সোনা কান্তি বড়ুয়া : মানুষ নিজের ভুবনে নিজেই সম্রাট এবং বিশ্বমানবতায় মনুষ্য হল সমস্ত ধর্মের চেয়ে লক্ষগুণ বড়। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে বিশ্বমৈত্রীর মনুষ্যত্ব বিকাশে উদ্ভাসিত সকল ধর্ম! আজ ২৮ অক্টোবর, ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দ বৌদ্ধদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং প্রকৃষ্টরূপে বরণ, বারণে আত্মশুদ্ধির প্রবারণা!

কানাডা এবং আমেরিকা দেশের প্রায় আড়াই হাজার বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বৌদ্ধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমরা সবাই হলাম মনুষ্য সন্তান। শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে মহামানব পূজনীয় বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করছি! মনস্তত্বের দৃশ্যকাব্যের মতো মানব সভ্যতা বা মানব জাতির জীবন নদী স্থির নয়, সদা অনিত্য পরিবেশে চল ও চলমান। বিশ্বপ্রবাহের নির্মমতা আজ প্রাচীন হিন্দুরাজনীতির বৈদিক সভ্যতার মানবাধিকারহীন জাতিভেদ প্রথাকে কাঁধে চাপড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর মহাকালের মোহনায় দাঁড় করায়! বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে ত্রিশরনসহ পঞ্চশীল প্রার্থনা, নিমন্ত্রিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে সঙ্ঘ দান, পিন্ডপাত প্রদান, নিমন্ত্রিত উপাসক উপাসিকাগণকে আহার প্রদান এবং পুণ্যানুমোদনের পুণ্য অনুষ্ঠানসমূহ সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়। জগজ্জ্যোতি বুদ্ধের বিশ্বমৈত্রীতে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ সর্ব ধর্মের মানুষ একত্রে মানুষের ভাই বোন আত্মীয় স্বজন। কোন মানুষ অন্য মানুষের শত্রæ নয়। মানব মনে উদীয়মান সকল ধর্ম সর্বশক্তিমান এবং “যেথায় আছি যে যেখানে / বাঁধন আছে প্রানে প্রাণে। মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে- যখন সম্রাট অশোক আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভাষায় :
“নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।”

ধর্ম কি? একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে! মষনুব সভ্যতার ইতিহাসে বৌদ্ধ প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি বিজ্ঞানের অভ্যুত্থানে ঈশ্বরের সৃষ্টিকর্তা মানুষ! এবং হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতি হল মানুষের মস্তিস্ক হতেই উৎপন্ন হওয়া বিষয়। লোভ দ্বেষ মোহ সহ ষড়রিপুকে জয় করার নাম বৌদ্ধ‘ধর্ম! পরবর্তীকালে দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, ক্ষান্তি, প্রজ্ঞা, বীর্য্য, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী ও উপেক্ষা এই দশ পারমীর ঋদ্ধতা সাধন করে একদা ভবদুঃখের অন্তঃসাধন করবে। ধর্মান্ধ ধর্মের বিরুদ্ধেপূজনীয় গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমানবতা ও বৌদ্ধ প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি বিজ্ঞানের অভ্যুত্থানে সত্যের আনন্দ নেওয়ার জন্য আপনাকে ধার্মিক হতে হয় না, বরং মানুষ হওয়াই বেশী প্রয়োজন। কিন্তু ঈশ্বর, আল্লাহ, গডের আশীর্বাদ বা আনন্দ নিতে গেলে আপনাকে অবশ্যই হিন্দু, খৃষ্টান ও মুসলিম ইত্যাদি হতেই হবে। হিন্দু ধর্মের ঈশ্বর কেবল হিন্দুদের আনন্দ দিয়ে থাকে, খৃষ্টান ধর্মের গড তাদেরকেই কেবল স্বর্গরাজ্য দিয়ে থাকে এবং অনুরূপভাবে ইসলাম ধর্মের আল্লাহও কেবল মুসলিমদের উপরই শান্তি বর্ষণ করে থাকে।

