘটে গিয়েছিলো এক চরম বিপর্যয়। ডাকাতরা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলো তাঁকে। বাল্যেই অসুর বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো বলে সমাজের স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এমন মেয়ের পক্ষে বিয়ে করে সংসারী হওয়া সম্ভব ছিলো না। তাঁর নিজস্ব এই ক্রান্তিকাল মিশে গিয়েছিলো বাংলার ক্রান্তিকালের সাথে।

তুর্কি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় শিলাদিত্য সঙ্ঘারাম। শিলাদিত্য সঙ্ঘারামের অধ্যক্ষ ছিলেন শ্রীধর আচার্য। জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকপাল তিনি। নালন্দা এবং বিক্রমশীল মহাবিহারেও এক সময় অধ্যাপনা করেছেন তিনি। তুর্কি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে সেখান থেকে কোনোক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসেন শ্রীধর আচার্য।

মৃতপ্রায় শ্রীধর আচার্যকে নদী থেকে তুলে আনেন গন্ধকালী এবং তাঁর বাবা চন্দর মাঝি। সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন তাঁকে তাঁরা। শ্রীধর আচার্যের পরিচয় জানার পরে এলাকাবাসী তালপাটকে একটা চতুষ্পাঠী করে দেয়। সেখানে তিনি গ্রামের ছেলেদের পড়াতেন। গ্রামবাসীদের প্রবল আপত্তিকে উপেক্ষা করে সেই চতুষ্পাঠীতেই তিনি শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন গন্ধকালীকে। মেয়েটা যে অসম্ভব শ্রুতিধর এবং মেধাবী সেই সংকেত বুঝতে পÐিতের খুব একটা সময় লাগেনি। কন্যা-স্নেহে তিনি নিজের সমস্ত অর্জিত জ্ঞান ঢেলে দিতে থাকেন গন্ধকালীর পাত্রে। তৃষ্ণার্ত শুকনো মাঠ যেমন নিমেষেই শুষে নেয় বৃষ্টিধারাকে, গন্ধকালীও সেইভাবে গুরুর সমস্ত জ্ঞানকে নিজের মধ্যে আহরণ করতে থাকে।

এই সময়টা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তালপাটকেও তুর্কি আক্রমণের ঢেউ এসে পড়ে। গুরু দক্ষিণার দোহাই দিয়ে শ্রীধর আচার্য গন্ধকালী পালিয়ে চৌথুপীর বিহারে চলে যেতে বলেন। গুরুর কথা মান্য করে বিপদসংকুল এক পথ পাড়ি দিয়ে চৌথুপীতে পৌঁছায় গন্ধকালী। ভর্তি হবার জন্য যায় বিহারের দ্বারপ্রান্তে। চৌথুপীর দ্বারপণ্ডিত শান্তভদ্র বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁকে নিজের জ্ঞান দিয়ে মুগ্ধ করলেও, বিশ বছর বয়স হয়নি এই কারণে ভর্তি বঞ্চিত হয় গন্ধকালী। এই বঞ্চনা অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। অল্প সময়ের মধ্যেই অবশ্য চৌথুপীর বিহারে প্রবেশ করেন গন্ধকালী। তবে, সেটা ছাত্র হিসাবে নয়, পণ্ডিত শান্তভদ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করার মাধ্যমে। যেখানে ভর্তিই হতে পারেননি তিনি, সেটারই অধ্যক্ষ বনে যান তিনি।

