অনলাইন ডেস্ক : বগুড়ার কাহালু উপজেলার প্রত্যন্ত ডোমন গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আব্দুল কাদের। গাছের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ১৯৬৬ সাল থেকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ছুটে চলেছেন পথে-প্রান্তরে, লাগাচ্ছেন নানা ধরনের ওষধি গাছ। কাহালু বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে যত গাছ দেখা যায় তার বেশির ভাগই লাগিয়েছেন কাদের। এই কারণে আশপাশে কয়েকটি গ্রামের অনেকেই তাঁকে গাছপাগল ডাক্তার বলে চিনেন। অনেক বিলুপ্তপ্রায় গাছ রয়েছে কাদেরের সংগ্রহে। শুধু গাছ লাগিয়েই থেমে থাকেননি তিনি, এসব গাছের লতাপাতা থেকে তৈরি ওষুধ ও গুণাগুণ মানুষের মাঝে বিনা মূল্যে বিলিয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন সমানে। ৭৩ বছর বয়সের এই মানুষটি বগুড়া শুভসংঘের সঙ্গে কাজ করছেন ১০ বছর ধরে। তিনি জেলার ১ নং সদস্য। তাঁর হাত ধরেই বগুড়া শুভসংঘের ওষধি গাছের গুণাগুণ প্রচারণা শুরু করা হয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত আছে। সম্প্রতি ইউনানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসার ওপর একটি শর্ট কোর্সও করেছেন।

নিজের এক টুকরা জমি ছাড়াও অন্যের জমিতে, জমির পতিত আইলে লাগিয়েছেন নানা ধরনের ওষধি গাছ। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গাছের বাগান করেছেন। কাহালু হাসপাতাল, মালঞ্চা আযিযুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ, কাহালু ডিগ্রি কলেজ, ডোমন গ্রাম প্রাইমারি স্কুল, বনানী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস, পুলিশ লাইন, ফকির উদ্দিন স্কুল, ওয়াইএমসিএ ও হামদর্দ কলেজে আছে তাঁর লাগানো ওষধি গাছের বাগান। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে বিনা পয়সায় ওষধি গাছগাছড়ার উপকারী বার্তা তিনি পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের ঘরে ঘরে। গাছ থেকে তৈরি করা ওষুধ বিনা পয়সায় মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ গাছ নয়, শুধু ওষধি গাছের পাগল তিনি। ৭৩ বছর বয়সেও তিনি ছুটে বেড়ান জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। এ পর্যন্ত তিনি দুই লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছেন, যেগুলোর সবই ওষধি। তাঁর লাগানো গাছের মধ্যে রয়েছে হরিফল, থানকুনি, দেশি আকর কলা, যষ্টিমধু, ছয় প্রকারের তুলসীগাছ, ওলটকম্বল, কুলাকাটা, পিপুলদার, কারিপাতা, বাসক, নিম, নিশিন্দা, অশ্বগন্ধা, কালি জাফরানসহ প্রায় দেড় শ প্রজাতির ওষধি গাছ। এ ছাড়া বিলুপ্তপ্রায় পাশসিজা, পাথরকুচি, রাম তুলসী, রাখালখোসা, কেওড়া, সাদা ও কালো কুঁচ, সাদা কেনরী, ভূটি টেবরি, বেড়েলা, ত্রিসুল, পুনর্নবা, ক্ষেতপাপড়া, পিপুল পাতা, গক্ষুর কাটা রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।

আব্দুল কাদের বলেন, ‘কাহালু ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের পাশে অনেক গাছ লাগিয়েছি। কিন্তু আগাছা ভেবে মানুষ তা নষ্ট করে ফেলে। কয়েক বছর আগে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে ওষধি গাছের বাগান করেছিলাম। এক রাতে কে বা কারা আমার বাগানের সব গাছ নষ্ট করে ফেলেছে। আমি চাই মানুষ এসব ওষধি গাছের গুণাগুণ জানুক। কোনো অর্থবিত্ত বা সন্মান চাই না। চাই সবার সহযোগিতা। এলাকার অব্যবহৃত জমিতে ভেজষ উদ্ভিদ চাষ হবে—এটাই আমার প্রত্যাশা।’

ডোমন গ্রামের আতাহার আলী ও স্থানীয় সাংবাদিক তানসেন জানান, ওষধি গাছ লাগানো এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকেন কাদের। সংসার ও পরিবার-পরিজনের প্রতি খেয়াল নেই তাঁর। নিজের খেয়ে-পরে ওষধি গাছগাছড়া দিয়ে পয়সা ছাড়াই মানুষের উপকার করেন। এলাকাবাসী তাঁকে গাছপাগল কাদের বলে ডাকে। বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সর্দি, কাশি, আমাশয় বিভিন্ন রোগ তাঁর ওষুধেই ভালো হচ্ছে। কাহালু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আখেরুর রহমান বলেন, ‘ওষধি গাছ নিয়ে আব্দুল কাদেরের চিন্তাভাবনা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারিভাবে এই মানুষটিকে সহযোগিতা করার কথা ভাবছি আমরা।’