বিজ্ঞানের অভ্যুত্থানে ধার্মিক হতে হয়না, বরং মানুষ হওয়াই বেশি প্রয়োজন। যেমন- ইলেক্ট্রিক বাল্ব প্রত্যেকের ঘরে আলো দেয় এবং ইলেক্ট্রিক পাখা সকলকে বাতাস দেয়। বুদ্ধের শিক্ষায় আত্মদীপ ভব। অর্থাৎ, মহানুভব গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমানবতায় প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি বিজ্ঞানের অভ্যুত্থানে নিজেকে প্রজ্জ্বলিত করো। অপ্রমত্ত হও, নিজেই নিজের আলোকবর্তিকা হও, এবং নিজের মুক্তির জন্য কুশলকর্ম সম্পাদন করো, কেননা তোমার কুশলকর্ম ও প্রজ্ঞাদৃষ্টিই একমাত্র তোমাকে মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যকে নয়।

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বৌদ্ধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমরা সবাই হলাম মনুষ্য সন্তান। শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদনের নৈবেদ্য সাঁজিয়ে মহামানব পূজনীয় বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করছি আমার লেখা কবিতা:
হে মোর চিত্ত অর্ঘ্যে সারনাথের মৃগদাবে (ভারত) বুদ্ধ তীর্থে জাগোরে ধীরে-
: আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বুদ্ধের প্রথম ধর্মপ্রচার স্মৃতির সাগরে তীরে।
হেথায় দাঁড়িয়ে দু’বাহু বাড়ায়ে নমি :বুদ্ধের ধর্ম গৃহত্যাগ জয়ন্তি
: বুদ্ধের প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন পরমানন্দে নীতি বিশ্বশান্তি।
বুদ্ধের প্রথম ধর্মদেশনা ছিল পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের ধর্মচক্র তলে-
তথাগত বুদ্ধ ৪৫ বৎসর বছর ধর্মপ্রচার করেছিলেন ধরনীতলে!

বিজ্ঞান বলছে, মানুষ ইচ্ছা পোষণ ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। জীব বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের মস্তিষ্ক একটা স্বাধীন ও পরিপূর্ণ চৈতন্যের আধার। পরিপার্শ্ব থেকে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে আলাদা কোনো আধিদৈবিক স্পিরিটের (GOD) ভ‚মিকা নাই। জনতার প্রশ্ন এবং কথা হল – এখানেই এই যে ধর্ম নিয়ে হানাহানি এই যে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ এই যুদ্ধের মাঝে ইহুদিদের ধর্মীয় স্থান, হিন্দুদের ধর্মীয় স্থান, মুসলিমদের ধর্মীয় স্থান ধ্বংস হয়ে যায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ,আমরা তো এত আমাদের ধর্ম নিয়ে বড়াই করি তাহলে যুদ্ধের সময় মন্দির, বা মসজিদ ধ্বংস হয় কেন? তখন আমাদের আল্লাহ বলুন গড বলুন ভগবান বলুন তাহারা বাঁচাতে পারেন না কেন? জনতার বক্তব্য হলো পৃথিবীতে দুটো জাতি তৈরি হোক তা হল পুরুষ জাতি, আর একটা হল নারী জাতি এই দুইটি জাতি নিয়ে আমাদের সারা পৃথিবী গঠিত হোক। বাংলাদেশী পাহাড়ী মেয়েদেরকে ধর্ষণ ইসলাম ধর্ম নয়। বৌদ্ধ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ কেন? কানাডায় মুসলমান ধর্ম বিশ্বাসের কারনে একটি মুসলিম পরিবারের চার জনকে ট্রাক-চাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ২০ বছর বয়সের এক খ্রিস্টষন শেতাঙ্গ যুবক নাথালিয়ান ভেল্টম্যান, টরন্টোর নিকটবর্তী শহর লন্ডনে (6 June 2021)! সকল ধর্মের বিশ্বমৈত্রীতে বিদ্বেষটাই ধর্মান্ধদের অধর্ম! আরও জানতে পড়ুন বিস্তারিত!

মহানুভব বুদ্ধের শিক্ষা, নিজেকে নিজের রক্ষাকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করে, আত্মদীপ প্রজ্জ্বলন পূর্বক জীবন গঠন বুদ্ধের শিক্ষা। “অত্তাহি অত্তনো নাথো কোহি নাথো পরো সিয়া – তুমি তোমার ত্রাণকর্তা, অন্যকেউ নয়’। হিন্দু ধর্মের ঈশ্বর কেবল হিন্দুদের আনন্দ দিয়ে থাকে, খৃষ্টান ধর্মের গড তাদেরকেই কেবল স্বর্গরাজ্য দিয়ে থাকে এবং অনুরূপভাবে ইসলাম ধর্মের আল্লাহও কেবল মুসলিমদের উপরই শান্তি বর্ষণ করে থাকে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমরা সবাই হলাম মনুষ্য সন্তান। হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ নয়। এডিসন বাল্ব বানিয়েছেন তা পৃথিবীর সকলেই জানে। কিন্তু ব্রহ্মা যে দুনিয়া বানিয়েছেন তা কেবল ভারতই জানে। ধর্মান্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমানবতা ও বৌদ্ধ বিজ্ঞানের অভ্যুত্থানে প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতির সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনাঃ

১। অবিজ্জা অর্থাৎ চতুরার্য সত্য চার প্রকার। যথা- দুঃখসত্য সমুদয় সত্য, নিরোধ সত্য, মার্গসত্য। গৌতমবুদ্ধের দর্শনে প্রতীত্যসমুৎপাদ (বা কার্য কারন (প্রবাহে মহাপ্রজ্ঞা পারমিতা সূত্র)সহ মানব চরিত্রের স্বরূপ বা পুদগল প্রজ্ঞপ্তি (ইনডিটারমিনেট সেলফ) সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা নিয়ে –পুব্বন্ত অর্থাৎ অতীতের জন্ম-জন্মান্তরের পঞ্চস্কন্ধ,আয়তন,ধাতু সম্বন্ধে না জানা। –অপরন্ত অর্থাৎ অনাগতে পঞ্চস্কন্ধ, আয়তন, ধাতু সম্বন্ধে না জানা। —পুব্বন্তাপরন্ত অর্থাৎ অতীত ও অনাগতে পঞ্চস্কন্ধ, আয়তন, ধাতু সম্বন্ধে না জানা। প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি অর্থাৎ প্রতীত্য সমুৎপাদের কারণ এবং ফলকে না জানা। এই আট প্রকারকে না জানাই অবিদ্যা। এই আট প্রকার ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গুলোকে না জানলে তা অবিদ্যার অন্তর্গত নয়।

২। সঙ্খারা অর্থাৎ পুঞ্ঞাভি সঙ্খার, অপুঞ্ঞাভি সঙ্খার ও আনেঞ্জাভি সঙ্খার। পুঞ্ঞাভি সঙ্খার মানে দান, শীল, রূপবচর কুশল ভাবনা প্রভৃতি পুণ্য কর্ম হচ্ছে কুশল সংস্কার। অপুঞ্ঞাভি সঙ্খার মানে লোভ, দ্বেষ, মোহ প্রভৃতি দশ প্রকার ক্লেশধর্ম হচ্ছে অকুশল সংস্কার। আনেঞ্জাভি সঙ্খার মানে অরূপবচর ধ্যানলাভী অরূপ কুশল সংস্কার চেতনাকে বুঝায়।

৩। বিঞ্ঞাণং অর্থাৎ বিজ্ঞান বা মন বা চিত্তকে বুঝায় (CONSCIOUSNESS) ।
৪। নামরূপং অর্থাৎ রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান। রূপ হচেছ আটাশ প্রকার। সংক্ষিপ্তাকারে আটাশ প্রকার রূপের মধ্যে চারটি মহাভৌতিক ধাতু সংমিশ্রিত। বেদনা, সংজ্ঞা ও সংস্কার হচ্ছে তিনপ্রকার চৈতসিক। বিজ্ঞান হচ্ছে চিত্ত বা মন। তাই এই চার প্রকার চিত্ত চৈতসিককে একত্রে নাম বলা হয়।
৫। সলায়তন অর্থাৎ ষড়ায়তন বা ছয় প্রকার আয়তন। যথা-চক্ষু আয়তন, শ্রোত আয়তন, ঘ্রাণ আয়তন, জিহ্বা আয়তন, কায় আয়তন ও মন আয়তন।
৬। ফস্সো অর্থাৎ স্পর্শ বা ছয় প্রকার স্পর্শ । যথা-চক্ষু সংস্পর্শ, শ্রোত সংস্পর্শ, ঘ্রাণ সংস্পর্শ, জিহ্বা সংস্পর্শ, কায় সংস্পর্শ ও মন সংস্পর্শ ।
৭। বেদনা অর্থাৎ অনুভ‚তি বা ছয় প্রকার বেদনা। চক্ষু সংস্পর্শজ বেদনা, শ্রোত সংস্পর্শজ বেদনা, ঘ্রাণ সংস্পর্শজ বেদনা, জিহ্বা সংস্পর্শজ বেদনা, কায় সংস্পর্শজ বেদনা, মন সংস্পর্শজ বেদনা।