তুর্কি আক্রমণ একসময় চৌথুপীতেও আসন্ন হয়ে ওঠে। এর আগে এটাকেই নিরাপদ ভেবে সমস্ত বিহার থেকে মূল্যবান সব পুঁথি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো চৌথুপীতে। বিশেষ করে বিক্রমশীল মহাবিহার থেকে কয়েক হাজার পুঁথি এসেছিলো এখানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মসম্ভব, দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, প্রজ্ঞাকরমিতি, পণ্ডিত নারো পা, স্থবির বোধিভদ্র, শ্রীজ্ঞান মিত্রের মতো পণ্ডিতদের লেখা বহু মহামূল্যবান পুঁথি। আসন্ন তুর্কি আক্রমণ থেকে এগুলোকে বাঁচানোটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার। তবে, আশ্রমের মহাস্থবির পুঁথির চেয়েও মানুষের জীবন বাঁচানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিলে, গন্ধকালী নিজের উদ্যোগে এগুলোকে সরানোর ব্যবস্থা নেন। তাঁর সঙ্গী হিসাবে যোগ দেন তিব্বতের রাজকুমার খুণ্ডস্তোন। এঁরা দু’জন আরও কিছু মানুষের সহযোগিতা নিয়ে আশ্রমের ভিতরে থাকা গোপন গুহা দিয়ে বাইরে নিয়ে যান সমস্ত পুঁথি। বিপদসংকুল এক পথ পাড়ি দিয়ে সব পুঁথিগুলোকে তারা নিয়ে যান তিব্বতে। ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায় বাংলার সঞ্চিত সব জ্ঞান-বিজ্ঞান, কিন্তু হারিয়ে ফেলে নিজস্ব মাটির গন্ধ।

বর্তমান ধারাটির কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছেন আরেক বিদুষী নারী। তিনি হচ্ছেন যোজনগন্ধা, ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন মানুষ। যোজনগন্ধা পুরাতত্ত¡ বিশেষজ্ঞ, চর্যাপদের ভাষায় সিদ্ধ হস্ত। তাঁর বাবাও পুরাতত্তে¡র পণ্ডিত ও আবিষ্কারক। পুরাতাত্তি¡ক আবিষ্কারের নেশাতেই একসময় তাঁর প্রাণ যায় চৌথুপীতে। ঘটনাচক্রে সেই চৌথুপীতেই হাজির হয় যোজনগন্ধা। চৌথুপীতে একটা মূর্তি উদ্ধার হয়েছে এবং সেখানে এক ব্যক্তি খুন হয়েছে, খবরের কাগজে এই রকম এক সংবাদ দেখে নিজের শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে চৌথুপীতে চলে আসেন যোজনগন্ধা। হাতে আসে গন্ধকালীর লেখা একটা পুঁথি। পুঁথির পাঠের আগেই এক ব্লাকমেলারের হাতে বন্দি হন তিনি। গন্ধকালীর পুঁথিতে লেখা ভেষজ জ্ঞান উদ্ধারের জন্য চাপ দেয় সে। এই তথ্য সে বিক্রি করবে লোভী বিদেশিদের কাছে। গন্ধকালীর লেখা পুঁথির রহস্য এমনিতেই আগ্রহ নিয়ে পড়তো যোজনগন্ধা। কিন্তু, এখন ভিন্ন এক সংকট এসে পড়ে তাঁর সামনে। দেশের সম্পদ তিনি কীভাবে বিদেশিদের কাছে বিক্রি করবেন? তারপরেও গভীর মনোযোগে পাঠে নিবিষ্ট হন তিনি। গন্ধকালী এক রহস্যময় ভাষায় লিখে রেখে গিয়েছেন তাঁর জীবনী। সেখানে আক্ষরিক অনুবাদের বাইরেও রয়েছে ভিন্ন অর্থ। এই ভাষাকে বলে সান্ধ্য-ভাষা। আলো-আধারির এক ভাষা। শুরুতে এর অর্থ যা দাঁড়ায়, গভীরভাবে ভাবলে ভিন্ন এক অর্থ এসে ধরা দেয়। যোজনগন্ধার সাথে এই পাঠে যোগ দেয় তিব্বতের এক লামাও। যোজনগন্ধ্যার মতোই চর্যাপদের সান্ধ্য-ভাষার পণ্ডিত তিনি। দু’জনে মিলে উদ্ধার করতে থাকেন আটশো বছর আগে লেখা গন্ধকালীর পুঁথির রহস্যভাণ্ডার। এই পুঁথিতেই লুকোনো আছে তিব্বতে নিয়ে যাওয়া বাংলার সমস্ত পুঁথির হদিস। যোজনগন্ধা আর তিব্বতি লামা কি পারবেন বাংলার সেই সোনালি অতীতের গোপন সম্পদের সন্ধান পেতে?