৮। তণ্হা অর্থাৎ তৃষ্ণা তিন প্রকার। কাম তণ্হা-কাম তৃষ্ণা, ভব তণ্হা- ভব তৃষ্ণা, বিভব তণ্হা-বিভব তৃষ্ণা। অর্থাৎ রুপের প্রতি তৃষ্ণা, শব্দের প্রতি তৃষ্ণা, গন্ধের প্রতি তৃষ্ণা, রসের প্রতি তৃষ্ণা, স্পর্শের প্রতি তৃষ্ণা, ধর্মের প্রতি তৃষ্ণা।
৯। উপাদান অর্থাৎ কামুপাদান- কামের প্রতি তীব্র আসক্তি, লোভ বা তৃষ্ণা। দিট্ঠুপাদান- যা সঠিক দৃষ্টি নয় এমন মিথ্যাদৃষ্টির প্রতি তীব্রআসক্তি। সীলব্বতুপাদান- শীলব্রত পালনে বা আচরণের প্রতি তীব্র দৃষ্টি আসক্তি। অত্তবাদুপাদান- আত্মবাদ বা সৎকায়দৃষ্টির প্রতি তীব্র দৃষ্টি আসক্তি।

১০। ভব অর্থাৎ –কম্মভব- বিজ্ঞান, নামরূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা, তৃষ্ণা, উপাদান ও ভব অনাগত জন্মের প্রতিসন্ধির কারণ এবং বর্তমান জন্মের চেতনাকে কর্ম ভব বলে। –উপপত্তিভব- বর্তমান জন্মের কুশল অকুশল কর্মের কারণে অনাগত জন্মের প্রাপ্ত হওয়া বিপাক চিত্ত চৈতসিক রূপ বা পঞ্চস্কন্ধ উপপত্তি ভব।
১১। জাতি অর্থাৎ জন্ম বা প্রতিসন্ধি বা পঞ্চস্কন্ধ লাভ। যেমন- মানুষ পঞ্চস্কন্ধ, দেবতা পঞ্চস্কন্ধ, ব্রহ্মা পঞ্চস্কন্ধ, তির্যক পঞ্চস্কন্ধ, প্রেত পঞ্চস্কন্ধ, নরক পঞ্চস্কন্ধ প্রভৃতি ।

১২। জরা-মরণ অর্থাৎ জরা বলতে রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া। মরণ বলতে চ্যুত হওয়া বা মৃত্যুকে বুঝায়। মৃত্যু হলে শোকে কান্নায় আত্মহারা হয়ে দুঃখ র্দৌমনস্য হাহাকার উপায়াস উৎপন্ন হয়। কিসের কারণে? জাতি বা প্রতিসন্ধি গ্রহণ করার কারণে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দুঃখ পেতে হয়। প্রত্যেক সত্ত¡গণের জীবনধারায় জন্ম – জন্মান্তর এই প্রতীত্য সমুৎপাদের নীতিই সন্নিবেশিত। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক!

প্রত্যেক সত্ত¡গণের জীবনধারায় ক্লেশধর্ম হচ্ছে সৎকায়দৃষ্টির প্রতি তীব্র দৃষ্টি আসক্তিতে সনদ বড়ুয়ার প্রবঞ্চনা প্রসঙ্গ! সোনা কান্তি বড়ুয়ার সহধর্মিণী যুথিকা বড়ুয়ার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে (ফটিকছড়ি) -নানুপুর গ্রামের সনদ বড়ুয়া টরন্টো তে সোনা কান্তি বড়ুয়ার ফেক আইডি বানিয়ে কানাডাতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে চাঁদা তোলছে (25 APRIL 2023)! আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে। ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ ভ‚মিকায় সনদ বড়ুয়ার COMMUNITY মন্দির মানে আজীবন চাঁদাবাজির নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান! সোনা কান্তি বড়ুয়াকে নিচে ফেলার ষড়যন্ত্রের পর্দা এখন ফাঁস হয়েছে। আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন, ট্রাজেডি! কানাডায় বড়ুয়া ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ! সনদ বড়ুয়া/ সোনা কান্তি বড়ুয়ার ফেক আইডি বানিয়ে চাঁদা তোলে কেন? প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ববিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মিসেস যুথিকা বড়ুয়ার মৃত্যুতে সোনা কান্তি বড়ুয়ার কত শোকদহন! বাংলাদেশী বড়ুয়া বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে সনদ বড়ুয়ার প্রবঞ্চনা প্রসঙ্গ!

গৌতমবুদ্ধের বিশ্বমানবতায় ধর্মান্ধ ধর্ম ও ATOMIC BOMB (মানুষের মস্তিস্ক হতেই উৎপন্ন হওয়া বিষয়) অভিশাপ, ইলেক্ট্রিক বাল্ব ও বিজ্ঞান (মানুষের মস্তিস্ক হতেই উৎপন্ন হওয়া বিষয়) আশীর্বাদ! বিজ্ঞান বলছে মানুষ ইচ্ছা পোষণ ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। জীব বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের মস্তিষ্ক একটা স্বাধীন ও পরিপূর্ণ চৈতন্যের আধার। পরিপার্শ্ব থেকে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে আলাদা কোনো আধিদৈবিক স্পিরিটের ভ‚মিকা নাই। শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ শুনে অনেকে বলেন, গানের শেষে উনি কেন লিখলেন না, ‘যদি মানুষ কখনও বা হয় দানব’? সুবিধে হত তবে। রিকশায় বসে সে দিনের সওয়ারির কিন্তু মনে হল, একতরফা বিচারের পরিসর নেই আর পৃথিবীতে! কে জানে, ইচ্ছে করেই হয়তো শেষ লাইনটা ওপেন-এন্ডেড রেখেছিলেন শিবদাসবাবু। মানুষ দানব হয়ে যাবে এটাই তো সমস্যা নয় কেবল, “যদি দানব কখনও বা হয় মানুষ,/ লজ্জা কি তুমি পাবে না/ ও বন্ধু?”

“অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে
কই তাহার মতো
তুমি আমার কথা শুনে, হাসনাতো
ধরার ধূলিতে যে ফাগুন আসে
কই তাহার মতো
তুমি আমার কাছে কভু,আসনাতো!

১৮৭৯ সালে লন্ডন টাইম পত্রিকার সম্পাদক বিখ্যাত ’লাইট অব এশিয়া’ শীর্ষক গৌতমবুদ্ধের জীবনী ইংরেজি ভাষায় কবিতা রচনা করে জগৎ জুড়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে বৌদ্ধ পন্ডিত হেনরি ওয়ারেন ক্লার্ক ”বুড্ডিজম ইন ট্রানশ্লেশন” শীর্ষক মূল্যবান গ্রন্থ লেখা এবং হার্ভাট অরিয়েন্টাল সিরিস সম্পাদনা করে অমর হয়েছেন। আমেরিকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্যে ১৮৯৭ সালে লেখক পল সারাস জাপানী জেন (ধ্যান) বৌদ্ধধর্মের মহাপন্ডিত মহামহোপাধ্যায় ডি টি সুজুকিকে আমেরিকায় আসার নিমন্ত্রন করলেন। ডি টি সুজুকির বৌদ্ধ ধ্যানের বক্তৃতামালা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ এবং বুদ্ধিজীবি জগতে গভীর আলোড়ন সৃষ্ঠি করেছিলেন।

মহানুভব গৌতমবুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে মহাত্মা লালন ফকির, বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুলের মত বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবিসহ অসংখ্য মানুষকে। মহাত্মা লালন ফকির ছিলেন একজন মানবতাবাদী দার্শনিক, যিনি ধর্ম, বর্ন, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। লালন (জন্ম ১৭৭৪- মৃত্যু অক্টোবর ১৭, ১৮৯০) বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালী যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক, অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গানের মাধ্যমেই ঊনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