প্রীতম বসু যে সময়টাকে পটভ‚মিকা বানিয়ে ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’ লিখেছেন, একই সময়কালকে পটভ‚মিকায় এনে শওকত আলীও তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন লিখেছিলেন। যাঁর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ পড়া আছে, ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’ পড়তে গেলে তাঁর এটার কথা মনে আসবেই। এই দুই উপন্যাসেই তুর্কি আক্রমণের সময়কার বাংলা উঠে এসেছে জীবন্তভাবে। তবে, পার্থক্যের একটা জায়গা আছে।

প্রীতম বসু যবন আক্রমণকে দেখেছেন এককেন্দ্রিক চোখে। এরা বাংলাতে এসেছে ভয়ংকর দস্যু বেশে, ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলার সমস্ত ঐশ্বর্য। নির্বিকারে মানুষ হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, ধরে নিয়ে গিয়ে দাস হিসাবে বিক্রি করেছে। আর যেটা করেছে সেটা হচ্ছে ধর্মান্তরকরণ। অস্ত্রের মুখে সবাইকে মুসলমান হতে বাধ্য করেছে তারা। শুধু ধর্মান্তর করেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্মান্তরিত মানুষগুলো ইসলাম ধর্ম পালন করেছে কিনা সেটা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে তারা। কেউ ভুলক্রমে পিতৃপ্রদত্ত ধর্মের কোনো অনুশাসন পালন করলে তার উপরে নেমে এসেছে অকথ্য নির্যাতন। এভাবেই বাংলায় ইসলাম এসেছে, স্রেফ তলোয়ারের জোরে। যে সমস্ত সুফি দরবেশরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ধর্ম প্রচার করেছেন, তারাও মূলত পরোক্ষভাবে এটাই বুঝিয়েছেন যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেই কেবল তারা তুর্কি সেনাদের হাত থেকে তাদের বাঁচাবেন।

অন্যদিকে যবনদের ক্ষেত্রে দু’টো দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন শওকত আলী তাঁর উপন্যাসে। আমাদের পূর্ব বাংলা মুসলমান প্রধান। এর পিছনের কারণের বিষয়ে ইতিহাসবিদরা দ্বিধাবিভক্ত। একদল মনে করেন, তুর্কী মুসলমানরা বাংলা অধিকার করে তলোয়ারের জোরে এখানে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছে। আরেকদলের ধারণা, তরবারি দিয়ে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তলোয়ার দিয়ে ধ্বংস করা যতোটা সহজ, স্বধর্মের ধর্মান্তরিত করাটা ততো সহজ নয়। শওকত আলী এখানে দু’টো অংশই দেখিয়েছেন। একদিকে যবন যোদ্ধারা যেমন ক্রুর, তেমনি যবনদের আরেকটা অংশ কোমল। অস্ত্রধারী একটা অংশ যাকে সামনে পেয়েছে তারই শিরোচ্ছেদ করেছে প্রবল নিষ্ঠুরতায়। নিরস্ত্র অন্য অংশ আবার নির্যাতিত, অবহেলিত মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে পরম মমতায়। এই কোমল অংশের সংস্পর্শে এসে বাংলার নিচু বর্ণের হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়েছে।

এটা একটা থ্রিলার-ধর্মী বই। কিন্তু, শুধু থ্রিলার বললে, বইটাকে অপমানই করা হবে। এটা মূলত আমাদের অতীত গৌরবের ইতিহাস। থ্রিলারের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ঢঙ্গে লেখক আমাদের দূর অতীতের ইতিহাস শুনিয়েছেন, দেখিয়েছেন ইতিহাসে বাঁক-বদলকে। সেই ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের গৌরবগাঁথা লেখক যেমন বর্ণনা করেছেন, একইভাবে তিনি তুলে এনেছেন আমাদের পরাজয় এবং ধ্বংসের বেদনাদায়ক কাহিনিও।

বাংলার অতীত ইতিহাস নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের কাছে এই বই সুস্বাদু এক উপাদেয় হবে, এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।