অসা¤প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গানসমূহ রচনা করেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুলের মত বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবিসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও বাউল স¤প্রদায় ছাড়াও যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কন্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। “লালন ফকিরের গান”। মোট ২১৮ টি গান নিয়ে এটি শুধু মাত্র লালনের গানের সংকলন নয় হয়ে উঠেছে এক অসামান্য দলিল। এই গ্রন্থে শুধু লালনের গানই নয় সঙ্গে শব্দার্থ এবং ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থে লালনের গানের যে কথান্তর আছে তাও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইসরায়েলে-হামাসের এই যে ধর্ম নিয়ে হানাহানিতে বেসামরিক জনগণের জীবনকে তোয়াক্কা না করে চলা ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক অভিযান উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে।’ রয়টার্স! ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিরপরাধ নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর ১৭ দিন পেরিয়ে গেছে। এই অবর্ণনীয় বর্বরতার পর মার্কিন সরকারের মতো দেশের নাগরিকেরাও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শোকে একাত্ম হয়েছেন, স্বজনদের ফিরে আসার প্রত্যাশায় প্রার্থনা করেছেন এবং ইসরায়েলি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এমন বেপরোয়া সহিংসতা থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানে সমর্থন দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে আহŸান, জনতা তার সঙ্গে একমত। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন মিত্র ইসরায়েল হামাসের সামরিক সক্ষমতাকে গুঁড়িয়ে দিতে এবং শত শত জিম্মিকে উদ্ধার করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে চায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন যে, ইসরাইল পাগল হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যার এই উন্মাদনা থেকে তিনি দ্রæত বেরিয়ে আসতে তেলআবিবের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। “পাকিস্তান ও সাতচল্লিশের ধর্মান্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে স্বাধীনতার অভ্যুত্থান এবং আইনের শাসনে বাংলাদেশে ধর্মান্ধরা কোরাণে পদচিহ্ন দিয়ে বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞ Kil PSYCHOLOGICALLY মনুষ্যত্ব বিকাশে মুসলমান ধর্ম নয়! মষনুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই ধর্মান্ধদের হিংস্র ধর্ম! হিন্দু,মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি প্রত্যেকেরই ঈশ্বর বলুন, গড বলুন এবং আল্লাহ বলুন কাউকে না কাউকে ধর্ম অনুযায়ী ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে!

কানাডায় মুসলমান ধর্ম বিশ্বাসের কারনে একটি মুসলিম পরিবারের চার জনকে ট্রাক-চাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ২০ বছর বয়সের এক খ্রিস্টষন শেতাঙ্গ যুবক নাথালিয়ান ভেল্টম্যান, টরন্টোর নিকটবর্তী শহর লন্ডনে (6 June 2021)! সকল ধর্মের বিশ্বমৈত্রীতে বিদ্বেষটাই ধর্মান্ধদের অধর্ম! পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসের কারনে বর্তমান সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাসের কারনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ও বিস্ফোরন্মুখ। বলতে গেলে, চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ের মতই বর্তমানেও জুম্মদের উপর একপ্রকার অবাধে চলছে আগ্রাসন, ভ‚মি বেদখল, স্বভ‚মি থেকে উচ্ছেদ, সামরিক দমন-পীড়ন-অভিযান, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা ও জেল-জুলুম, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম স¤প্রসারণ, অনুপ্রবেশ, জুম্মদের সংখ্যালঘুকরণ, সা¤প্রদায়িক হামলা, নারীর উপর সহিংসতা ইত্যাদি মানবতাবিরোধী ও জুম্মদের জাতিগতভাবে বিলুপ্তকরণের প্রক্রিয়া।

আমাদের প্রার্থনা-প্রচেষ্টা থাকুক নিজের অন্তর জগত উদ্ভাসিত করা, কলুষতা পরিহার করা। নিজেই নিজের প্রদীপ হয়ে প্রজ্জ্বলিত হওয়া, মোহ-তৃষ্ণা-অজ্ঞানতা দূর করা। আপন আলোয় নিজেকে, আপন আলোয় বিশ্বকে আলোকিত করা। প্রজ্ঞালোক ও মৈত্রী-প্রেমে নিজেকে গড়া এবং প্রবারণার মর্মার্থ অনুধাবন পূর্বক সত্য-সুন্দর ও কুশলকে প্রকৃষ্টরূপে বরণ সেসাথে অসত্য-অসুন্দর ও অকুশলকে বারণ বা বর্জন করা। সত্যকে প্রকৃষ্টরূপে বরণ এবং অসত্যকে বারণ (বর্জন) পূর্বক আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের পুণ্যস্নাত শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা সকলকে। বুদ্ধ জ্ঞানে অন্তর হোক আলোকিত-বিকশিত।গিয়ে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদন করলেন এবং একান্তে উপবেশন করে নিজের পরিচয় দান করলেন। শাস্তার কাছ হতে ধম্ম শ্রবণ করে রাজার অন্তর্দৃষ্টি খুলে গেল। তাঁর সমস্ত দ্বিধা-জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক, শত্রæ মিত্র সকলের শুভ বুদ্ধি উদয় হোক!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!